
অনন্ত নক্ষত্রবীথির কাছে আমার কিছু চাওয়ার ছিলো না!
নির্লিপ্ত চোখ মেলে আমি তাকিয়েছিলাম আকাশে!
সামনে একটা দিঘি ভর্তি জল, নিশ্চল পরাবাস্তব একটি মুহূর্ত!
মুখভর্তি গোঁফ-দাড়ি নিয়ে মানুষটি আমার পাশে এসে বললেন, আপনার কাছে হাতুড়ি আছে?
আমি কোন কথা বললাম না!
তিনি বললেন, অসহ্য সুন্দর এই প্রকৃতি, অতুলনীয় অন্ধকার, অনাঘ্রাতা দিঘির নিশ্চল জল- ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে!
মৃদ্যু বাতাসে দোলা লাগলো জলে!
আমি নিশ্চুপ নির্বিকার নক্ষত্রবীথিতে নিমগ্ন!
তিনি বললেন, প্রকৃতিতে স্থির চিত্র বলে কিছু নেই!
অস্থির সব- মুহূর্তকাল- তারপর- সব শেষ-
এই যে অন্ধকার অনড় মনে হচ্ছে! দাঁড়ান, শেষ করে দিচ্ছি এই অকারণ দীর্ঘসূত্রিতা-
তিনি পশ্চিমদিকে ইশারা করলেন!
পূর্ণ চাঁদ উঠে এলো আকাশে!
অন্ধকার ম্লান হলো!
অস্বচ্ছ হলো নক্ষত্রবীথির সৌন্দর্য!
তিনি বললেন, এ-ও সুন্দর, ভিন্নরকম-
কিছুক্ষণ চুপ করে কী যেন ভাবলেন, তারপর বললেন, খেলবেন?
আমি নিরুত্তর, তাকালাম মানুষটির চোখে! অসম্ভব ক্লান্ত চোখে অহেতুক পরিতৃপ্তির অন্বেষণ!
তিনি পকেট হাতড়ে একটা কয়েন বের করলেন! শূণ্যে ছুড়ে দিয়ে কয়েনটি ধরলেন, করতলে সেটি লুকিয়ে হাত সামনে এনে বললেন, হেড না টেইল?
আমি বললাম টেইল।
তিনি করতল উন্মুক্ত করে বললেন, টেইল!
তিনি আবার শূণ্যে ছুড়লেন কয়েনটি! করতলে চেপে ধরে ভীষণ উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, এবার?
আমি বললাম, টেইল।
তিনি মুঠো খুললেন, বললেন, হুম! দানে দানে তিন দান-
সুনিপুণ কৌশলে তিনি আবার ওপরে ছুড়লেন কয়েনটি।
মুঠোয় আঁকড়ে ধরে প্রাণপণে বললেন, এবার?
আমার মুখের কাছে তিনি ঝুঁকে এলেন অনেকটাই, যেনো আমার উত্তরের ওপর নির্ভর করছে তার জীবন-মরন!
নিরাবেগ কণ্ঠে আমি বললাম, টেইল।
প্রচণ্ড ঝড়ে বিধ্বস্ত নৌকার পালের মতো ছিন্নভিন্ন মুখে তার দীর্ঘ চিন্তার ছাপ!
মুঠো না খুলেই তিনি বললেন, এবারও টেইল! আচ্ছা! জীবনের সারসত্য কী সত্যিই বুঝেছেন আপনি?
আমি নিরুত্তাপ তবু-
তিনি আনমনে বললেন, টেইল- সবকিছু শেষে পৌঁছায় একদিন- সব শেষ হয়- আমার শেষদৃশ্য দেখবেন?
আমি চোখ বন্ধ করলাম!
দিঘির জলে ভারী একটা কিছু পড়ার শব্দ হলো!
আমাকে ফিরতে হবে!
আমি উঠে এলাম হাইওয়েতে!
গাড়ি আসার আগে পাশে এসে দাঁড়ালেন মানুষটি! ভেজা শরীর!
বললেন, শেষদৃশ্যের জন্য এখনও প্রস্তুত নয় মঞ্চ! আমি আপনার সাথে ফিরতে চাই-
আমি নিরুত্তর রইলাম! কারণ, নিজের সাথে তো নিজের তর্ক চলে না!
ছবি: সংগৃহীত

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





