somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।।প্রবহমান

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। বেড়া

অতনুর জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যেতো। কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে আনমনে আকাশের দিকে চোখ পড়ত- কোন অসুবিধে হয়নি। জানালার ঠিক বামপাশের দেয়ালে একটি সমুদ্রের ছবি সাঁটা। আকাশের নীল থেকে নিজের অজান্তেই চোখ ধীরে ধীরে সরে আসতো সাগরের নীলে। এই দুই নীলের মধ্যে পার্থক্যটা কতটুকু? মাথার নিচে হাত রেখে চিত হয়ে বিছানায় শুয়ে সেই পার্থক্য যাচাই করতে একসময় যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছে সে। কিন্তু একদিন, মৌরির সাথে শেষ দেখা হওয়ার পর, মনসংযোগ করে দেখল, কতগুলো অবাঞ্ছিত ইলেক্ট্রিক তার ঝামেলা করছে ভীষণ। উটকো বেড়ার মত আকাশটাকে ঢেকে দিচ্ছে। সারি সারি কাক এসে আলগা ছোপ বসিয়ে দিয়েছে সফেদ মেঘগুলোতে। অতনুর মন ভীষণ খারাপ হলো। এ কি প্রকারান্তরে তাকে অপমান নয়?

ভুলে গেছে সব, তবু স্মৃতিগুলো হঠাৎ, ঝপ করে নেমে আসে- আকাশের নীল থেকে, দেয়ালের ধূসরতা থেকে; নীলোষ্ণ ছবি থেকেও; কখনো যেন খোলা কোন প্রান্তর থেকে- দমকা বাতাসের মত, সিভকা বুর্কার মত পা ঠুকে, শনশনে আওয়াজ তুলে; কখনো বাজ ফিনিস্তের ডানা থেকে ঝরে পড়া আলতো এক পালক হয়ে। পাশের পাঁচতলা বাড়ীর দুরন্ত কিশোর দুপুরের খাবারশেষে যখন পিয়ানোয় বসে- স্বপ্নমাখা আধখোলা চোখ কোনো সুদূরে; যখন টুং টাং প্রিলিউড শেষে- দশটি আঙুল তার বিদ্যুৎ এর ঝিলিকে মাতিয়ে তোলে বেথোভেনের নবম সিম্ফনি- হেমন্তের মুড়মুড়ে ঝরাপাতায় কে যেন খুব আলগোছে পা ফেলে- কোথাও কিছু অবিরাম ভেঙ্গে যায়, ঝর্ণার মত বয়ে যায়, ভাসিয়ে নেয় অতনুকে। বুকের ভেতর প্রবল এক অনুরণনে কে যেন থেকে থেকে বলে ওঠে, দখিনে যাও, হ্যাঁ, আরও দখিনে...

সুতরাং এক দুপুরে সমুদ্রের পাশে দক্ষিণমুখি হয়ে দাঁড়ায় অতনু- যেন কথা ছিল আকাশ আর সমুদ্রের নীলের তফাৎটা স্বচক্ষে দেখার জন্য আসতেই হবে শেষতক। মৌরির সাথে সাথে নীল রঙটার সবগুলো পরত যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশঃ। পায়ের কাছে ফেনা তোলা জলের সাথে এক ফোঁটা অশ্রু মেলানোর পর অতঃপর সমুদ্র তাকে চিনে নিলো। এ আপনজন। কিছু মৃত মাছ ড্যাবড্যাবে চোখে জরিপ করে তাকে, তারপর স্বতঃসিদ্ধ বাণী দেয় একজন, " যে সাঁতার কাটতে জানে না, তাকে কিছুতেই বিশ্বাস কোরো না।"

"বিশ্বাস করো না আমাকে! কাউকে দিব্যি দিইনি আমাকে বিশ্বাস করো"- বিড়বিড় করে শেষমেশ ভরদুপুরের জ্যোতিষ্মান সুর্যটাকে অতনু নিঃশেষে গিলে ফ্যালে।

কাজটা খুব সহজ ছিল না। খা খা রোদ্দুরে বুকের ভেতরটা ঝলসে উঠল। এখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা অবশিষ্ট স্বপ্নগুলো পুড়ে গিয়ে বোটকা গন্ধ ছড়ালো। একদিন এই স্বপ্নগুলো দীর্ঘ অবয়ব নিয়ে নির্ভয়ে সুগন্ধি ফেরি করে বেড়াতো। অবশ্য অতনুও খুব সহজ মানুষ নয়। দেখতে যদিও ঠিক তোমার-আমার মতই। অবশ্য তোমাকে আমার খুব ভালো করে জানা নেই। তুমি কি করো, কোথায় থাকো, কি খাও, কি পরো- কিচ্ছু জানি না।

পাশের মাঝারি গোছের হলদে ফুলের গাছটি থেকে ছোট্ট নাম না জানা এক পাখি চোখ ঠেরে বলে ওঠে, " বন্ধু হবো। বন্ধু হবো। " তারপর, পাখা মেলে মিশে গেলো দিগন্তে। সাগরতীরের ঈষৎ ঠান্ডা হয়ে আসা বালি ছুঁয়ে অতনু সবাইকে আশ্বস্ত করে; বলে, "আমি পথিক। যতোটুকু জানার,আমাকে জেনেছে সমুদ্রজল। এবার যাই।"

দু'দিন পর বাসায় ফিরে অতনু তার খাট আর টেবিলটার জায়গা পরস্পর বদলে নেয়। তারপর বিছানায় গড়ায়; দ্যাখে, ওইপাশের জানালা দিয়ে তারের বেড়া দেখা যাচ্ছে এখনও, তবে দৃশ্যপট বদলে গেছে অনেকটাই। বেড়াটা আর আকাশকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে না।


২। প্রাণ

শিক্ষিতজনেরা খেলাধুলা, রাজনীতি আর ধর্ম নিয়ে মেতে থাকুক। তাঁদের প্রাণ- প্রাচুর্য- সময় সেখানে ব্যয় করুক, আমি অশিক্ষিত গ্রাম্যই থেকে যাব। সরু পাহাড়ি পথটি ধরে কুয়াশাঘেরা সন্ধ্যারাতে খামোখাই ঢুঁ ঢুঁ করে ঘুরে বেড়াব। পুকুরের স্বচ্ছ জলে পা ভিজিয়ে দেখব তোমার মুখ। আমার আয়না। সকাল সন্ধ্যা আমি আয়নায় নিজেকে খুঁজি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×