যেদিন ইংল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়ার সেমি-ফাইন্যাল হয়েছিল, সেদিনের ঘটনা; খেলা দেখতে বসলাম; প্রথম পাঁচ মিনিটে, খেলার প্যাটার্ণ দেখে বুঝলাম যে, ক্রোয়েশিয়াই জিতে যাবে; আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো; ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া, এই জাতিগুলো জল্লাদ জাতি, এরা বিশ্বকাপের কোন খেলায় জিতুক এটা আমি চাহিনি। বল খেলা দেখে আমার মন খারাপ হলে, আমার মন ভালো করার জন্য, বল খেলে ২/১টা গোল করতে হয়; কিংবা একা একা হলেও ঘন্টা'খানেক বলে লাথি মারতে হয়। আজকে বল খেলার কোন উপায় নেই; তারপরও বল নিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর দরকার।
ঘরে বল নেই, গত মে'মাসে শেষ বলটা আমার স্ত্রী একটা ছোট বাচ্চাকে দিয়ে দিয়েছে; সেদিন পার্কে একটা খাবার দাওয়াত ছিলো; আমি সাথে বলটা নিলাম, কয়েকজন মিলে খেলা শুরু করলাম। আমি বল খেলি, এটা আমার স্ত্রী চাহে না; ডাক্তার বলেছে, আমি জোরে পড়লে ভয়ানক অসুবিধা হবে। কেহ কি ইচ্ছা করে পড়ে? যাক, আমি ভালো মতোই পড়লাম; স্ত্রী দেখেছে! বাড়ী ফেরার সময় একটা বাচ্চা আমার বলটা নিয়ে খেলছিলো, সে বলটা এখন দেবে না, আরো কিছুক্ষণ খেলতে চায়; আমার স্ত্রী ভালো সুযোগ পেলো, উড়ো খৈ গোবিন্দে নম:।
বল কিনতে হবে; সমস্যা হলো, আমি বাজারে গেলে আমার স্ত্রী সাথে যাবেই; সে গেলে বল কিনতে দেবে না; ঠিক আছে, তাকে মাইনাস করতে হবে; আমি বললাম,
-চল, হেঁটে আসি; সাথে বাজারটা করে নিয়ে আসি!
-কোন দোকানে?
-শপরাইট।
-এই গরমের ভেতর জিনিষপত্র নিয়ে আমি দেড় মাইল হেঁটে আসতে পারবো না।
-তা'হলে, আমি একাই যাচ্ছি!
বেজায় গরম পড়ছিলো, দোকানে ঢুকে এক কর্মচারী মেয়েকে প্রশ্ন করলাম,
-ম্যান'স রুম কোনদিকে?
সে সামনের একটা করিডোর দেখায়ে দিলো; করিডোরের দুইপাশে এই অফিস, সেই অফিস, বয়লার রুম, ময়লার রুম সবই আছে; কিন্তু ম্যান'স রুম চোখে পড়লো না; করিডোর যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানকার সামনের দরজার হাতল ধরে টান দিলাম! আরে পায়খানা, ভীষণ জোরে এলার্ম বেজে উঠলো, দেখি উহা ইমারজেন্সী এক্সিট! আমি একটু পেছনে সরে এলাম; আসলে, ডানপাশের রুমটাই ম্যানস রুম ছিল, আগে আমার চোখে পড়েনি, চোখে কম দেখলে যা ঘটে; আমি টুং করে উহাতে ঢুকে পড়লাম; এলার্ম বেজেই চলছে; বাজে এলার্ম, পাগলা ঘন্টার মতো বাজছে! করিডোরে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়েছে। আমি দরজা একটু ফাঁক করে দেখলাম, ৩/৪টি মেয়ে এলার্ম বন্ধ করার চেষ্টা করছে, বন্ধ হচ্ছে না। এরপর আরো ২ জন দৌড়ে এলো, অবশেষে প্রায় ৫ মিনিট পর এলার্ম বন্ধ হলো। একটু পরে দোকানের ম্যানেজার মাইকে কাষ্টমারদের কাছে মাফ চেয়ে জানালো যে, ভয়ের কিছু নেই, এটা ফায়ার এলার্ম নয়, ইমারজেন্সী এক্সিটের এলার্মটা নষ্ট হয়ে গেছে, আপনা থেকে বেজেছিল। আমি ভেতরে মিনিট পাঁচেক বেশী কাটিয়ে বের হলাম; বল ও হালকা এটা সেটা কিনে বাসায় ফিরলাম।
বাসা থেকে আধা মাইল দুরে, বাচ্চাদের একটা প্লে-গ্রাউন্ড আছে, ১৫ ফুট উঁছু লোহার নেট দিয়ে ঘেরা; গত বছর রাতে ওখনে বল মেরেছি একা একা; নেটে বল মারলে বল ফিরে আসে। সমস্যা হলো, ভালো অন্ধকার না হওয়া অবধি বাচ্চারা খেলতেই থাকে; যাক, আমি সাড়ে ৯ টায় বল নিয়ে গেলাম, কেহ নেই, বেশ অন্ধকার। প্লে-গ্রাউন্ড'এর একপাশ দিয়ে ফুটপাথ, শুধু সেখানে একটা মাত্র লাইট, গাছের কারণে অনেকটা আলোছায়া মনে হচ্ছিল আমার কাছে। আলোর কাছে নেটে কিক দিচ্ছি; ২০ মিনিটে মাত্র ৬/৭টা কিক দিতে পেরেছি, ফুটপাথ দিয়ে মানুষ যাওয়া আসা করছে, ওদের চলে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হয়, সুবিধে হচ্ছে না। উল্টোপাশ বেশ অন্ধকার, ঐদিকেই খেলতে হবে! ভালো হলো, নেট ঘেঁষে একটা বড় গার্বেজ-ক্যান আছে, উহাকে নিশানা করে মারতে পারবো। মাঠের মাঝখান থেকে ভালো একটা কিক করলাম গার্বেজ-ক্যানকে নিশানা করে; ক্যানে লাগেনি, তবে ক্যান ঘেষেই নেটে লেগেছে, পায়ের অবস্হা ভালোই বলতে হয়!
হঠাৎ দেখি, ক্যান যেন মানুষে পরিণত হলো, ২ জন মানুষ উঠে দাঁরালো হালকা অন্ধকারে; হালকা অন্ধকারে আমি ২ জন মানুষ দেখছি; ভয়ে ভয়ে কাছে গেলাম; গাঁজার সুগন্ধে এলাকা মৌ মৌ করছে; দুটি মেয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে; আমি বললাম,
-হ্যালো, কেমন আছো?
-ভালো; তুমি কি আমাদের গায়ে বল মেরেছ? মেয়েদের একজন জানতে চাইলো।
-স্যরি, কি যে বলো? আমি তোমাদের থেকে অনেক দুরে নেটে মারার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু দেখতেই পাচ্ছ, আমার পায়ের নিশানা ঠিক নেই; স্যরি, বলটা তোমাদের কাছাকাছি এসে গেছে!
-এতক্ষণ ঐ পাশে তো তুমি বেশ সোজাসুজি মারছিলে! যাকগে, আমরা স্মোক করতে এসেছিলাম, চলে যাচ্ছি, তুমি খেলো!
-না, না, তোমাদের যেতে হবে না, আমি আগের পাশে ফিরে যাই।
এবার ২য় মেয়েটি মুখ খুললো,
-তুমি সত্য করে বলতো আমাদের গায়ে তুমি বল মারনি? ওপাশে তোমার বল-মারা দেখে আমার সন্দেহ হচ্ছে!
-সত্য কথা বললে তোমাদের মন খারাপ হবে না তো?
-না, বলো!
আসলে আমার চোখে সমস্যা আছে; অন্ধকারে বসা অবস্হায়, তোমাদের ২ জনকে আমি গার্বেজ ক্যান মনে করেছিলাম। আমি ক্যানকে নিশানা করে কিক দিয়েছিলাম; আমার সৌভাগ্য যে ক্যানে লাগেনি!
মেয়েরা হোহো করে হেসে উঠলো। ২য়টা মেয়েটা বললো,
এটা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সেরা বাস্তব জোক!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:১৮