মানবাধিকারের দিক থেকে, ২০১৭ সাল ছিল সারা বিশ্বের জন্য বিশাল হতাশার বছর: বার্মায় রোহিংগা হত্যা ও বিতাড়ন, এবং তাতে বাংলাদেশের উপর চাপ, সিরিয়া থেকে মধ্যবিত্তের পলায়ন, ইয়েমেনে সৌদী বোম্বিং, সিরিয়ায় রাশিয়া ও আমেরিকার মুখোমুখী অবস্হান, উ: কোরিয়ার অস্ত্র প্রতিযোগীতা, আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্ব সান্দিহান, পুটিনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব, বিলিওনিয়ারদের অধীনে চীনা কম্যুনিষ্ট পার্টি, আফ্রিকায় বরাবরের মত খাদ্যাভাব, ভুমধ্য-সাগর হয়ে আফ্রিকানদের ইউরোপে পলায়ন।
বাংলাদেশে ২ কোটী মানুষ চরম দরিদ্র জীবন যাপনের পরও, সরকার তাদের জন্য সঠিক কোন প্রোগ্রামের প্রবর্তন না করায়, সরকারের কোষাগারে টাকা জমা হচ্ছে, রিজার্ভ বাড়ছে, এতে সরকার থেকে শুরু করে হতদরিদ্ররাও কিছুটা গর্ব অনুভব করছে; যাদের শিল্প-কারখানা, ব্যবসা আছে তারা নতুন নতুন সুযোগ পাচ্ছে, শিক্ষিতদের মাঝে বেকারত্ব ও আধা-বেকারত্ব বাড়ছে, পড়ালেখার খরচই পরিবারের সবচেয়ে বড় খরচ, এবং বাচ্ছারা সবচেয়ে বেশী সময় পড়ালেখায় ব্যয় করার পরও, প্রশ্নফাঁস ও প্রাইভেট শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের কারণে জাতি পড়ালেখার মান নিয়ে সবাই হতাশ।
২০১৮ সালের জন্য বিশ্বের বড়শক্তিদের নতুন কোন পরিকল্পনা নেই; একা উত্তর কোরিয়াই আমেরিকাকে ব্যস্ত রাখছে, সেই সুযোগে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে শিয়াদের উত্থান ঘটাচ্ছে, এতে ইয়েমেন, কাতারে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে; ইরানের এই তৎপরতার বিপরিতে ইসরায়েল আরব-সরকারগুলোর সাথে আঁতাত গড়ে তুলছে; কিন্তু আরবদেশের সাধারণ মানুষ ইসরেয়েল বিরোধী। সৌদী বোম্বিং ইয়েমেনকে মোটামোটি ব্যর্থ দেশে পরিণত করেছে, এবং কাতারের ভবিষ্যতও কুয়াশায়-ঢাকা।
পুটিন দেশের সুসম উন্নয়ন না ঘটায়ে সামরিক উন্নয়ন করে চলছে; তাদের সাধারণ টেকনোলোজী পেছনে পড়ে গেছে, কিন্তু সামরিক টেকনোলোজীতে ক্রমাগতভাবে বিনিয়োগ করেই চলেছে। পুটিন আমেরিকান ভোটে ম্যানিপুলেশনের চেষ্টার পর, ইউরোপে চেষ্টা করছে; নিজ দেশে, সে নিজের প্রতিদ্বন্দিকে ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করায়েছে। মনে হচ্ছে, উ: কোরিয়ার মিসাইলে এটমিক ওয়ার-হেড টেকনোলোজোলী রাশিয়া কিংবা চীন থেকে শিখছে। উ: কোরিয়া নিয়ে রাশিয়া, চীন ও আমেরিকা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা হারাচ্ছে, এটা বিশ্বের জন্য বিপদজনক।
সিরিয়ায় আসাদ যদিও পরিস্কারভাবে জয়ী হয়, সুন্নীরা দেশে ফিরতে পারবে না; যারা ই্উরোপে গেছে তারা ফিরবে না; একা লেবাননে ৪ লাখ সিরিয়ান শিশু-কিশোর আছে, যারা লেখাপড়া থেকে বন্চিত হবে, এরা একদিন অস্ত্র হাতে নেবে; ফলে, আরবে শান্তি সহসা ফিরছে না।
বাংলাদেশ থেকে জানুয়ারী হতে রোহিংগা ফেরত নিতে রাযী হয়েছে বার্মা; তবে, তাদের চালচলনে মনে হচ্ছে না, তারা প্রস্তুত; বাংলাদেশে সীমান্তের কাছাকাছি রোহিংগা গ্রামগুলোতে কিছু মানুষ হয়তো ফেরত যাবে; কিন্তু বেশীরভাগ রোহিংগাই ফেরত যাবার মতো কোন যায়গা সেই দেশে নেই।
২০১৮ সালও অনেকটা ২০১৭ সালের মতো কাটবে, মনে হচ্ছে!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৫