ছোটবেলায় কাক্কা'কে একটু ভয়ই পেতাম মনে হয়। একটু রাশভারী, কম কথা বলা লোক। একটা সময়ে এসে তার জীবনের অনেক কাহিনী বলেছেন, আবার হয়তো গুটিয়ে গেছেন নিজের মধ্যে। সেল্ফ মেড ম্যান বলতে যা বোঝায় কাক্কা ছিলেন তাই। ১০-১২ বছর বয়সেই বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে তারা চার ভাই আর এক বোন এতিম হয়েছিলেন। এক চাচার বদান্যতায় আশ্রয় জুটেছিল ছয় বোন আর এক ভাই এর এক সংসারে। তারপর একে একে স্কুল, কলেজ এরপর আহসানউল্লাহ ইন্জিনিয়ারিং কলেজ (বুয়েট) থেকে সিভিলে বিএসসি ইন্জিনিয়ারিং পাশ করলেন। যতটা সহজে বলে ফেললাম, ততোটা সহজ কিন্তু ছিল না জীবনটা। কখনও জায়গীর থেকে, কখনো আধাপেটা খেয়ে, কখনও না খেয়ে পাড়ি দিয়েছেন এতোটা সময়। পাশ করার পর সেই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকতা জীবন শুরু। একসময় গেলেন আমেরিকা এমএস করতে। পিএইচডি শেষ করে ফিরলেন প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সেখানেই ততোদিনে হয়ে গেছেন সিভিল ইন্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডীন। এরপর হলেন প্ল্যানিং কমিশনের মেম্বার আর সবশেষে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। সবকিছুই অর্জন করেছিলেন নিজের যোগ্যতায়। ছেলেমেয়েরাও ততোদিনে প্রতিষ্ঠিত।
আজকে এই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে নানা কথা মনে আসছে। আমি আমার বড়কাক্কা'র প্রতি যতটা নৈকট্য অনুভব করি, করি ঠিক ততোটাই ক্ষোভ। জীবন চলার পথে পরামর্শ দিয়ে যেমন সাহায্য করেছেন আবার তার চরম স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের কারণেই জীবনকে যেমন খূশি তেমন চালিয়েছি অবলীলায়। নিজের ছেলেদের নিয়ে বড় গর্ব ছিল তার। অথচ সেই ছেলেরা যখন বিয়ের পর সবাই একে একে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রবাসী হয়ে গেলেন, বড় একা হয়ে গিয়েছিল বুড়ো-বুড়ি। একসময় সেই বুড়ি (আশ্রয়দাতা চাচার বড় মেয়ে, যাকে চাকরি জীবনের শুরুতেই জীবনসাথী করে নিয়েছিলেন) ও তাকে ছেড়ে চলে গেল কোন এক অজানার দেশে ....
কাক্কাও হয়তো অভিমান করে পাড়ি জমাতে চাইছেন সেই অজানার দেশে। এখন অপেক্ষা শুধূ প্রবাসী ছেলেমেয়েদের দেশে আসার, এসে তাদের মতামত নিয়েই খূলে ফেলা হবে লাইফ সাপোর্ট। যন্ত্রতো তার কাজ করে যাচ্ছে - হার্টটাকে চালাচ্ছে ধুকপুক করে, তাজা অক্সিজেনে ভরে দিচ্ছে ফুসফুসটা বিরামহীন। হয়তো কাক্কা চলেই গেছেন আরো আগে, পিছনে পড়ে আছে কেবল পিন্জরটা।
হয়তো বা। কে জানে।
বিদায় বড়কাক্কা ....
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



