গত কয়েকদিন যাবত ফেসবুকে একটা ইভেন্ট নিয়ে খুব আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।"ভালবাসা দিবসে পুলিশি পাহাড়ায় প্রকাশ্যে চুমু খাবো"নামক ইভেন্টটির হোস্ট হুমায়ুন আজাদ পুত্র অনন্য আজাদ আর শাম্মী আক্তার নামে এক বালিকা।যা জানতে পারলাম দুজনেই বর্তমানে জার্মান প্রবাসী।তারা ঠিক কী কারণে জার্মানী গিয়েছেন তা জানিনা।আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের পরিসীমা থেকে জানি মানুষ বিদেশে যায় যে কয়েকটি কারণে সেগুলো হচ্ছে-চাকরী(ছোট বড় যাই হোক),ব্যাবসা,ঘুরাঘুরি,পড়াশোনা।এর বাইরে "এসাইলাম" এর ব্যাপারটা আমার কাছে ক্লিয়ার না।এসাইলাম ঠিক কি কারণে কাদেরকে দেওয়া হয় বা এসাইলাম পেয়ে বিদেশ যাওয়ার পর কাজটা কী কিছুই জানিনা।তবে কেউ যখন বিদেশ বসে দেশের সমস্যা নিয়ে বড় বড় কথা বলে আমার কাছে ভ্যালুলেস মনে হয়।অনেকটা আগুন না ধরিয়ে সিগারেট টানার মত।তা সে যত দামী আর সত্য কথাই বলুক না কেন।দেশের সমস্যা দূর করতে হলে দেশে থেকে করতে হবে,বিদেশে বসে কথাড় তুবড়ি ছুটিয়ে লাভ নেই।দেশের প্রতি যদি এতই দরদ থেকে থাকে তাহলে বিদেশে বসে থাকার মানে হয়না,দেশে এসে সমস্যা দুরীকরণে লেগে যাওয়া উচিত শত বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে হলেও।অনন্য আজাদ আর শাম্মী আক্তার দুজনেই যেহেতু বিদেশে সুতরাং তাদের আয়োজনকৃত এই ইভেন্টটির কোন ভ্যালু নাই।এবার আসি ইভেন্টের ইস্যু প্রসঙ্গে।"ভালবাসা দিবসে পুলিশি পাহারায় প্রকাশ্যে চুমু খাবো"।ধরা যাক ওইদিন যে যার ভালবাসার মানুষকে প্রকাশ্যে চুমু খেলো!!তাতে লাভটা কি হবে?দেশ প্রগতিশীল হয়ে যাবে?দেশের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে?একদিনে সব পুলিশ তাদের চরিত্র পাল্টে ফেলবে?এইসবের উত্তর যদি না হয় তাহলে এই ইভেন্ট স্রেফ একটা ফাইজালামি ছাড়া আর কিছুই নয়।বরং রাস্তাঘাটে এইসব করার কারণে অনেক সাধারণ মানুষ বিব্রত হবে।রাস্তাঘাট কখনো নিজের প্রেমিকাকে আলিঙ্গন করার জায়গা হতে পারেনা,সেটা যত আধুনিক দেশ ই হোক।অনেক উন্নত দেশেও প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার উপরে রাস্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা আছে।আর সবচেয়ে বড় যে ঝামেলা এতে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলো শুধু শুধু উস্কানী পাবে।আর তার ফল কি হয় আমরা সবাই জানি।আমি মৌলবাদের ভয়ে প্রগতিশীলতার চর্চা থামাতে বলছিনা,কিন্তু প্রগতিশীলতার নাম করে উস্কানী দেওয়াটা কি খুব জরুরী?প্রগতিশীলতার চর্চা যখন সর্বস্তরে পৌঁছে যাবে তখন মৌলবাদ মুখ থুবড়ে পড়বে,এটাই বাস্তবতা।কিন্তু উস্কানির ফলে ধর্মীয় মৌলবাদীদের চাপাতির আঘাতে যে তাজা প্রাণগুলো ঝরে যায় তার দায়বার কে নেবে?সবচেয়ে খারাপ লাগে তখনি যখন প্রতিটি হত্যাকান্ডের পর দেখি হত্যাকারীদের পক্ষে কথা বলার লোকের অভাব হয়না।এর কারণ একটাই-মৌলবাদীরা এসব উস্কানীকে তখন ধর্মপ্রাণ মানুষের সিম্প্যাথি আদায়ের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে।
আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে,তার প্রেক্ষিতে কথা বলতে হবে। সব মানুষ একদিনে প্রগতিশীল হয়ে যাবেনা।দেশের সিংহভাগ মানুষের অনুভূতিকে মূল্য দিয়ে তাদের মত করেই তাদের বুঝাতে হবে।আপনি যখন কাউকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন তখন বুঝতে হবে তার আদৌ ক্ষুধা আছে কি না বা থাকলেও কতটুকু আছে।জোর করে কিছু খাওয়ালে বমি হওয়াটাই স্বাভাবিক।ক্ষুধা না থাকলে আগে আপনাকে তার মধ্যে ক্ষুধার উদ্রেক ঘটাতে হবে,তারপর খাওয়ানোর চিন্তা।এতে বদহজমের ঝামেলা নেই।
তাই এসব উস্কানীমূলক কর্মকাণ্ড পরিহার করে দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির আলোকে মানুষকে প্রগতিশীলতার চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা উচিত বলে মনে হয়।ধর্মীয় মৌলবাদ যদি দেশ থেকে পুরোপুরি নির্মূলও হয়ে যায় তবুও এ ধরণের কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:২২