somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা গানে ভুল উচ্চারণ

১২ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার একটা (বদ)অভ্যাস হল কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা। ওয়াকম্যান দিয়ে সেটার শুরু যা কিনা এখন কম্পিউটারেও চলছে। পরিচিত অনেকেই বলে যে হেডফোন দিয়ে বেশিক্ষণ তারা গান শুনতে পারেনা, মাথা ধরে যায়। আর আমার মনে হয় হেডফোন দিয়ে শুনবার সময় যেহেতু বাইরের কোন শব্দ আর কানে ঢুকতে পারেনা, গান বা কবিতার প্রতিটি কথা, মিউজিকের প্রতিটা বিট শুধু কানে না, অন্তরের অন্তঃস্থলে গিয়ে ঢুকে এবং গেঁথে যায়। এতে করে হেডফোন দিয়ে শুনবার মজাটাই আলাদা। ভেবে দেখুন, কোন একটা গান হয়তোবা বহুদিন যাবতই শুনে আসছেন, হতে পারে সেই ছোটবেলা থেকে; কিন্তু বেশিরভাগ গানেরই প্রথম কয়েকটা লাইন ছাড়া বেশী দূর আর এগুতে পারবেন না, সম্পূর্ণ কথাগুলি মনে নেই। হেডফোন দিয়ে শুনলে নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগের সাথে শোনা হয় বলে পুরা গানটাই মনে দাগ কাটে আর সেই সাথে মুখস্ত ও হয়ে যায়।

এভাবে গান শোনার কারণেই হয়তোবা আমার পছন্দের বেশ কয়েকটা গানের কিছু ত্রুটি কানে বাজার পর থেকে এই গানগুলি এখন শ্রুতিমধুর না হয়ে শ্রুতিকটু হয়ে গেছে।

মিলিয়ে দেখুন তোঃ

মনপুরা ছায়াছবি
কৃষ্ণকলি’র প্রথম এলবাম সূর্য্যে বাঁধি বাসা’র গানগুলি শুনবার পর থেকেই তার গানের ভক্ত। ওই গানগুলি শুনে মনে হচ্ছিল এক ঝলক মুক্ত বাতাস শরীরে পরশ বুলিয়ে গেল বুঝি।
সঙ্গত কারণেই মনপুরা ছবির এ্যালবামে কৃষ্ণকলির কাছ থেকে প্রত্যাশা কিছুটা বেশীই ছিল। অন্যদের কথা জানিনা, তবে আমি হতাশ হয়েছি।

যাও পাখী বল তারে
সোনার পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখেছিলেম দ্বারে
যাও পাখী বল তারে
সে যেন ভুলেনা মোরে।


গানটা শুনে দেখুন, কৃষ্ণকলি তার গাওয়া ২টা গানেই দ্বারের পরিবর্তে “নাড়ে” উচ্চারণ করেছেন। দ্বারে’র জায়গায় নাড়ে এখানে কতোটা প্রযোজ্য আমার মাথায় ঢুকে না।


নিথুয়া পাথারে

মনপুরা’র আরেকটা জনপ্রিয় গান ফজলুর রহমান বাবু’র গাওয়া



নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে
ধর বন্ধু আমার কেহ নাই
তোল বন্ধু আমার কেহ নাই।।

চিকন ধুতিখানি পড়িতে না জানি
না জানি বান্ধিতে কেশ
অল্প বয়সে পিরীতি করিয়া
হয়ে গেল জীবনেরও শেষ।।

প্রেমের মুরালী বাজাতে নাহি জানি
না পারি বান্ধিতে সুর


নেমেছি, বাজাতে, হয়ে – এসব শব্দ চলিত ভাষার, আর করিয়া সাধু ভাষার (‘করে’ চলিত ভাষা)।

সেই ছোটবেলার প্রাইমারী স্কুলের পরীক্ষার সময় থেকে দেখে আসছি যে প্রশ্নপত্রে একটা সতর্কবাণী ছাপানো থাকত – “সাধু এবং চলিত ভাষার মিশ্রণ দূষণীয়”। তো, মনপুরার সঙ্গীত পরিচালক এমনকি খোদ পরিচালকও এইসব ভুল ত্রুটি ধরতে পারলেন না, নাকি তারা নিজেরাই এসব জানেন না ?



অনিলা নাজের কয়েকটি গান


কে বাশি বাজায়রে
কে বাশি বাজায়রে
মন কেন নাচায়রে
আমার প্রাণ যে মানেনা
কিছুই ভালো লাগেনা

ওই বাশি কি বিষের বাশি তবু কেন ভালবাসি
লগ্ন ভোরে আড়াল থেকে দেখেছি পোড়া হাসি
সে যে হৃদয় কখন করলো হরন
কিছুই জানিনা
আমার প্রাণ যে মানেনা
কিছুই ভালো লাগেনা
............

শুনে দেখুন অনিলা উচ্চারণ করেছেন ‘হনন’ যার অর্থ হত্যা করা, যেখানে ‘হরন’ মানে তো চুরি করা, যা কিনা গানের বাকী কথাগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা, লাকী আখন্দের গাওয়া অরিজিনাল গানেও কিন্তু “হরন”ই গেয়েছেন।



থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার
শেষ চিঠি

আর একটা দিন বেশী
বললে থাকবে কি?
একটু দাঁড়াও, শেষ চেষ্টা করে দেখি –
একটা গল্প, একটা কথা বলার
আছে যে বাকী !

............

আর অনিলা গেয়েছেন ‘বলতাম’ যেখানে অপুও গেয়েছেন ‘বলার’।

আমেরিকাতে বসবাসকারী উচ্চশিক্ষিত এমন শিল্পীদের কাছ থেকে সঠিক উচ্চারণ বা শব্দ আশা করাটা নিশ্চয় অযৌক্তিক না।




ভাবে মন অকারণ সারাক্ষণ – তাপস ft তিন্নি
এলবামঃ যাবি যদি চল

স্বপ্ন গুলো সত্যি হয়ে, যেন মনেতে উঁকি দেয়
শিশির ভেজা এই মনটা আমার, লুকোচুরি খেলে নীলিমায়

যেন স্বপ্নে হারাই, আমি স্বপ্ন কুঁড়াই
হৃদয়ে সুখের অনুরন
ভাবে মন অকারণ সারাক্ষণ, অনুভবে সুখের আলোড়ন।


আকাশ হাসে আমার সাথে, বৃষ্টিরা গায় অবিরাম
ঝিনুক ফোটা সাগর পাড়ে, ঢেউয়ের তালে দোলে প্রাণ

............

আর আমাদের শিল্পী গেয়েছেন ‘অভিরাম’ যার অর্থ হচ্ছে সুন্দর, যেমন নয়নাভিরাম, কিন্তু অভিরাম শব্দটি এখানে প্রযোজ্য নয়।




২ টি জনপ্রিয় ভারতীয় বাংলা গান


স্বপ্ন দেখবো বলে (মৌসূমী ভৌমিক)
আমি শুনেছি সে দিন তুমি
সাগরের ঢেউয়ে চেপে নীল জল দিগন্ত ছুয়েঁ এসেছ
আমি শুনেছি সেদিন তুমি
নোনা বালি তীর ধরে বহু দুর বহু দুর হেটে এসেছ

.........

তাই তোমাদের কাছে এসে আমি দুহাত পেতেছি
তাই স্বপ্ন দেখবো বলে আমি দুচোখ পেতেছি।।



গানটিতে শিল্পী ‘দুহাত’ এর জায়গায় ‘ভুল হাত’ না কি গেয়েছেন সেটা স্পষ্ট নয়, তবে আমার কানে সেটা দুহাত বলে শুনায়নি। আপনারাও শুনে দেখুন।






আমি তো ছিলাম বেশ নিজের ছন্দে
ছবিঃ সেদিন চৈত্রমাস
স্বাগতলক্ষ্মী দাসগুপ্তা ও নচিকেতা



আমিতো ছিলাম বেশ নিজের ছন্দে
সকালের রোদে আর মাটির গন্ধে
জৈষ্ঠের তাপে আর শ্রাবণের জলে
সবুজ শেওলা ঘেরা দিঘীর অতলে
কোথাও ছিলেনা তুমি, কেন তুমি এলে
কেন গান এনে দিলে, কেন এনে দিলে

.........



প্রথমে শিল্পী স্বাগতলক্ষ্মী দাসগুপ্তা ‘দিলে’র পরিবর্তে ‘নিলে’ গেয়েছেন যদিও গানের বাকী অংশে একই শব্দের উচ্চারণটা ঠিকভাবেই করেছেন।


ভারতীয় এই দুই শিল্পীর ভুল উচ্চারণের ব্যাপারটা তারা নিজেরাই দেখবেন। গানগুলির কথা প্রাসংগিকভাবে এখানে উল্লেখ করা হল মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১১ দুপুর ১:৫৩
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×