somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৯৯ পয়সা মুল্যের ডিটেকটিভের কবলে

২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একদিন, দশ এগারো বছরের একটি কিশোরী আমার কার্যকলাপের উপর অকারণ নজর রাখছিলো কিছু সময়ের জন্য; সেই কাহিনী বলছি:
আমার স্ত্রীর বার্ষিক চক্ষু চেক-আপ ছিল সেদিন দুপুর বেলায়; ডাক্তারের অফিস বেশ দুরে, গাড়ী নিতে হলো; ডাক্তারের অফিসের আশেপাশে পার্কিং নেই; অনেকক্ষণ চারিপাশে ঘুরলাম; শেষে অফিসের পেছনে অবস্হিত হাউজিং'এর পেছনে ছোট একটি রাস্তায়, শেষ বাড়ীটার পাশে পার্কিং পেলাম, এটা ছিল ডেড-এন্ড; হাউজিং'এর উল্টোপাশে পাইন গাছের ছোটখাট একটি জংগল।

বাড়ীটার বারান্দা রাস্তার সাথে প্রায় লাগানো; বাড়ীর সীমানা-বেড়ার বাহিরে, রাস্তার পাশে বুনো সুর্যমুখীর ছোটখাট একটি ঝোপ, অনেক ফুল ফুটেছে। বারান্দায় দশ এগারো বছরের একটি কিশোরী চেয়ারে বসে বই পড়ছিলো; দেখলাম, সে গাড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে; মনে হয়, হাউজিং'এর লোকজন ছাড়া, বাইরের লোক এইদিকে পার্কিং করে না; আমি গাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় সে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আড় চোখে আমাকে দেখলো; চোখাচোখি না হওয়ায় আমি হ্যালো ম্যালো বললাম না।

আমার স্ত্রী রাস্তার পাশের বুনো সুর্যমুখী দেখে বললো,
-আমরা এখান থেকে ২/১ টা ফুল নিতে পারবো?
-এই দেশে কেহ বুনো ফুল সাধরণত নেয় না; মেয়েরা ২/১ ছিঁড়ে নেয়, হাতে রাখে; নেয়া ঠিক হবে না।

ডাক্তারের অফিসে গেলাম; স্ত্রীর চোখ পরীক্ষার জন্য ঘন্টা খানেকের বেশী সময় লাগবে; আমি ভাবলাম গাড়ীতে গিয়ে বসি, একটা বইয়ের কিছু পাতা দেখার দরকার ছিলো। গাড়ীতে কাছে ফিরে এসে দেখি কিশোরী বারান্দায় নেই; তবে, দোতালার ব্যালকনিতে ১৫/১৬ বছরের একটি বালক বাইনোকুলার হাতে পাইন বনে কি যেন দেখছে; মেয়েটার মতো ব্লন্ড চুল, মেয়ের ভাই হবে; আমাকে দেখে সে ঘরে চলে গেলো। আমি গাড়ীতে প্রবেশ করার আগে স্ত্রীর জন্য একটা ফুল ডাঁটাসহ ভেংগে নেয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বুনো সুর্যমুখীর বাকল পাটের বাকলের মত, ছেঁড়া অসম্ভব; আমি চেষ্টা করেই যাচ্ছি। এমন সময় দেখলাম কিশোরী কাঁচের স্লাইডিং দরজা দিয়ে আমাকে দেখছে। ঝোপের কারনে, আমার বাকল ছেঁড়ার কসরত তার চোখে পড়ার কথা নয়। আমি গাড়ীতে গিয়ে, পেছনে রাখা একটা বড় কাঁচি নিয়ে এলাম।

ফুলের ডাঁটা কাটতে যাবো, ঠিক এমন সময় দেখলাম, ২ জন মহিলা একটা ছোট বাচ্চাসহ এদিকে আসছে; আমি তাড়াতাড়ি একটা কাঁটা গাছের ডাল ট্রিম করা শুরু করলাম; তারা খুবই মন্দগতিতে হাঁটছে, আমি ট্রিমিং চালিয়ে যাচ্ছি; পাশ দিয়ে যাবার সময় হ্যালো বললাম; তারা উত্তর দিয়ে নিজের পথে চলে গেলো। ইতিমধ্যে, কিশোরী ঘর থেকে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে। আমাকে প্রশ্ন করলো:
-তুমি ওখানে কি করছ?
-আগাছা ট্রিম করছি! তুমি আমাকে হ্যালো টেলো না বলে, প্রশ্ন করছ কেন?
-সরি, হ্যালো, কেমন আছো?
-ভালো, এবং তুমি?
-ভালো! আমি জানতে চাই, তুমি কাঁচি হাতে ওখানে কি করছ?
-আগাছা ট্রিম করছি, আমি আবারো বললাম।

-তোমার কি আগাছা ট্রিম করার কথা?
-তুমি চাইলে, আমি তোমার চুলও ট্রিম করে দিতে পারবো!
-ঐ কাঁচি দিয়ে তুমি চুলও ট্রিম করতে পার? আমার সন্দেহ হচ্ছে তোমাকে!
-অবশ্যই আমি তোমার চুল ট্রিম করতে পারবো; যদিও এর আগে আমি কখনো করিনি।
-আমার মনে হয়, তোমার এখান থেকে চলে যাওয়া দরকার; না হয়, আমি মাকে ডাকবো!
-তোমার মা বাসায় নেই, উনি কাজে গেছেন!

মেয়ে থতমত খেয়ে গেলো! এবার দোতালার দিকে হাত তুলে বললো,
-উপরে আমার ভাই আছে, তাকে ডাকবো।
-তোমার ভাই বাইনোকুলার হাতে পাশের বাড়ীর মেয়ে দেখছে, ডাকলে তোমার উপর রাগান্বিত হবে!
-আমার ভাই কোন মেয়ে দেখছে না, সে পাশের গাছে পাখী দেখছে।
-সে কোন পাখী দেখছে, সেটা আমি জানি; ছেলেরা এক সময়ে মেয়েদের পাখী, হানি, ইত্যাদি নামে ডাকে; কিছুদিন পরে, কোন ছেলে তোমাকেও পাখী ডাকতে পারে।

তাকে রাগান্বিত মনে হলো না; তবে, সে সুবিধা করতে পারছে না, একটু হতাশই হলো। এই সুযোগে আমি ২টা ফুল কেটে ফেলেছি; ঝোপের উচ্চতা আমার বুক অবধি হওয়ায় ওপাশ থেকে সে দেখতে পারার কথা নয়। আমি বললাম,
-মনে হয়, কে যেন দরজার বেল বাজায়েছে!
সে স্লাইডিং দরজা দিয়ে ভেতরে গেলো; আমি এই সুযোগে, ফুল ২টিকে গাড়ীর ভেতরে রাখলাম। সে ফিরে এসে বললো,
-তোমার কানে সমস্যা আছে?
-না, কানে নয়, চোখে সমস্যা আছে!

সে বারান্দার পাশে, ঘাসে নেমে ভাইকে ডাকলো:
-মিচ, তুমি একটু নীচে আস।
মিচের খবর নেই; সে আবার ডাকলো। এবার মিচ ব্যালকনিতে আসলো। আমি হাত নেড়ে দিলাম। কিশোরী তার ভাইকে বললো:
-এই জেন্টেলম্যান এখানে কি করছে কে জানে! লোকটাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে।
-তুমি অকারণে দুনিয়ার সবাইকে সন্দেহ করার শুরু করেছ; অকারণে মানুষকে বিরক্ত করিও না।
ছেলেটি ঘরে চলে গেলো। আমি বললাম,
-তুমি মনে হয় ৯৯ পয়সার ডিটেকটিভ সিরিজের বই পড়?
-আমি ডিটেকটিভ বই পড়ি; তবে, সেগুলো ৯৯ পয়সার সিরিজের নয়, সেগুলো দামী লেখকের!
-বুঝেছি, তুমি পুরাতন বই কেনো!
তুমি কিছু বুঝনি; তবে, তোমাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে; কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে এখানে!

সে হতাশ হয়ে ঘরে চলে গেলো; আমি গাড়ীতে বসে বইটা দেখছি; এবার আমি তার উপর নজর রাখছি। মনে হয়, সে গ্লাসে ঠান্ডা চা, বা কোন পানীয় খাচ্ছে, স্লাইডিং দরজার ওপাশ থেকে আমার দিকে খেয়াল রাখছে। প্রায় ৫০/৫৫ মিনিট পর আমার স্ত্রী এলো। এবার কিশোরী আবার বারান্দায় এলো। আমি পার্কিং থেকে বের হওয়ার সময়,গাড়ীর দরজার কাঁচ নামায়ে তাকে একটা সুর্যমুখী ফুল দেখায়ে হাত নেড়ে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১২
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×