১৯৭১ সালের বিজয় দিবসই ছিল জাতির সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় বিজয় দিবস; পাকিস্তান বাহিনীর ৯ মাসের হত্যাকান্ড, টেটর, অন্যায়, দুষ্ট পাকী সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের পরাজয়, মুক্তিবাহিনীর জয়, মানুষকে বিমোহিত করেছিল; স্বজন, সম্পদ, আত্মীয়, পড়সী হারানোর দু:খকে চাপিয়ে নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও আশা মানুষকে এত বেশী উৎসাহিত করেছিল যে, মানুষ ভয়শুণ্য হৃদয়ে, ৯ মাসের কষ্টকে পায়ের নীচে ফেলে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের সামনে ছিল নতুন এক জাতি, নতুন পরিচয়, নতুন ভাবনা, সীমাহীন আবেগ, দিগন্তজোড়া স্বপ্ন।
সেই বিশাল বিজয়, সেই বিশাল স্বপ্ন ভাংতে বেশী সময় লাগেনি; ১৯৭২ সালে, মানুষ আবার একই ধরণের সরকারী অফিসারদের দেখেছেন, একই ব্যুরোক্রেটরা অফিসে, একই ধরণের লোকেরা প্রশাসনে; এদের কথার সুর আগের মতো, এদের চলাফেরা আগের মতো, মানুষের ৯ মাসে অবদানের কথা কেহ বলেনি, এই সাড়ে ৭ কোটী মানুষ কিসের মাঝ দিয়ে গিয়েছে, সেটা বড় কাহিনী হয়নি; প্রশাসন শেখ সাহেবর কথা বলছে, তাজুদ্দিন সাহেবের কথা বলছে; কেহ মানুষের খবর নিতে আসেনি; যে মায়ের সন্তান যুদ্ধ শেষ ফিরে আসেনি, তাঁকে শান্ত্বনা দিতে শেখ সাহেব আসেননি, তাজুদ্দিন সাহেব আসেননি, কোন কমান্ডার আসেননি; যে ইপিআর ফিরে আসেননি, তাঁর বিধবা স্ত্রীর খবর কেহ নেয়নি, কেহ এসে একটা আশার কথা বলেনি, কেহ এসে স্বামীর গল্প করেনি, তাঁর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে কেহ ভরসা দেয়নি; আশা, স্বপ্ন, ভরসা সবকিছুই ক্রমেই নিজের থেকে হারিয়ে গেছে।
তারপর ৪৭ বছরে অনেক কিছু ঘটেছে, অনেক কিছু বদলায়েছে; মানুষ নতুন কিছু নিয়ে ভাবছে না, নতুন স্বপ্নের কথা কোথায়ও শোনা যায় না; যারা দেশ চালায়, তারাই বিজয় দিবস পালন করে, তারাই সবকিছুতে; সাধারণ মানুষ শুধু দর্শক, শুধু শ্রোতা; তাদের তেমন কোন ভুমিকা আছে বলে মনে হয় না। জাতি গড়ছেন ক্ষমতার লোকেরা, তারা সবকিছুর মালিক, তাদের কথাই শেষ কথা, বিজয়ও তাদের কাহিনী, তাদের গল্প, বিজয় এখন তাদের; মানুষের কথা নেই, মানুষের বিজয়ের কাহিনী নেই!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০২