একটা বাচ্চা স্কুল থেকে বন্চিত হলে, কখন, কোন সময়ে সে হারানো এই সুযোগের জন্য ব্যথা অনুভব করার শুরু করে? তারা কি কাউকে এজন্য মনে মনে দোষারূপ করে?
আমরা যারা ব্লগে আছি, তারা জীবনে স্কুল থেকে বন্চিত হওয়ার বেদনা পাইনি; আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন, যারা কোন একটা সাবজেক্ট পড়তে চেয়ে, সেটি পড়ার সুযোগ না পেয়ে অনেক কস্ট পেয়েছেন। আজকাল, ডাক্তারী, ইন্জিনিয়ারিং, কম্প্যুটার সায়েন্সে সুযোগ না পেয়ে কত ছেলেমেয়ে বিশালভাবে হতাশ হচ্ছে, তা আপনারা দেখছেন। কিন্তু যে বাচ্চা জীবনে পড়ালেখা বন্চিত হয়েছে, তার কি অবস্হা? কখন, কোন বয়সে সে বুঝতে পারে যে, সে বন্চিত! তখন কি ধরণের বেদনায় সে ভোগে, কত সময় অবধি সে ভোগে?
এখন দেশে প্রায় ৪/৫ লাখ চাকরাণী আছে, যাদের বয়স ১৫ বছরের নীচে, এবং ২ লাখের মতো তথাকথিত 'জাতীয় টোকাই' আছে, যারা সম্প্রতি স্কুল থেকে বন্চিত হয়েছে; তারা কি স্কুল থেকে বন্চিত হওয়ার বেদনায় ভোগে?
অবশ্যই ভোগে, এই বেদনা বিশাল বেদনা, কিন্তু তারা তা প্রকাশ করতে পারে না, প্রকাশের অবস্হানে নেই! মনে হয়, এই বেদনা সারা জীবনের জন্য সাথী হয়ে যায়।
আমার প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার পথে, পাশের গ্রামে একটা দরিদ্র হিন্দু বাড়ী পড়তো, তাদের পেছনের পুকুরের পাড় ঘেঁষে রাস্তা চলে গেছে; পুকুরের পাড়টা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করা ছিল, এবং ভেতরে ছোট্ট একটা গরু ঘর, সেখানে ১টি মাত্র গাভী ছিল; ৭/৮ বছরের ১টি মেয়ে গাভীটির দেখাশোনা করতো; আমি স্কুলে যাবার পথে তাকে দেখতাম, ফিরে আসার পথেও তাকে দেখতাম। আমি নিজের থেকে তার সাথে কথা বলার শুরু করেছিলাম, ওর নাম ছিলো পুস্প; ওর বাবা ওর বয়সের তুলনায় বেশ বুড়ো ছিলো, ওরা খুবই দরিদ্র ছিলো; পুস্প কোনদিন স্কুলে যায়নি; সে আমার বইগুলো দেখতে চাইতো সব সময়, সে বই'এর ছবি দেখতো, লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে পেয়ারা, লেবু, আম দিতো। আমি ২য় শ্রেণীতে উঠার পর, আমার ১ম শ্রেণীর ২টি বই আমি ওকে দিয়েছিলাম; কিন্তু সে সেগুলো কখনো পড়তে শিখেনি।
হাই স্কুলে পড়ার সময়, তার সাথে মাঝে মাঝে দেখা হতো; কলেজের সময় আমি শহরে ছিলাম, ২/১ বার দেখা হয়েছে; মুক্তিযুদ্ধের পর, সে আমাকে দেখতে এসেছিল; সেদিন আমি জীবনে প্রথমবার অনুভব করেছিলাম যে, আমি তো ওর জীবন নিয়ে ভাবিনি কোনদিন, সে আমাকে মনে রেখেছিল। আমি ৫ বছর ওর সামনে দিয়ে স্কুলে গিয়েছি, ফিরে এসেছি, সে আমার যাওয়া আসা দেখতো; সে কি মনে মনে স্কুলে যাবার জন্য ব্যথাতুর হতো?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১০