মশককুলকে প্রতিরাত্তে গ্যালন গ্যালন রক্ত দিতে কোন আপত্তি আমার কোনকালেই ছিলনা। কিন্তু গায়ে আপসে সুই ফুটিয়ে রক্তদান ,ওরে বাবা !
কিন্তু হঠাৎ করেই ভ্যাম্পায়ারদের এক টি দলের খপ্পরে পড়ে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেই। তবে পাঠকদের কাছে এই ভাম্পায়ারদের পরিচয় দেবার আশা রাখছি, ভয় পাবেন না বোধকরি।
অথঃ ভ্যাম্পায়ার সমাচারঃ বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের বিভিন্ন সংগঠণ আছে যার মধ্যে ' বাঁধন' অন্যতম। এর নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা অন্যের দেহের রক্তকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তির ন্যায় বিবেচনা করে তের সদ্গতির জন্য সদা তৎপর । এই বান্দাদের বিশেষত্ব হল এই যে তারা রক্ত নিয়ে ফ্রিজে রাখার ঝামেলায় যাবেন না, সোজা গরম গরম transfer করার ব্যবস্থা করে ক্ষান্ত হবেন।রক্ততো আর হটকেক না , আর তোরাও ব্যবসা করিস না বাপু।এদেরই এক কর্মী রক্তদানের বিনিময়ে রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে সামান্য জলপান করতেও রাজি হননি , বরং বলেছেন- 'আপনার সাথে আমার কোন বাণিজ্য নাই! ' ( নামটা গোপন রাখলাম , সংগত কারণেই...) আর এভাবেই তারা বছরে হাজার হাজার ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে সাধরণ - অসাধারণ সবধরনের রোগীদেরকে।এহেন রক্তলোলুপ পোলাপাইনদের ভ্যাম্পায়ার না বলে উপায় আছে?
যাই হোক আমি অতোটা মহৎ নই।সুতরাং রক্ত চাইতে এলে মুখে কথা সরে না। ফস করে বলে বসি- ' ভাই,প্রথমবার রক্ত দিয়ে শারীরিক কোন ক্ষয়ক্ষতির শিকার না হলেও( আসলে নাদুস-নুদুস এই বান্দার সেই কথা বলার কন chane ই নাই) মানসিক problem হয়েছিল।' তবু বন্ধু ব. (মাইরের ভয়ে পুরা নাম চেপে গেলাম) একদিন গছিয়ে দিল ফিরোজ ভাইয়ের কাছে,কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার ভান করলেও গুঁতা খেয়ে উঠতেই হল, ধানাই পানাই চলল না।
গন্তব্যস্থলঃ কোয়ান্টাম ফাউণ্ডেশ্ন।
ভাড়া ২৫ টাকা,যাব রিক্সায় ।
আরহী ত্রিরত্ন; আমি,ফিরোজ ভাই( এই কাহিনীর ভামপায়ার) এবং আরো একজন রক্তদাতা হাজী মহম্মদ মহসীন( সবুজ ভাই)।
' ক্যান্সারের রোগী,রক্ত দিয়ে লাভ কী? খেল খতম তো হবেই ।'
রিক্সায় এমন মনভাব পাত্তা পেলনা ।
খুব ভাবসাব নিয়ে নিয়ে ভিতরে ঢোকার পরে রীতিমত VIVA শুরু হল। কবার রক্ত দিয়েছি,রোগ-বালাই আছে কিনা,বিড়ি-তারি খাই কিনা,
অষুধ-পত্তর কি গিলছি ইত্যাদি ইত্যাদি। আরে বাপু , আমাকে দেখেও বুঝিস না এই বান্দা বিড়ি-তারি খাবার যোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। দুর্ভাগ্য ক্রমে কোন রোগ-বালাই নেই ,নইলে কি এ গেরোয় পড়ি! সে বান্দা হঠাৎ আর্কিমিডিস style এ বলে উঠল, আমার নাকি low-pressure ।আরে বাপু pressure কমতো কি হয়েছে, বাড়িয়ে নিতে কতোক্ষণ, compressor use কর, রক্ত নিবিই যখন, অত ঝামেলা কেনে বাপু।কিন্তু আমাকে ধরিয়ে দেয়া হল DRINKS হালকা সবুজাভ নীল বর্ণের মিষ্টি তরল পদার্থ।সবুজ ভাই সবুজ রং য়ের পানীয় না পেয়ে মন খারাপ করল বলে মনে হল, তবে গবেষ্ণায় ক্ষান্তি দিল না।chemical এর ছাত্র বলে কথা। বিস্তর গবেষণা করে জিনিসটাকে ' অজানা প্রকৃতি'র তরল বলে রায় দিলাম আমরা।
হঠাৎ মনে হল ,রক্ত,সেটাওতো আজানা প্রকৃতির তরল, অন্তঃত আমাদের মত আমজন্তার কাছে।বছর দুই -তিন আগে পাঠ্যবইয়ে কি পরেছি তা কি আর মনে আছে?ঈষৎ ক্ষারীয় লাল বর্নের তরল পদার্থ,শরীরের ভেতর ঘুরেফিরে দল খায় এর বেশী কিছু মনে নাই। কিন্তু এ ছাড়া যে কেউ বাঁচে না সেতো জানা কথা। তখোনি মনে পড়ল বাঁধনের স্লোগান-' একের রক্তে অন্যের জীবন,রক্তই গড়ে দেয় আত্মার বন্ধন'। ( অবশ্য অনেকে প্যারোডী করে বলে - 'অন্যের রক্তে আমাদের পুষ্টি,আমরা ভাম্পায়ারের গুষ্ঠী'!!!) যাইহোক ঠিকঠাক মত রক্ত দিয়ে হলে ফিরলাম পাঁচফুট মানুষ গর্বে দশ হাত হয়ে।
সবশেষে শুধু এই বলতে চাই, স্বেচ্ছা রক্তদান করে আপনি বাঁচাতে পারেন অসংখ্য মানুষকে।আপনার সামান্য সহানুভূতি যদি অন্তিম যাত্রীকে ভরসা যোগায় ,তবে কি আপনি মানব জন্ম সার্থক মনে করবেন না?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১০ রাত ১১:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



