ফারা তন্বী'র দুঃখবিলাস এবং রুহির চলে যাওয়া পোষ্ট টা পড়ে মনে হয়েছিল আমার চারপাশেও তো এমন ঘটনা ঘটছে কতো। কিছু কিছু ঘটনা তো একদম অকারণেই ঘটছে। আবার কোন কোনটা ঘটছে অন্যের প্ররোচনায়। এরকমই কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আমার আজকের এই ছেঁড়া পাতা ...
ঘটনা এক
টিপু (ছদ্মনাম) শিক্ষিত এবং সচ্ছল পরিবারের বড় ছেলে। মাষ্টার্স ডিগ্রি করে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছে। ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি টিপু বিয়ে করলো। এরেঞ্জড ম্যারেজ। মেয়েও মাষ্টার্স ডিগ্রিধারীনি। মেয়ের বাবা এবং ভাই দু'জনেই উকিল।
বিয়ের মাস তিনেকের মাথায় ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটলো। ঘটনা আসলে তেমন কিছুই না। টিপুর রুমের সাথে যে বাথরুমটি আছে সেটাতে পানি আসতো খূব ধীরে। আর তাই গোসল করতে চাইলে অন্য বাথরুম থেকে বালতি ভরে পানি এনে তারপর করতে হতো। টিপুর স্ত্রী একদিন তার নিজের মা কে এই কথাটা জানিয়েছিল। আর টিপুর শ্বাশুরী সেদিন রাত্রেই তার বেয়াইনকে (টিপুর মা) জানালেন এই কথা যাতে বাথরুমের সমস্যাটা সমাধান করা যায়। ছোট্ট ঘটনা। কিন্তু ফলাফল হলো মারাত্মক। বেয়াইনের কাছ থেকে এই কথা শুনে টিপুর মা মনে দূঃখ পেলেন। তিনি তার বৌমাকে ডেকে বললেন যে কথাটা সে (বৌমা) তো তাকেই আগে বলতে পারতো। ৬০ এর দশকে করা বাড়ীতে কিছু সমস্যা আছে বরাবরই। কিন্তু বেয়াইনের কাছ থেকে কথাটা শোনার ফলে তিনি খূবই লজ্জিত বোধ করছেন।
বৌমা মানে টিপুর বৌ পরদিন বাপের বাড়ীতে চলে গেল কাউকে না বলেই। এটা নিয়ে শুরু হলো দুই পরিবারের টানাটানি। এ বলে এটা বললো কেন, ও বলে এটা করলো কেন। টিপু বা টিপুর বৌ এর মধ্যে কিন্তু কোন সমস্যা ছিল না। টিপু নিজে এবং তার বন্ধুবান্ধব খূব চেষ্টা করলো টিপুর বৌকে ফিলিয়ে আনার। টিপুর পরিবার থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হলো বৌমা যদি ফিরে আসে এটা নিয়ে তারা কোন কথা বলবে না। টিপু নিজে গিয়ে আনলেও আপত্তি নেই, তবে তারা পারিবারিকভাবে আনতে যাবেন না। বেকে বসলো মেয়ের পরিবার, টিপুর পরিবার না আসলে তারা মেয়ে দেবেন না। টিপুর বন্ধুরা টিপু আর তার বৌকে ডেকে একসাথে বসিয়ে (৩য় কারও বাসায় বা অফিসে) বহুবার সমঝোতার চেষ্টা করেছে। মেয়ে রাজি হয়ে চলে গেছে, বাবার বাসায় গিয়ে আবার যে কি সেই।
এরমধ্যে বেশ কয়েকমাস চলে গেছে। মেয়ের বাবা আর ভাই উকিল সেটা আগেই বলেছি। তাদের প্ররোচনায় এবার মেয়ে টিপুর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা করলো। ডাক্তারের সার্টিফিকেট সহ। টিপু গ্রেফতার হলো সাথে সাথেই। এই সব মামলায় জামিন পাওয়া যায় না পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার আগে, টিপুও পেল না। টিপুর নিজের পরিবার এবং তার শ্বশুর দু'পক্ষই এবার মাঠে নামলো আটঘাট বেধে। দু'পক্ষের হয়ে সরকারের দু'জন মন্ত্রী তদবির করলেন থানায়। টিপুর বন্ধুরা যখন থানায় খোজ করতে গেল তখন ওসি তাদেরকে বললেন তিনি সঠিক তথ্যটাই আদালতে দিবেন, কারণ দু'জন প্রভাবশালি মন্ত্রী তদবির করায় তার পক্ষে কোন পক্ষাবলম্বন করা সম্ভব না।
পুলিশ রিপোর্ট দিল। নির্যাতনের সপক্ষে যে প্রমাণ দেয়া হয়েছিল সেটা ভূয়া প্রমানিত হয়। টিপু জামিন পায় দূঃসহ ২২টি দিন জেলে কাটানোর পর।
এরপর !!! এরপর আর কি। টিপু নিজেই তার পরিবারকে জানায় সে আর এই সংসার করতে আগ্রহী না। বিয়ের একবছর পূরো হওয়ার আগেই দু'জনের ডিভোর্স হয়ে যায়।
{কয়েক বছর পর টিপু পারিবারিক উদ্যোগেই আবার বিয়ে করেছে। দ'ছেলে আর আর স্ত্রীকে নিয়ে ভালই চলছে তার সংসার।}
ক্রমশ ...
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



