somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার ইতিহাস

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ একটা পোস্ট দেখলাম যেখানে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে দেয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এটা এই ব্লগের ড়াজাকারদের একসময় খুব প্রিয় প্রসংগ ছিল। কিন্তু জালাল ভাই, পিয়াল ভাই সহ আরো অনেকের দেয়া তথ্য প্রমানের সামনে টিকতে না পেরে সবসময়ই ড়াজাকারগুলো গর্তে ঢুকে। তারপর আবার কয়েকদিন বা কয়েক মাস পর সেই পুরোনো গান শুরু করে। আবার ধরা খায় ব্লগারদের হাতে, আবার পালায়। এ এক চক্র!

তো আজকে সেই তথ্য প্রমানের মাত্র কয়েকটা দেয়া হয়েছিল ড়াজাকারটার পোস্টে, পোস্টদাতা তা মুছে দিয়ে অপ্রাসংগিক কথা বলা শুরু করে দিল। তাই এই পোস্টের অবতারনা। ব্লগের ড়াজাকার ছাগুদের হেদায়েত করা আমার কাজের মধ্যে পরে না... শুধু পাঠক দের জন্য জনাব মাশুকুর রহমান ও জনাব মাহবুবুর রহমান জালালের একটি অত্যন্ত পরিশ্রমসাপেক্ষ রিপোর্ট দেয়া হল। মূল লেখাটি ইংরেজীতে। .

আরেকটি লিন্ক দি ডেইলী স্টার.
প্রকাশের তারিখ: মার্চ ৩, ২০০৮

ডেইলী স্টারের ইংরেজী লেখাটার বাংলা অনুবাদক জনাব মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম। প্রথম আলোতে ২৬শে মার্চ, ২০০৮ এ অনুবাদটি প্রকাশিত হয়। নিচে তা দেখা যাবে:









স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা
মাশুকুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান জালাল
...............

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের শুরুতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা বেতার কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পাকিস্তানিরা রেডিও স্টেশনটির নতুন নাম দেয় ‘রেডিও পাকিস্তান ঢাকা’। এ কেন্দ্র থেকেই তারা সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেয়। বাঙালিদের কন্ঠ রোধ করতে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে বাঙালিরা ঠিকই প্রতিরোধ গড়েছিল এবং লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল। শুরু হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ।

বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী তীব্র আক্রমণ অবজ্ঞা করে ওই দিনই সন্ধ্যায় একটি ছোট রেডিও স্টেশন সম্প্রচার শুরু করেছিল। চট্টগ্রামের উত্তরে কালুরঘাট নামক স্থান থেকে গোপন ওই রেডিও স্টেশনটি বিশ্ববাসীর কাছে ঘোষণা করে: ‘শেখ পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি নাগরিককে সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।’ রেডিও স্টেশনটি নিজের নামকরণ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।

পরবর্তী চার দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে রেডিও স্টেশনটির প্রচারণা যুদ্ধ চলে। যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দাবি করে বাংলাদেশে সব কিছুই শান্ত, তখন গোপন রেডিও স্টেশনটি ঘোষণা করে, মুক্তি বাহিনীরা রাজধানীর দিকে এগিয়ে আসছে এবং পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা বাঙালিদের ইচ্ছাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আর গোপন রেডিও স্টেশনটি ঘোষণা করে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গভর্নর জেনারেল টিক্কা খান গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দাবি করে, বাঙালিরা পরাজিত হয়েছে, অন্যদিকে গোপন রেডিও দাবি করে, বাংলাদেশের একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়েছে।

গণহত্যার শুরুর দিনগুলোতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বিশ্বের কাছে ঘোষণা দেয়, বাঙালিরা ছাড় দেবে না, বাঙালিরা যুদ্ধ করবে এবং তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। বিশ্ব গোপন ওই রেডিওর ঘোষণা শুনেছিল। মার্চের সংকটময় ওই পাঁচ দিন কালুরঘাটের ছোট রেডিও স্টেশনটি কখনো নীরব হয়নি। রেডিও স্টেশনটি বাঙালিদের মনোবলকে পুনরুদ্ধার করেছিল এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হতাশায় ডুবিয়েছিল।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নারী ও পুরুষেরা এবং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যরা রেডিও স্টেশনটিকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। পাশাপাশি বিশ্বের কাছে ঘোষণা করেছিল, সংগঠিত বাঙালি প্রতিরোধ নতুন উদ্যমে লড়াইয়ে ফিরে এসেছে। পাকিস্তানি ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের কন্ঠকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না, বিষয়টি তারা নিশ্চিত করেছিল।

পরিবর্তিত ঐতিহাসিক দলিল


১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কীভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল, তার ইতিহাস সঠিকভাবে প্রতিফলনের লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকার দেশের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রশি টানাটানির মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস একাধিকবার নতুন করে লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণায় শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের ভুমিকার প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকসমূহ একাধিকবার পুনর্লিখিত হয়েছে।

ইতিহাস বই সংশোধনের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার নির্ভর করেছে স্বাধীনতাযুদ্ধের ব্যাপারে সরকারের আনুষ্ঠানিক ইতিহাসের ওপর, যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।

আনুষ্ঠানিক ইতিহাস থেকে নিচের কালক্রমটি পাওয়া যায়:

× ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর থেকে ২৬ মার্চ ভোরের কোনো এক সময়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার একটি ঘোষণাপত্র লিখেছিলেন।
× ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাপত্রটি সম্প্রচার করা হয়। তবে খুব কম মানুষই সম্প্রচারিত ঘোষণাটি শুনতে পেয়েছিল।
× ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুরঘাট থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে একটি ঘোষণা পাঠ করেন। ওই ঘোষণা বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো শুনতে পেয়েছিল এবং বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে জানতে পারে।

উপরোক্ত কালক্রম অনুযায়ী, ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণা পাঠের আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা শুনতে পায়নি।
স্বাধীনতার ঘোষণার এই বিবরণটি ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে এবং প্রথাগত বিচক্ষণতায় প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এটা গত তিন দশক ধরে তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, জনপ্রিয় ইন্টারনেট বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় কালুরঘাট রেডিও ট্রান্সমিটার-বিষয়ক নিবন্ধে বলা হয়েছে: ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এম এ হান্নান স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণার একটি ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করেছিলেন......ধারণা করা হয়, স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা বিশ্ব গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছায়নি।’

মেজর জিয়াউর রহমানের শুরুর কথাগুলো ছিল বাংলায় ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। এরপর তিনি সার্বভৌম-স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা পাঠ করেন, যা বার্তা সংস্থাগুলো শুনতে পেয়েছিল এবং তারা তা সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচার করে।

জিয়াউর রহমানের ঘোষণা প্রথম শুনতে পায় চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা একটি জাপানি জাহাজ। তারা তাৎক্ষণিকভাবে তা সারা বিশ্বের কাছে প্রচার করে। জিয়ার ঘোষণার সংবাদ প্রথম সম্প্রচার করে রেডিও অস্ট্রেলিয়া এবং বিশ্ব বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কথা বিস্তারিত জানতে পারে।
তবে বাস্তবতা আর প্রামাণিক দলিলপত্রে সম্পুর্ণ ভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে।

মার্চ ২৬, ১৯৭১: কালুরঘাট থেকে ঘোষণা

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সারা বিশ্বের ইংরেজি ভাষার শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়। এসব দৈনিকের ওপর একটি জরিপ চালানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২৬ মার্চ সকালে কলকাতায় পৌঁছা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত বার্তা থেকে এবং ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার থেকে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা জানতে পারে।

১৯৭১ সালের মার্চে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে কীভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার খবর প্রকাশিত হয়েছিল, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিম্নলিখিত ইংরেজি দৈনিকগুলোতে জরিপ চালানো হয়েছিল: ভারতের দ্য স্টেটসম্যান এবং দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া; আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এয়ার্স হেরাল্ড; অস্ট্রেলিয়ার দ্য এজ এবং দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড; মিয়ানমারের দ্য গার্ডিয়ান; কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল; হংকংয়ের দ্য হংকং স্ট্যান্ডার্ড; ইন্দোনেশিয়ার দ্য জাকার্তা টাইমস; জাপানের আসাহি ইভিনিং নিউজ; নেপালের দ্য রাইজিং নেপাল; ফিলিপাইনের ম্যানিলা টাইমস; সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমস; দক্ষিণ আফ্রিকার দ্য প্রিটোরিয়া নিউজ; থাইল্যান্ডের দ্য ব্যাংকক পোস্ট; যুক্তরাজ্যের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টাইমস অব লন্ডন; যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর সান, দ্য বোস্টন গ্লোব, শিকাগো টাইমস, ক্রিস্টিয়ান সায়েন্স মনিটর, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ফিলাডেলফিয়া ইনকুরিয়ার, সানফ্রান্সিসকো ক্রোনিকেল এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যানে ২৬ মার্চ পাওয়া দুটি বার্তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়:

পাকিস্তানি বাহিনী আন্দোলনকে চাপা দিতে অগ্রসর হওয়ার পর শুক্রবার শেখ মুজিবুর রহমান দুটি বার্তা সম্প্রচার করেছেন। ইউএনআই এ কথা জানায়। একটি অজ্ঞাত রেডিও স্টেশন থেকে বিশ্বের কাছে পাঠানো এক বার্তায় আওয়ামী লীগ নেতা (শেখ মুজিব) ঘোষণা দিয়েছেন যে ‘শত্রু’ আঘাত হেনেছে এবং জনগণ বীরের মতো লড়াই করছে। বার্তাটি কলকাতা থেকে শোনা হয়েছে।

রেডিও স্টেশনটি নিজেকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। শিলং থেকে শোনা স্টেশনটির পরবর্তী সম্প্রচারে তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছেন।

২৭ মার্চ কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান-এ আগের দিনের দুটি বার্তা তুলে ধরা হয় এভাবে:

একটি অজ্ঞাত রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে আজ সকালে বিশ্বের কাছে পাঠানো এক বার্তায় জনাব রহমান (শেখ মুজিব) ঘোষণা দিয়েছেন যে শত্রু আঘাত হেনেছে এবং জনগণ বীরের মতো লড়াই করছে। বার্তাটি কলকাতা থেকে শোনা হয়েছে।

রেডিও স্টেশনটি নিজেকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। শিলং থেকে শোনা স্টেশনটির পরবর্তী সম্প্রচারে তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছেন।

২৭ মার্চ মুম্বাই থেকে প্রকাশিত দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া সকালের প্রথম সম্প্রচার থেকে পাওয়া বার্তার বিষয়বস্তু প্রকাশ করে:


আজ বিশ্বের কাছে পাঠানো এক বার্তায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য বীরের মতো লড়াই করছে।
একটি অজ্ঞাত রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে সম্প্রচারিত ওই বার্তা মুম্বাই থেকে শোনা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, রেডিও স্টেশনটি পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রাম অথবা চালনায় অবস্থিত। বার্তায় জনাব রহমান বলেন: ‘আজ রাত ১২টার দিকে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী হঠাৎ করে পিলখানা ও রাজারবাগে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস ঘাঁটিতে হামলা চালায়। হামলায় অসংখ্য (নিরস্ত্র) মানুষ নিহত হয়।
‘ঢাকায় ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে কঠিন লড়াই চলছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণ অকুতোভয়ে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছে।
‘বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ অবশ্যই যেকোনো মূল্যে দেশের প্রতিটি কোণে শত্রু বাহিনীকে প্রতিরোধ করবে। ‘আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন এবং শত্রুর কাছ থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে তিনি আপনাদের সাহায্য করবেন। জয় বাংলা।’

২৭ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যানও প্রথম বার্তার বিষয়বস্তু প্রকাশ করে:

জনাব রহমান (শেখ মুজিব) বলেছেন, ‘২৬ মার্চ রাত ১২টার দিকে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী হঠাৎ করে পিলখানায় ও রাজারবাগে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এতে অসংখ্য নিরস্ত্র মানুষ নিহত হয়। ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে।

‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণ বীরের মতো শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছে। যেকোনো মূল্যে দেশের প্রতিটি কোনায় শত্রু বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন এবং শত্রুর কাছ থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে তিনি আপনাদের সাহায্য করবেন। জয় বাংলা।’

২৬ মার্চ সন্ধ্যায় কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রথম জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং বেশ কিছু বার্তা সম্প্রচার করে। সম্প্রচারিত বার্তাগুলোর সবই ধারণ করা হয় এবং এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, ওই দিন সন্ধ্যায় কালুরঘাটের একটি রিপোর্ট ভারতে ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘শেখ পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি নাগরিককে সার্বভৌম-স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’

এই ঘোষণা এবং এর আগের বার্তা ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সারা বিশ্বে প্রচার করা হয়। এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্বের প্রায় সব সংবাদপত্রেই প্রথম পাতায় ছাপা হয়। বিশ্বের অনেক শীর্ষ সংবাদপত্র পরের দিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ এ খবর প্রকাশ করে।


উদাহরণ হিসেবে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস ২৭ মার্চ এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়:

শেখ মুজিবুর রহমান শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী জাতিটির (পাকিস্তান) দুই অংশের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা অসন্তোষ গৃহযুদ্ধে রূপ নেওয়ায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
‘দ্য ভয়েস অব ইনডিপেনডেন্ট বাংলা দেশ’ নামে একটি গোপন রেডিও থেকে সম্প্রচারিত বার্তায় বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি নাগরিককে সার্বভৌম-স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’

দালিলিক প্রমাণ নিশ্চিত করে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা শোনা গিয়েছিল এবং পরের দিন সকালে এ নিয়ে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯৭২ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ অবজারভার-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম ইংরেজিতে পাঠ করেন ওয়াপদার প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম। আর প্রথম বাংলায় পাঠ করেন আবুশ কাশেম সন্দ্বীপ। সন্ধ্যায় এম এ হান্নানও একটি বক্তৃতায় ঘোষণাটি পাঠ করেন।

মার্চ ২৭, ১৯৭১: মেজর জিয়ার ঘোষণা

২৬ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কালুরঘাট থেকে অব্যাহতভাবে সম্প্রচার চালিয়ে যায়। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি বিমান হামলা করে বেতার কেন্দ্রটি গুঁড়িয়ে দেয়।

২৮ মার্চ ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো খবর প্রকাশ করে, ‘জিয়া খান’ নামে এক মেজর ২৭ মার্চ একটি ঘোষণা পাঠ করেন। ঘোষক জিয়া খানকে ‘বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
২৮ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান জানায়: আরেকটি ঘোষণায় রেডিওটি দাবি করেছে, বাংলাদেশের পর পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং পাখতুনিস্তান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে।

রেডিওতে কথা বলা ওই ব্যক্তিটি হলেন ‘বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান মেজর জিয়া’।

২৮ মার্চ মুম্বাই থেকে প্রকাশিত দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়:

বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান মেজর জিয়া খান আজ রাতে স্বাধীন বাংলা রেডিওতে ঘোষণা দেন, দু-তিন দিনের মধ্যেই পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসন থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে।

তিনি বলেন, আত্মসমর্পণ না করলে পশ্চিম পাঞ্জাবি সৈনিকেরা ‘নিশ্চিহ্ন হবে’।
ওই প্রতিবেদনে মেজর জিয়াউর রহমানকে ‘জিয়া খান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে মেজর জিয়া কর্তৃক ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কোনো উল্লেখ করা হয়নি।

২৮ মার্চ ভারতীয় পত্রপত্রিকার এ দুটি প্রতিবেদন বিশ্ব সংবাদমাধ্যম প্রচার করেনি। ভারতীয় পত্রপত্রিকা ছাড়াও ২৮ মার্চ প্রকাশিত সারা বিশ্বের প্রধান ইংরেজি সংবাদপত্রগুলোর ওপর পরিচালিত জরিপেও ২৭ মার্চ মেজর জিয়ার সম্প্রচারের ব্যাপারে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

মার্চ ২৮, ১৯৭১: মেজর জিয়া এবং বাংলাদেশের ‘প্রাদেশিক সরকার’
২৮ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় বাংলাদেশের একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়েছে এবং মেজর জিয়াকে প্রাদেশিক সরকারের অস্থায়ী প্রধান ঘোষণা করা হয়েছে। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ঘোষণা করে, প্রাদেশিক সরকারের দিকনির্দেশনা দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘোষণাটি ভারতে শোনা যায় এবং এবারও ভারত মেজর জিয়াউর রহমানকে শুধু মেজর জিয়া খান হিসেবে উল্লেখ করে।

নিজেকে প্রাদেশিক প্রধান হিসেবে ঘোষণা দেওয়া মেজর জিয়ার একটি বক্তৃতা ২৯ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়:

স্বাধীন বাংলা বেতারের এক সম্প্রচারে ‘মুক্তি সেনা’র কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া খান বলেছেন, ‘আমি এতদ্দ্বারা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তি বাহনীর প্রাদেশিক প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করছি।

প্রাদেশিক প্রধান হিসেবে আমি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের চুড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দিচ্ছি। জয় বাংলা।’
তিনি বলেন, ‘শত্রুরা আকাশ ও সমুদ্রপথে অতিরিক্ত সৈন্য নিয়ে এসেছে।’ বাংলাদেশের যুদ্ধরত গণতন্ত্রমনা জনগণের সাহায্যে এগিয়ে আসতে তিনি বিশ্বের সব শান্তিকামী জনগণের প্রতি আবেদন জানান।
মেজর জিয়া দাবি করেন, ‘মুক্তি সেনারা’ কুমিল্লায় পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ৩০০ জনকে হত্যা করেছে। যুদ্ধের শেষে রেজিমেন্টের অন্যরা পালিয়ে গেছে।

মেজর জিয়া খানকে অস্থায়ী প্রধান করে প্রাদেশিক সরকার গঠনের খবর ২৯ মার্চ বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। উদাহরণ হিসেবে, ২৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার দ্য এজ জানায়:

পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থকেরা মেজর জিয়া খানের অস্থায়ী নেতৃত্বের অধীনে আজ একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করেছে।
একটি বিদ্রোহী রেডিও নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। রেডিওটি মেজর জিয়াকে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের মুক্তি সেনার প্রধান হিসেবে পরিচয় দেয়। তবে শেখ মুজিবকে কেন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারে রেডিওটি কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।

২৯ মার্চও বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে কোথাও মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলা হয়নি।

মার্চ ৩০, ১৯৭১: দলিলপত্র এবং সংবাদ প্রতিবেদন

১৯৮২ সালে ১৫ খন্ডে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক দলিলকে বলা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র। পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে বর্তমান সরকার এটি ব্যবহার করছে। এর তৃতীয় খন্ডে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত আছে। সেটা এ রকম:

বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া এতদ্দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরও ঘোষণা করছি, আমরা ইতিমধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম, বৈধ সরকার গঠন করেছি, যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নন-অ্যালাইনমেন্ট নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ সব জাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করবে। বাংলাদেশে বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির জন্য আমি সব সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে এই সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌম বৈধ সরকার এবং বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক জাতির কাছ থেকে এ সরকারের স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার আছে।’

দলিলপত্র অনুযায়ী জিয়াউর রহমান এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ। দলিলপত্রে এর সুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে একই দিন নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার। তবে স্টেটসম্যান পত্রিকায় ২৭ মার্চ সংখ্যায় এই বক্তৃতা ধারণ করা নেই। দলিলপত্রে উল্লেখিত মেজর জিয়ার বক্তৃতার প্রথম রিপোর্ট ভারতীয় পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায় ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ। ভারতীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই বক্তৃতা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ৩০ মার্চ সকালে সম্প্রচারিত হয়েছিল।

৩১ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত স্টেটসম্যান পত্রিকার ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি প্রতিবেদন আছে এ রকম:

কলকাতা, মার্চ ৩০: শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে গঠিত সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌম বৈধ সরকার এবং বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের কাছ থেকে এর স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার আছে। মুক্তি সেনার প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া খান আজ সকালে এ ঘোষণা দেন। ইউএনআই এ কথা জানিয়েছে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত বার্তায় শেখের পক্ষে মেজর জিয়া খান বলেন, ‘নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নন-অ্যালাইনমেন্ট নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ সব জাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করবে।

‘আমরা ইতিমধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম, বৈধ সরকার গঠন করেছি, যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

‘বাংলাদেশের বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে দ্রুত স্বীকৃতি দিতে আমরা বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক ও শান্তিকামী দেশের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’ বাংলাদেশে ‘বর্বর গণহত্যা’র বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশে জনমত সৃষ্টির জন্য তিনি সব সরকারের প্রতি আবেদন জানান।
‘মেজর জিয়া খান বলেন, পাকিস্তান সরকার পরস্পরবিরোধী বিবৃতির মাধ্যমে বিশ্বের জনগণকে বিভ্রান্ত ও ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
‘তবে ইয়াহিয়া খান ও তাঁর সহযোগীদের দ্বারা কেউ বিভ্রান্ত হবে না।

৩১ মার্চ মুম্বাই থেকে প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়া ১৫ নম্বর পৃষ্ঠার একটি খবরে বলা হয়েছে:

কলকাতা, মার্চ ৩০: শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে গঠিত সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌম বৈধ সরকার এবং ‘বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের কাছ থেকে এর স্বীকৃতি’ পাওয়ার অধিকার আছে। মুক্তি সেনার প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া খান আজ সকালে এ ঘোষণা দেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত বার্তায় শেখের পক্ষে মেজর জিয়া খান বলেন, ‘নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নন-অ্যালাইনমেন্ট নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ সব জাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করবে।’

মেজর জিয়া সম্প্রচার শুরু করেন এ কথাগুলো দিয়ে: ‘আমি, মেজর জিয়া, বাংলা মুক্তিবাহিনীর প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ এতদ্দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।

‘আমি আরও ঘোষণা করছি,’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম, বৈধ সরকার গঠন করেছি। যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

৩০ মার্চ মেজর জিয়ার দেওয়া বক্তৃতার ব্যাপারে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল ৩১ মার্চ, যা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পায়নি। জরিপ অনুযায়ী ৩০ মার্চ সকালে মেজর জিয়ার দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা ভারতের বাইরে বিশ্বের ইংরেজি ভাষার কোনো পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়নি।

উপসংহার

৩০ মার্চ বিকেলে কালুরঘাট থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার বন্ধ হওয়ার পর মেজর জিয়া ব্রাম্মণবাড়িয়া যান এবং ৩ এপ্রিল তিনি মেজর খালেদ মোশাররফ ও মেজর সফিউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ কর্নেল এম এ জি ওসমানীর অধীনে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ শুরু করেন।

গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক ইতিহাস একাধিকবার নতুন করে লেখার কারণে প্রথাগত বিচক্ষণতার সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্ট হয়েছিল। ১৯৭১ সালের শেষ দিকে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসমূহ বিষয়টি স্পষ্ট করেছে যে ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত ঘোষণার ভিত্তিতেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে মধ্যরাতে ঢাকায় ইপিআর ও পুলিশ ব্যারাকের ওপর হামলার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত বার্তা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। যদিও প্রাদেশিক সরকার গঠনের ব্যাপারে ২৮ মার্চ কালুরঘাট থেকে মেজর জিয়ার ঘোষণাও বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রচার পেয়েছিল। তবে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে মেজর জিয়াকে কোনো কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি।

মাশুকুর রহমান: ফ্রিল্যান্স লেখক
মাহবুবুর রহমান জালাল: ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ডকুমেন্টস’-এর কর্মী

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৯
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×