বানান করে পড়তে শেখার পর থেকেই দৈনিক পত্রিকা পড়া শুরু করেছিলাম। তখন পড়তাম পূর্বদেশ। এরপর ইত্তেফাক। ইত্তেফাক পড়তে যেয়ে নতুন আরেকটা অভ্যাস তৈরী হলো। আর সেটা হলো বিজ্ঞাপন পড়া। কিছু বুঝি আর না বুঝি, সবই পড়া চাই। সেই চর্চাটা অবশ্য এখনও বজায় আছে। প্রথম আলোর বিজ্ঞাপনের চেয়ে অবশ্য ইদানিং আমার দেশ পত্রিকার বিজ্ঞাপন পড়ে বেশী আনন্দ পাই বিশেষ করে পাত্র-পাত্রী চাই আর আবশ্যক বিজ্ঞাপনগুলি মারাত্মক। জোশ !!!
গল্পের বই ঠিক কবে থেকে পড়া শুরু করেছিলাম, ঠিক মনে নেই। তবে ঠাকুরমার ঝুলি আর অলিভার টুইষ্টের কথা এখনও বেশ মনে আছে। আজকের এই লেখা বই পড়া নিয়ে মজার কয়েকটি ঘটনাকে ঘিরে।
পড়ি তখন ক্লাস ফাইভে। হাতের কাছে যাই পাই তাই পড়ি। আম্মার তখন কিছু পেপারব্যাক বই এর কালেকশন ছিল। এই যেমন শরৎচন্দ্র, আশুতোষ ইত্যাদি লেখকের। এরমধ্যে বেশ কিছু ছিল গোয়েন্দা গল্প, সেই কিরিটি রায়ের কাহিনী। আমি পড়তে নিলে আম্মা কিছু বলে না। এরমধ্যে হাতে এলো মাসুদ রানা। বইটা খূব সম্ভবত ধ্বংস পাহাড়। মাসুদ রানা ফিলিস্তিন যোদ্ধাদের নিয়ে গোপন মিশনে ইসরায়েল গেছে। বইটা অনেকখানি পড়ে ফেলেছি। দারুন উত্তেজনা। একটা জায়গায় পেলাম রানা বৈরুতের একটা হোটেল রুমে, তার সাথে ফায়জা। ফায়জার গায়ে শুধূ অন্তর্বাস। ঠিক এসময় আম্মা ছোঁ মেরে বইটা নিয়ে বললো এটা তোমার পড়ার বয়স হয়নি। পড়ার বয়স ? এটা কি ক্লাসের বই নাকি যে নতুন ক্লাসে উঠবো তারপর পড়বো। কিন্তু এখন কি করি। এমন একটা সময়ে বইটা নিয়ে নিল।
আমার অভ্যাস হলো কোন কিছু করতে মানা করলে আমি আগে সেই কাজটা করে বুঝতে চেষ্টা করি কেন মানা করেছিল। বলাবাহুল্য কাজগুলি করতে হতো গোপনে এবং মাঝে-মধ্যে সেগুলি বুমেরাং হয়ে যেতো। এরপর কি হতো সেটা আর বললাম না, সংগত কারণেই। যাই হোক, বইটা নিয়ে যাবার পর চিন্তা করছি কিভাবে সেটা আবার হস্তগত করা যায়। পড়তেই হবে। বয়সের খ্যাতা পূরি। কিন্তু বই কোথায় !!! আমি তন্ন তন্ন করে খূজেও বইটা পেলাম না। সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খূজলাম। কিন্তু নাই তো নাই। হঠাৎ একদিন দেখি আম্মা বইটা পড়ছে। আমি দেখলাম এই চান্স। আমি একটু পর পর মাষ্টার বেডে উকি দেই। দেখি পড়ছে আবার ফিরে আসি পা টিপে টিপে। আবার যাই। আবার ফিরি। কতক্ষণ পর দেখি আম্মা ঘুমিয়ে পড়েছে। পা টিপে টিপে গিয়ে দেখি বইটা আম্মার মাথার কাছেই আছে। এখন নেয়া যাবে না। তাহলে আমাকেই সন্দেহ করতে পারে। আম্মার ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায় থাকলাম। একসময় টের পেলাম আম্মা উঠে বাথরুমে গেছে। আমি এক দৌড়ে গিয়ে দেখি বইটা নাই, কিন্তু বিছানার একটা অংশ একটু উচু হয়ে আছে মনে হলো। তোষোকটা উচু করতেই ... । কি বোকা আমি। এতো এতো জায়গা খূজেছি তোষোকের নিচটা খূজে দেখার কথা মনেও আসেনি। দেখলাম এটার সাথে মাসুদ রানার আরো কয়েকটা আছে। তবে এখন নেয়া যাবে না। চান্স মতো, যাতে সন্দেহ করতে না পারে।
দু'দিন পর স্কুল থেকে ফিরেছি। গোসল করে বের হয়ে দেখি আম্মা রান্নাঘরে। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বইটা নিয়ে এলাম। এরপর একটা বই আর বড় একটা খাতার মাঝখানে রেখে বইটা পড়া শুরু করলাম। আম্মা খেতে ডাকতে এসে হাতে বই দেখে জিজ্ঞাসা করলো কি ব্যাপার। আমি বললাম কাল একটা ক্লাস টেষ্ট আছে। ব্যস।
এক সময় বইটা শেষ হলো। আমি তখন ঘামছি। একে তো চুরি করে বই পড়া, তার উপর অবোধ্য অন্যরকম কিছুর স্বাদ। রাত্রে ফায়জাকে স্বপ্নে দেখলাম। শুধূ ব্রা পড়া।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাষ্টার বেডে গেলাম। আম্মা রান্না ঘরে। আব্বা বাথরুমে। আমি বইটা হাফপ্যান্টের মধ্যে গুজে নিয়ে এসেছিলাম। ত্রস্তে সেটা যথাস্থানে রেখে দিলাম।
এইভাবে আরো প্রায় গোটা তিনেক মাসুদ রানা শেষ করেছিলাম। এরপর অবশ্য ক্লাস সেভেন বা এইট থেকে নিয়মিত মাসুদ রানা পড়ি। সবার সামনেই।
ক্রমশ ...
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৪০