somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসুল সঃ কি হাদীস লিখতে মানা করেছিলেন?

১৩ ই নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

হ্যা, রাসুল সঃ হাদীস লিখতে মানা করেছিলেন। এবং এই নিষেধ ছিলো সরাসরি।

(একটা হাদিস পাওয়া যায় সুনানে দারেমীতে, যাতে বোঝা যায়, রাসুল সঃ পরে সেটা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো।)

রাসুল সঃ এর উপর কোনো সুরা বা আয়াত নাজিল হলে তিনি তা সমবেত সবাইকে মুখস্ত করাতেন, এবং পাশাপশি নির্দিষ্ট ওহী লেখকদের দ্বারা লিখিয়েও রাখতেন।

কিন্তু শুধু যে তারাই লিখতো, তা কিন্তু না। সমবেত লোকদের অনেকেই (যারা লিখতে জানতো) লিখতো। তাদের কেউ কেউ রাসুলের কাছ থেকে শোনার সময় একই কাগজে আল্লাহর বাণী এবং রাসুলের নিজস্ব বক্তব্য (কোরান আর হাদিস) মিশ্রিত করে ফেলা শুরু করেন।

রাসুল সঃ এতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

মজার ব্যাপার হলো, সেই কথাও আমরা হাদিস থেকেই জানতে পারি।

রাসুল সঃ তাদেরকে বলেন: তোমরা এসব কী লিখছ? ...আল্লাহর কিতাবের সাথে মিশিয়ে আর একটা কিতাব লিখছ?

আদেশ দেন:
আমিহদু কিতাবাল্লহি ওয়া খাল্লাসু...
==কেবলমাত্র আল্লাহর কিতাব খালিসভাবে লিপিবদ্ধ কর।


It was narrated from Abu Sa'eed al-Khudri that the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said: "Do not write anything from me; whoever has written anything from me other than the Qur'aan, let him erase it and narrate from me, for there is nothing wrong with that." (Narrated by Muslim, al-Zuhd wa'l-Raqaa'iq, 5326)

শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় অংশ অনুবাদ করছি: বর্ণিত আছে, রাসুল সঃ বলেন: কোরান ছাড়া আমার কাছ থেকে তোমরা আর কিছুই লিখবে না। যে এরকম যা কিছু লিখেছ, মুছে ফেল।...


তখন এইসব সাহাবি কর্তৃক কোরান-হাদিস মিলিয়ে যা কিছু লেখা হয়েছিলো, সব পুড়িয়ে ফেলা হয় (রেফ: মুসনাদে ইমাম আহমদ, ১ম খন্ড, পৃ. ১৭১, মজমায়ুজ জাওয়ায়িদ, ১ম খন্ড, পৃ.
১৫২)



রাসুল সঃএর এই কথার প্রয়োজনীয়তা আমরা কমনসেন্স দিয়ে চিন্তা করলেই টের পাই।
কিন্তু মৌখিক প্রচার নিষিদ্ধ ছিলো না।

রাসুল সঃ এর আর একটি মন্তব্য পাওয়া যায় সহীহ মুসলিম-এর একটি হাদিস থেকে:

"আমার কোনো-কথাই লিখো না। কেউ কুরান ছাড়া অন্য কিছু লিখে থাকলে তা মুছে ফেল। তবে আমার কথা প্রচার কর(narrate from me)। এতে কোনো দোষ নাই। কিন্তু মৌখিক বর্ণনায় যেন কোনো মিথ্যা বলো না। যে আমার সম্পর্কে কোনো মিথ্যা বলবে, সে যেন জাহান্নামে তার আশ্রয় গ্রহণ করে।" (সহি মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৪)

একই বর্ণনাকারী থেকে আর একটি হাদিস: আমরা রাসুল সঃ থেকে (কুরান ছাড়া অন্য কিছু) লিপিবদ্ধ করে রাখতে অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি অনুমতি দেন নি।

যায়দ বিন সাবিতও একই রকমের হাদিস বর্ণনা করেছেন।

অর্থাৎ, রাসুল সঃ যে চাননি হাদিস লিখিত রুপে থাকুক, এবং 'কোরানের সাথে মিশ খেয়ে নতুন কোনো এক কিতাব তৈরি হোক' (আকিতাবু মাআ' কিতাবাল্লহি) ----তা স্পষ্ট। এটা নিয়ে মুসলমান পন্ডিত কারো ভেতরে কোনো মতভেদ নাই।

মতভেদ আছে, এই নিষেধ পরে রাসুল সঃ ফিরিয়ে নিয়েছেন কি না --তা নিয়ে। সেটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো। একটা হাদিস পাওয়া যায় সুনানে দারেমীতে, যাতে বোঝা যায়, রাসুল সঃ পরে সেটা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা নিয়েও এখন না, আমরা পরে কথা বলবো।


২.

সমস্যাটা অন্য জায়গায়। একটা প্রশ্ন জাগে, সেটা হলো, তাহলে কি রাসুল সঃ চেয়েছেন যে

শুধুমাত্র-কোরান (অন্য কিছু না) মানুষের কাছে পৌছাক? অন্য কিছু না?

রাসুল সঃ বিভিন্ন সময় যা কিছু বলতেন, সেসব মানুষের কাছে পৌছাক -তা কি তিনি চাইতেন না?

যদি তাঁর নিজের কথার এবং আমলের (হাদিস-এর) মৌখিক প্রচার বন্ধ করাই তার উদ্দেশ্য হতো , তাহলে কি তিনি বলতেন: narrate from me, for there is nothing wrong with that?

সুতরাং আমরা এটুকু বলতে পারি, তাঁর কথার এবং আমলের (হাদিস-এর) মৌখিক প্রচার বন্ধ করা তার উদ্দেশ্য ছিলো না। বরং আল্লাহর বাণীর সাথে তাঁর কথা, ব্যাখ্যা ইত্যাদি লিখিতভাবে মিলে মিশে যাক, সেটা তিনি চান নি।

পরের পর্ব:

রাসুল সঃ কি হাদিস লেখার উপর এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছিলেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:০৯
১৮টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×