somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বাসর বিভ্রাট

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ আমাদের বাসর রাত।
পুরো ঘরটা গাঁদা ফুল আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। হিয়ার আবার বেলি ফুল খুব পছন্দ, ওর ভালোলাগার কথা মাথায় রেখে বেলিফুলও রাখা হয়েছে। সারাদিনে এত ধকল গেছে যে বাসর ঘর তো দূরের কথা, বউয়ের দিকেই তাকানোরই সুযোগ পাইনি। যাইহোক, অবশেষে বন্ধু বান্ধবদের হাসি ঠাট্টা পেছনে ফেলে বাসর ঘরে ঢুকলাম। হিয়া বসে আছে খাটের উপর, টুকটুকে লাল রঙা শাড়ি পরে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতেই বসে আছে। হাসি হাসি মুখ, চোখে এক অন্যরকম আনন্দ! আনন্দ থাকারই কথা, পুরো তিনবছর চুটিয়ে প্রেম করে নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে আজ দুজনের চার হাত এক হলো! আমার তো খুশিতে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু আপাতত সেই ইচ্ছাটাকে দমন করে হিয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু হিয়ার কাছাকাছি গিয়ে যা দেখলাম তা ভুত এফএমের গল্পের থেকেও ভংয়কর! নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছি না! আমার এই অবস্থা দেখে হিয়া তো মহাখুশি, আর আমি হাঁপানি রোগীর মত মুখ হা করে দাঁড়িয়ে আছি!
বাসর রাতে যেখানে বিছানার উপরে ছড়িয়ে থাকবে ফুল সেখানে ছড়িয়ে আছে দুইটা ঝাড়ু, একটা খুনতি আর একটা রুটি বানানোর বেলন! তাও দুইটা ঝাড়ু আবার দুই ধরণের একটা ঘর ঝাড়ু দেয়ার আরেকটা বিছানা ঝাড়ু দেয়ার! এসব সরঞ্জামাদির সাথে বাসর রাতের কি সম্পর্ক সেটা ভেবে যখন হিমসিম খাচ্ছি, তখন হিয়াই আমাকে বুঝিয়ে দিলো ব্যাপারটা।
- "খুব অবাক হচ্ছো তাইনা! ভাবছো বাসর রাতে এসব আবার কি! ঠিক আছে তোমাকে অত কষ্ট করে ভাবতে হবে না, আমিই বলে দিচ্ছি। আমাদের বিয়ের আগে দীর্ঘ ৩ বছর ৪ মাস ১৩ দিন প্রেম ছিলো, এই সুদীর্ঘ সময়ের তোমার সমস্ত আমলনামা এখন আমার হাতে। সেই আমলনামা অনুযায়ী আজ রাতে তোমার বিচার হবে, বুঝেছো জানু? এখন ঝটপট লক্ষী স্বামীর মত আমার সামনে বসে পরো তো দেখি, অনেক হিসাব নিকাশ করতে হবে!"
এই কথা শোনার পর মাথার সব স্ক্রু গেলো কেমন যেন ঝনঝন শব্দ শুরু করে দিলো! কিসের আমলনামা, কিসের বিচার! হিয়া কি আমার সাথে মজা করছে নাকি? করতেও পারে, বাসর রাতে একটু চমকে দেয়ার চেষ্টা হয়ত। আমি মুখে একটু হাসি এনে জিজ্ঞেস করলাম,
-" তুমি নিশ্চয়ই মজা করছো তাই না? দেখো সারাদিনে অনেক ধকল গেছে এখন আর মজা করার দরকার নেই, আমাকে একটু শুতে দাও।"
-"উঁহু, আমি মোটেও মজা করছি না। শোয়ার চিন্তা আপাতত মাথা থেকে বাদ দাও। ঝটপট আমার সামনে বসে পরো, হাতের কাছাকাছি বসবে, যেন আমার কষ্ট করতে না হয়।"
বিস্ময়ে হোক কিংবা নির্বুদ্ধিতায়, আমি ধপাশ করে খাটের উপর বসে পরলাম! আজকের রাতে আমার প্রথম ভুল সিদ্ধান্ত।
-" আচ্ছা, তোমার আমলনামা তোমাকে পরে শোনাচ্ছি, এরপর শাস্তি তুমি নিজে চুজ করে নেবে। ২০১৪ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর, বেলা ৩টা বেজে ১৬ মিনিট। আমাদের বাড়ির পেছনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে, হাতে ছিলো রজনীগন্ধা ফুল। কিন্তু আমি তো রজনীগন্ধা পছন্দ করি না, আমার পছন্দ ছিলো বেলী ফুল, তা জানা সত্ত্বেও তুমি রজনীগন্ধা দিয়ে প্রপোজ করলে কেন? এবার বলো বিছানার ঝাড়ু নাকি খুনতি, কোনটা?"
মানুষ যখন অতিরিক্ত মাত্রায় বিস্মিত হয়, তখন অদ্ভুত আচরণও স্বাভাবিক মনে হয়। আমিও খুব স্বাভাবিকভাবেই বললাম,
-" খুনতিই বেটার, ঝাড়ুর শলা গায়ে বিঁধলে সমস্যা!"
পরের কয়েক মিনিটের কথা জানার দরকার নেই। এরপর হিয়া চলে গেলো আমার আমলনামায়,
-" ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি ঠিক রাত ১২টায় আমাকে হ্যাপি নিউ ইয়ার লিখে শুভেচ্ছা জানানোর কথা ছিলো, কিন্তু তুমি আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছো ১২:০৩ এ, কেন?
-" ওই সময় তো সার্ভার অনেক বিজি থাকে, আমি তো ১১:৫৮ তেই পাঠাইছিলাম, দেরী করে গেলে আমি কি করবো বলো!"
-" আমি তো তোমাকে ১১:৫৮ তে পাঠাইতে বলি নাই! ১১:৫৮ তে তো নিউ ইয়ার হয় না, সেটা তো ওল্ড ইয়ার! তুমি আমাকে মিথ্যে বলছো! মিথ্যে বলা মহাপাপ। এর শাস্তিও হবে মহাশাস্তি।"
এরপর হিয়ার হাতে ঘর ঝাড়ার ঝাড়ু দেখা গিয়েছিলো।
-" আচ্ছা, এবার বলো ২০১৬ সালের ১৯ মে দুপুর বেলায় যখন তোমাকে আমি নিজ হাতের রান্না খাওয়াচ্ছিলাম তখন তুমি হেচকি তুলেছিলো কেন? আমার রান্না কি খুব খারাপ?"
-" নাহ, একটু ঝাল লেগেছিলো তাই হেচকি আসছিলো, এটাও কি আমার দোষ!"
-" কি বললে তুমি, আমি অনেক ঝাল দেই? আমি রান্না করতে পারি না! তিন বছর ধরে তাহলে আমার রান্নার মিথ্যে প্রশংসা করেছো!"
রুটি বেলার বেলনটাই বা বাদ যাবে কেন, আজ রাতে আমিই রুটি হবো!
-" আচ্ছা, এবার বলো ২০১৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর টিএসসিতে বসে একটা মেয়ের সাথে কি এমন পিরিতের আলাপ করছিলে জানু, যে আমার মেসেজের রিপ্লাই দেয়ার সময়ও হয়নি?!"
-" দেখো হিয়া, এতক্ষণ যা বলেছো যা অপবাদ দিয়েছো তাতে কিন্তু কিচ্ছু বলিনি। এবার কিন্তু বেশিই হয়ে যাচ্ছে, তুমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে আমি কখনো চোখ তুলে তাকাইও নি!"
-"আহারে, আমার সাধু জামাই! তা জানু সেদিন তাহলে সেই মেয়ের সাথে তুমি কি করছিলে শুনি?"
-" পরদিন আমার MMP এক্সাম ছিলো, কমপ্লেক্স এনালাইসিস পার্টটা কিছুতেই বুঝছিলাম না তার ওপর আবার বেসেল ফাংশনের জ্বালা! তাই ওর কাছ থেকে একটু বুঝে নিচ্ছিলাম।"
-" কিন্তু এক্সামে তো তুমি ওর থেকে বেশি নাম্বার পেয়েছিলে, এটা কিভাবে সম্ভব বলো। যে তোমাকে বুঝিয়ে দিলো সেই তোমার চেয়ে কম পেলো! ভুগোল বুঝাও আমারে, উত্তর মেরুর উপর দক্ষিণ মেরু আঁকার চেষ্টা? অত বোকা না আমি বুঝছো!"
বাকি ছিলো শুধু বিছানা ঝাড়ার ঝাড়ু, ওটারও সদ্ব্যবহার হলো! আমি বুঝে গেছি আজ রাতে আর আমার নিস্তার নেই, আর কত আমলনামা বাকি আছে তা কে জানে! বেঁচে থাকলে বাসর রাত করা যাবে, কিন্তু আজ এখানে থাকলে বাসর তো দূরের কথা, পরের রাতও আর দেখতে পাবো না! যা আছে কপালে, অনেক গেম হইছে এবার আমিও একটা চাল দেই।
-" হিয়া, তোমার কাছে আমার যে আমলনামা আছে তাতে হয়তো একটা তথ্য নেই।"
- কি?
-" ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই তোমার খুব জ্বর হয়েছিলো মনে আছে?"
-" হ্যা, তোমাকে একবার আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তোমারও নাকি প্রচুর জ্বর ছিলো তাই আসতে পারো নি।"
-" আমি আসলে সেদিন তোমার বান্ধবি মায়াকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সকালে সিনেমা হলে, দুপুরে আবুল মামার রেস্টুরেন্টে আর বিকালে নদীতীরে! আহ, বড় চমৎকার একটা দিন কাটিয়েছিলাম সেদিন! গার্লফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড এর সাথে ডেটিং, কি অ্যাডভেঞ্চারাস তাই না বলো?"
হিয়া এতটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে ওর চোখ দুটো বের হয়ে আসবে! আমি তো এটাই চাইছিলাম, ঘুঘু দেখেছো জানু কিন্তু ঘুঘুর ফাঁদ তো দেখোনি!
-" এটা নিশ্চয়ই অনেক বড় অন্যায়, তোমাকে মিথ্যে বলে তোমার ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাওয়া, মহা অন্যায়। বিশাল শাস্তি পাওয়া উচিৎ। এক কাজ করো, তুমি বরং কি শাস্তি দেয়া যায় তাই নিয়ে ভাবতে থাকো, আমি বরং একটা সিগারেট খেয়ে আসি!"
এরপর হিয়াকে অবাক অবস্থায় রেখেই বাইরে বের হয়ে আসলাম। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সোজা রাস্তায়, আগামী সাতদিনে আর বাসায় ফিরছি না। এরপর ঝড় ঝাপটা শান্ত হলে ভেবে দেখা যাবে!
ইয়ে মানে, আপনাদের কারো বাসায় সাতদিন থাকা যাবে? থাকার সাথে কিন্তু অবশ্যই খাওয়া ফ্রি দিতে হবে।


বিনিয়ামীন পিয়াস
১৬.১১.২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৪
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×