১.
হ্যা, রাসুল সঃ হাদীস লিখতে মানা করেছিলেন। এবং এই নিষেধ ছিলো সরাসরি।
(একটা হাদিস পাওয়া যায় সুনানে দারেমীতে, যাতে বোঝা যায়, রাসুল সঃ পরে সেটা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো।)
রাসুল সঃ এর উপর কোনো সুরা বা আয়াত নাজিল হলে তিনি তা সমবেত সবাইকে মুখস্ত করাতেন, এবং পাশাপশি নির্দিষ্ট ওহী লেখকদের দ্বারা লিখিয়েও রাখতেন।
কিন্তু শুধু যে তারাই লিখতো, তা কিন্তু না। সমবেত লোকদের অনেকেই (যারা লিখতে জানতো) লিখতো। তাদের কেউ কেউ রাসুলের কাছ থেকে শোনার সময় একই কাগজে আল্লাহর বাণী এবং রাসুলের নিজস্ব বক্তব্য (কোরান আর হাদিস) মিশ্রিত করে ফেলা শুরু করেন।
রাসুল সঃ এতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মজার ব্যাপার হলো, সেই কথাও আমরা হাদিস থেকেই জানতে পারি।
রাসুল সঃ তাদেরকে বলেন: তোমরা এসব কী লিখছ? ...আল্লাহর কিতাবের সাথে মিশিয়ে আর একটা কিতাব লিখছ?
আদেশ দেন:
আমিহদু কিতাবাল্লহি ওয়া খাল্লাসু...
==কেবলমাত্র আল্লাহর কিতাব খালিসভাবে লিপিবদ্ধ কর।
It was narrated from Abu Sa'eed al-Khudri that the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said: "Do not write anything from me; whoever has written anything from me other than the Qur'aan, let him erase it and narrate from me, for there is nothing wrong with that." (Narrated by Muslim, al-Zuhd wa'l-Raqaa'iq, 5326)
শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় অংশ অনুবাদ করছি: বর্ণিত আছে, রাসুল সঃ বলেন: কোরান ছাড়া আমার কাছ থেকে তোমরা আর কিছুই লিখবে না। যে এরকম যা কিছু লিখেছ, মুছে ফেল।...
তখন এইসব সাহাবি কর্তৃক কোরান-হাদিস মিলিয়ে যা কিছু লেখা হয়েছিলো, সব পুড়িয়ে ফেলা হয় (রেফ: মুসনাদে ইমাম আহমদ, ১ম খন্ড, পৃ. ১৭১, মজমায়ুজ জাওয়ায়িদ, ১ম খন্ড, পৃ.
১৫২)
রাসুল সঃএর এই কথার প্রয়োজনীয়তা আমরা কমনসেন্স দিয়ে চিন্তা করলেই টের পাই।
কিন্তু মৌখিক প্রচার নিষিদ্ধ ছিলো না।
রাসুল সঃ এর আর একটি মন্তব্য পাওয়া যায় সহীহ মুসলিম-এর একটি হাদিস থেকে:
"আমার কোনো-কথাই লিখো না। কেউ কুরান ছাড়া অন্য কিছু লিখে থাকলে তা মুছে ফেল। তবে আমার কথা প্রচার কর(narrate from me)। এতে কোনো দোষ নাই। কিন্তু মৌখিক বর্ণনায় যেন কোনো মিথ্যা বলো না। যে আমার সম্পর্কে কোনো মিথ্যা বলবে, সে যেন জাহান্নামে তার আশ্রয় গ্রহণ করে।" (সহি মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৪)
একই বর্ণনাকারী থেকে আর একটি হাদিস: আমরা রাসুল সঃ থেকে (কুরান ছাড়া অন্য কিছু) লিপিবদ্ধ করে রাখতে অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি অনুমতি দেন নি।
যায়দ বিন সাবিতও একই রকমের হাদিস বর্ণনা করেছেন।
অর্থাৎ, রাসুল সঃ যে চাননি হাদিস লিখিত রুপে থাকুক, এবং 'কোরানের সাথে মিশ খেয়ে নতুন কোনো এক কিতাব তৈরি হোক' (আকিতাবু মাআ' কিতাবাল্লহি) ----তা স্পষ্ট। এটা নিয়ে মুসলমান পন্ডিত কারো ভেতরে কোনো মতভেদ নাই।
মতভেদ আছে, এই নিষেধ পরে রাসুল সঃ ফিরিয়ে নিয়েছেন কি না --তা নিয়ে। সেটা নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো। একটা হাদিস পাওয়া যায় সুনানে দারেমীতে, যাতে বোঝা যায়, রাসুল সঃ পরে সেটা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা নিয়েও এখন না, আমরা পরে কথা বলবো।
২.
সমস্যাটা অন্য জায়গায়। একটা প্রশ্ন জাগে, সেটা হলো, তাহলে কি রাসুল সঃ চেয়েছেন যে
শুধুমাত্র-কোরান (অন্য কিছু না) মানুষের কাছে পৌছাক? অন্য কিছু না?
রাসুল সঃ বিভিন্ন সময় যা কিছু বলতেন, সেসব মানুষের কাছে পৌছাক -তা কি তিনি চাইতেন না?
যদি তাঁর নিজের কথার এবং আমলের (হাদিস-এর) মৌখিক প্রচার বন্ধ করাই তার উদ্দেশ্য হতো , তাহলে কি তিনি বলতেন: narrate from me, for there is nothing wrong with that?
সুতরাং আমরা এটুকু বলতে পারি, তাঁর কথার এবং আমলের (হাদিস-এর) মৌখিক প্রচার বন্ধ করা তার উদ্দেশ্য ছিলো না। বরং আল্লাহর বাণীর সাথে তাঁর কথা, ব্যাখ্যা ইত্যাদি লিখিতভাবে মিলে মিশে যাক, সেটা তিনি চান নি।
পরের পর্ব:
রাসুল সঃ কি হাদিস লেখার উপর এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছিলেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




