একটা স্বাভাবিক লজিক হলো, পৃথিবী যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে, তার বিপরিত প্রক্রিয়ায় উহা ধ্বংস হবে! কোন প্রক্রিয়ায় পৃথিবী নামক গ্রহটি সৃষ্টি হয়েছে বলে আপনার ধারণা? এই গ্রহের সৃষ্টি সম্পর্কে আপনার যেই ধারণা, উহার ধ্বংস নিয়ে আপনার ধারণা অনেকটা সেই রকম, বা কাছাকাছি হবে।
পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যাটি আপনি সহজে বুঝেন ও আপনার কাছে গ্রহনযোগ্য? বিশ্বের সব মানুষ, সব জাতি জ্ঞানের দিক থেকে একই লেভেলে নন, কেহ স্যাটেলাইট বানাচ্ছেন, কেহ উহা কিনছেন, অনেকের কাছে স্যাটেলাইট কেনার পয়সা নেই; সবাই কিন্ত একই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না, বা একই ব্যাখ্যা বুঝবেনও না; আসলে, এই ব্যাপারে, সবার বুঝার ক্ষমতা একই লেভেলে নেই!
পৃথিবীর সৃষ্টি কিভাবে হয়েছে, কোন জাতি দেখেননি; ইহার ধ্বংস কিভাবে হবে, কেহ দেখবেন না; মানব সমাজের শুরু থেকেই নিশ্চয়ই, পৃথিবীর সৃষ্টি ও ধ্বংস নিয়ে মানুষ নিজের লব্ধজ্ঞান থেকে ব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন; সেসব ব্যাখ্যা মানুষের জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধির সাথে, সময়ের সাথে রিফাইন হয়ে আসছে; সামনের দিন গুলোতে এই ব্যাখ্যা আরো রিফাইন হবে, এতে আরো ভাবনা যোগ হবে। তবে, মানুষ যখন মানুষ চাঁদে যেতে সক্ষম হয়েছেন ও অন্য গ্রহে নিজেদের নির্মিত যান পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন, এই সময়ের ব্যাখ্যাগুলো প্রায় পরিপুর্ণতা পেয়েছে বলে ধরে নেয়া সম্ভব।
পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে সুর্য নামক তারকাটির দেহ থেকে; উহা ৪.৫ বিলিয়ন বছরের বিবর্তনের মাঝ দিয়ে গিয়ে, আজকের এই অবস্হায় আছে; এই অবস্হা থাকবে না আরো ২/১ বিলিয়ন বছর পর, তখন অনেক বদলে যাবে। সুর্য নামক তারকাটির সৃষ্টি হয়েছে ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে, উহার সেন্টারে হাইড্রোজেন গ্যাস জ্বলছে, সেখান থেকে আলো ও তাপ উৎপাদন হওয়ায়, পৃথিবীতে জীবনের সৃষ্টি হয়েছে।
কারা কিভাবে এসব হিসেবে করে বের করছে? যাঁরা রেল-ইন্জিন বানায়েছেন, যাঁরা গাড়ী বানায়েছেন, যাঁরা উড়োজাহাজ বানায়েছেন, যাঁরা ১২০ তলা বাড়ী বানায়েছেন, যাঁরা রেডিও টেলিভিশন বানায়েছেন, যাঁরা কম্প্যুটার বানায়েছেন, যাঁরা এসব অংক জানেন, যাঁরা এসব জ্ঞানের অধিকারী তাঁরাই এসব হিসেব করছেন। আমরা আকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়েছি; কিন্তু উহা আমরা বানাইনি; কারণ, আমরা সেইসব অংক, সেইসব পদার্থ বিজ্ঞান জানি না। আমরা সেইসব অংক জানি না বলে, আমাদের স্যাটেলাইট কি মিথ্যা হয়ে গেছে, আকাশে উড়ছে না?
সুর্যের সেন্টারে হাইড্রজেন জ্বলে, উহা ভয়ংকর ভয়ংকর উত্তপ্ত হিলিয়াম গ্যাসে পরিণত হচ্ছে ও সুর্ষের চারিদিকে জমা হচ্ছে, এ্তে সুর্যের আয়তন ও আকর্ষণ ক্ষমতা বাড়ছে; একই সাথে সুর্যের প্রখরতা বাড়ছে প্রতি বিলিয়ন বছরে শতকরা ১০ ভাগ; এতে একদিন সুর্য তার কাছাকাছি গ্রহগুলোকে নিজের বুকে টেনে নিতে পারে। অথবা সুর্য নিজেই জ্বালানীর অভাবে নিবে যাওয়ার অবস্হার দিকে গেলে সৌরজগতের গ্রহগুলো কক্ষচ্যুত হয়ে মহাশুন্যে ভাসতে গিয়ে ধ্বংস হবে। এই মহাবিশ্বের অন্য কোন তারকার ধ্বংসের সময়, উহার কোন গ্রহ, উপগ্রহ কক্ষচ্যুত হয়ে আমাদের সৌরজগতে ঢুকে আমাদের সৌরজগতের ভারসাম্য নষ্ট করলে, বা আমাদের গ্রহের সাথে ধাক্কা খেলে, আমাদের গ্রহের পতন হতে পারে।
মানব জাতি আমাদের গ্রহের ধ্বংস দেখার সম্ভবনা নেই বললেই চলে; কারণ, সৌরজগতে পরিবর্তন ঘটছে মিলিয়ন, বিলিয়ন বছর পরে; মানুষ মাত্র ৩/৪ লাখ বছর এই গ্রহে আছেন, হয়তো আরো আরো আধা মিলিয়ন বছর টিকে থাকতে পারেন; এই সময়ের মাঝে আনবিক বিস্ফোরণ, জেনেটিক সমস্যা, পরিবেশ দুষণের কারণে, বায়ুমন্ডলের পরিবর্তনের ফলে মানব জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৯