somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তারদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে, আজকেই বোধ হয় শেষদিন!

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কয়েকদিন জ্বর, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না; ৫ দিনেও জ্বর থামলো না, ভয় পেলাম, যেতেই হবে। সাদা আমেরিকান, বা ইহুদী ডাক্তারদের এপয়েন্টমেন্ট সাথে সাথে পাওয়া যায় না, বাংগালী বা ভারতীয় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ইচ্ছে নেই; এক ফিলিপাইনের ডাক্তারের এপয়েমেন্ট পেলাম, কাছেই মাইল দু'য়েক হবে। জ্বরে শরীর কিছুটা দুর্বল, ভাবলাম হেঁটেই যাই, হাঁটা হবে, লোকজনের সাথে দেখাও হবে। স্পেনিশ এলাকা হয়ে হাঁটছি, মাইলখানেকের মাঝে মানুষতো দুরের কথা কুত্তার দেখাও পেলাম না; ট্রাম্পের ভয়ে মনে হয় রাস্তায় কেহ বের হয় না। একটু ক্লান্তিও লাগছিল, বাস নিলে ভালো হবে; কোন রাস্তা দিয়ে বাস যায় কে জানে! এক স্পেনিশ মেয়ে হনহন করে আমার পাশ দিয়ে একই দিকে হেঁটে যাচ্ছে, বললাম,

-হ্যালো, কেমন আছ! এখানে কোন রাস্তা দিয়ে বাস চলাচল করে?
-ভালো আছি, আমি ইংরেজী জানি না।
-তেমন ইংরেজী জানতে হবে না, আশেপাশে বাস আছে নাকি?
-ইংরেজী জানি না বললাম না! তুমি কি ইংরেজী কম বুঝ? এই বলে সে দ্রুত চলে যাচ্ছিল। আমি বললাম,
-তুমি এভাবে পালিয়ে যাচ্ছ কেন, মানুষ টানুষ মেরেছ নাকি, নাকি কিছু চুরি টুরি করেছ?
-তুমি কি এই সকালবেলায় সমস্যায় জড়াতে চাচ্ছ? মেয়ে মোটামুটি ক্ষেপেছে, এবং তার চোয়ালের হাড্ডি মাড্ডি শক্ত হয়ে উঠেছে।
-সামনে পুলিশের গাড়ী আছে, ওগুলো ট্রাম্প সাপোর্টার, ওরা স্পেনিশ ভালোবাসে না, হুশিয়ারে যাইও।
-চিন্তিত হয়ো না, আমার স্বামী পুলিশে চাকুরী করে; বরং তোমার একটু হুশিয়ার হওয়ার দরকার আছে!
-স্বামী পুলিশে? কত নম্বর স্বামী, নম্বরটা মনে আছে তো?
সে রাস্তা ক্রস করে অন্য পাশে চলে গেলো।

ডাক্তার মনোযোগ দিয়ে দেখলো, শেষে একটু চিন্তিত হয়ে গেলো; ডাক্তারকে চিন্তিত দেখলে ভালো না লাগার কারণ আছে। ডাক্তার বললো নীচে গিয়ে রক্ত দিতে; আমি বললাম,
-তাড়াহুড়ো কেন?
-মনে হচ্ছে, একটা সমস্যা আছে; আজকেই রিপোর্টটা পেলে ভালো হবে।
-মরে টরে যাচ্ছি নাতো?
-হয়তো আজকে মরতেছ না, তবে টেস্টটা জরুরী।

মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রক্ত দিলাম। হাঁটার ইচ্ছে ছিলো না আর; ল্যাবের লোকটার থেকে জেনে নিলাম, ২/৩ ব্লকের মাঝে ট্রেন। ৩ ব্লকের পর, আরও এক ব্লক হাঁটলাম, ট্রেনের নাম গন্ধও নেই; আরেকজনকে প্রশ্ন করে জানলাম আরও ৩ ব্লক সামনে; মন খাট্টা হয়ে গেলো। রাস্তাঘাট ফাঁকা; এক দোকানের সামনে এক সাদা মেয়ে টেলিফোন টিপছিলো; কোন হ্যালো মেলো ব্যতিতই প্রশ্ন করলাম,
-ট্রেন কোথায়?
মেয়েটা এদিক ওদিক তাকিয়ে, দিলো দৌড়; দৌড়ে রাস্তার কোণায় গিয়ে পেছনে ফিরে আমাকে দেখলো। পাশে একটা সাদা ছেলে ছিলো, সেও হতবাক। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-তোমার হাত কোথায়?

আমার ডান হাতটা বুক বরাবর কোটের ভেতরে ঢুকানো ছিল; জ্বরে ঠান্ডা লাগছিলো, একটা বোতাম খুলে হাতটাকে কোটের ভেতর রেখে একটু গরম করছিলাম। ছেলেটা বললো,
-মেয়ে মনে করেছে, তোমার হাতে অস্ত্র থাকতে পারে। ছেলেটির অনুমান সঠিক, মনে হলো।
ছেলেটি ট্রেন দেখায়ে দিলো; আমি ১ ব্লক বেশী এসে গেছি, পেছনে যেতে হবে।

ট্রেন ফাঁকা, সকালে কাজের লোকেরা কাজে চলে গেছে, এখন বেকার ফেকাররা ঘুরতে বের হচ্ছে। পুরো ট্রেনে ক্যানের পঁচা টুনা মাছের গন্ধ; আমি জোরে চিৎকার করে বললাম,
-বিড়ালের খাদ্য কে খাচ্ছে?

একটা সাদা মেয়ে মনে হলো বেশ মজা পেয়েছে, সে আংগুল দিয়ে ট্রেনের অন্য প্রান্তের দিকে দেখালো। অবশ্যই, এক চীনা মিয়া সস্তা টুনাকে ২ রুটির মাঝখানে রেখে, তথাকথিত স্যান্ডউইচ খাচ্ছে, পুরো ট্রেনে গন্ধ। চীনা মিয়াকে লক্ষ্য করে বললাম,
-কি ব্যাপার, টুনা কেমন লাগছে?
সে খুশী, মাথা নেড়ে আবার এক কামড় নিলো। এক আফ্রিকান আমেরিকান মেয়ে আমার এই হাবভাব পছন্দ করেনি; সে শক্ত গলায় বললো,
-মিস্টার, ট্রেনটা কি তুমি কিনেছ? ভালো না লাগলে নেমে যাও!

বুঝলাম, বেশী করা হয়ে গেছে, আজকের জন্য যথেষ্ট; সামনের স্টেশনে নেমে অন্য কামরায় চলে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০১
৫৬টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে ফেরার টান

লিখেছেন স্প্যানকড, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৩১

ছবি নেট।

তুমি মানে
সমস্ত দিনের ক্লান্তি শেষে
নতুন করে বেঁচে থাকার নাম।

তুমি মানে
আড্ডা,কবিতা,গান
তুমি মানে দুঃখ মুছে
হেসে ওঠে প্রাণ।

তুমি মানে
বুক ভরা ভালোবাসা
পূর্ণ সমস্ত শূন্যস্থান।

তুমি মানে ভেঙ্গে ফেলা
রাতের নিস্তব্ধতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×