somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি খাচ্ছি?ঃ X(X(মুরগিতে বিষক্রিয়ার উপাদান থাকার প্রমাণ পেয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা

২৬ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

X(X(X(
বড় বিচিত্র এই দেশ ! মানুষের লালসা কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকলে মনুষ্যত্বের সাথে এমন নির্লজ্জ আপোষ করা যায় তা আমাদের জানা নেই । ট্যানারী শিল্পের উচ্ছিষ্ট বর্জ্য আমরা প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়াচ্ছি মুরগী কিংবা মাছকে! সম্মানিত পাঠকদের কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন, ‘তাতে আমাদের কি আসে যায়’; যারা জানেন না, তাদের জন্যেই এই লেখা। :|:|

ঘটনাটা কানে এসেছিলো আগেই। তাই বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের একদল উৎসাহী ছাত্র গিয়েছিলেন হাজারীবাগের চামড়ার ট্যানারীতে সরেজমিনে দেখতে। সেখানে গিয়ে যা জানা গেলো তা মোটামুটি এরকম- পশুর চামড়া সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করতে অনেক গুলো ধাপে অনেক রকম রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে হয়; তবে এর মধ্যে ক্রোমট্যানিং ধাপটি বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্য। এইধাপে চামড়ায় অধিক পরিমাণে ক্ষারীয় ক্রোমিয়াম সালফেট ব্যবহার করা হয়। আগে পরে যে সকল রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় তাতে ক্রোমিয়াম দূরীভূত হবার কথা না । প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়া কাটার সময় যে সকল ছোট খন্ডাংশ তৈরি তাকে শেভিং বর্জ্য বলে।

এরপর এই শেভিং বর্জ্য (শেভিংবর্জ্যে প্রায় ২.৪৯% ক্রোমিয়াম থাকে {Hossain et al.2007} ) কিনে নিয়ে যায় কিছু লোভী মানুষ (?) । সালফিউরিক এসিড সহযোগে সিদ্ধকরে গাঁদটুকু তুলে নিয়ে শুকিয়ে ফেলা হয়। যা শুটকি নামে পরিচিত এদের কাছে।শুটকি গুঁড়া করে মিশিয়ে দেয়া হয় মুরগির খাবারের সাথে একটি উপাদান হিসেবে।আর তরল বর্জ্য ফেলার জন্য তো বুড়িগঙ্গা আছেই!কি চমৎকার! X(X(X(



চিত্র-১ঃ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শুটকি তৈরি


পুরো প্রক্রিয়ায় ক্রোমিয়াম অপসারণের কোন ব্যবস্থা চোখে পড়ল না এবারেও ( আসলে ক্রোমিয়াম অপসারণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও ব্যয়সাধ্য ), :-/:-/অথচ এই ক্রোমিয়াম ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে বলে জানা গেছে। কারণ মুরগীর (বা মাছ) দেহে যে ক্রোমিয়াম প্রবেশ করে তার একটা অংশ আপনার শরীরেও প্রবেশ করবে খাবারের মাধ্যমে । পুরো প্রক্রিয়াটা চামড়াশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের অজানা নয় বলেই সরেজমিনে দেখা গেছে। সেই কারণেই উপরে মানুষ শব্দের পরে প্রশ্নবোধক চিহ্ন।তাহলে কি আমরা বিবেককে মুনাফা লোভের কাছে বন্ধক রেখেছি??

২ নং ছবিতে দেখা যাচ্ছে কিভাবে চামড়ার উচ্ছিষ্ট থেকে শুটকি তৈরি করা হয়।



চিত্র-২ঃ শুটকি তৈরির প্রক্রিয়ার প্রবাহচিত্র
অর্থলোভ কিভাবে বিবেককে চুপ করিয়ে রাখে তা বুঝতে নিচের তথ্যগুলোতে চোখ রাখুন।

চার্ট-১ঃ শুটকির মূল্য



শুটকির বিক্রয় মুল্য
( ডিলারদের কাছে যখন প্রস্তুতকারীরা বিক্রয় করে ) ১০-১২ টাকা
শুটকির বিক্রয় মুল্য
( ডিলাররা যখন স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করে ) ২৫-৩০ টাকা
শুটকির বিক্রয় মুল্য
( যখন ডিলাররা বিভিন্ন কোম্পানিতে সাপ্লাই দেয় ) ২০-২২ টাকা
MEAT BONE থেকে উৎপাদিত শুটকির মূল্য (সম্ভাব্য) ২৫০-৩০০ টাকা

এছাড়া চামড়ার শেভিং বর্জ্য থেকে উৎপাদিত শুটকিতে প্রোটিনের পরিমাণ সম্ভাব্য অন্যান্য বিকল্প থেকে ২-৩ গুণ বেশী বলে জানা গেছে।(১)
এসকল কারণেই বিষাক্ত ক্রোমিয়ামযুক্ত শুটকি ব্যবহার করছে আমাদের পোল্ট্রি মালিকরা। X(

আশার কথা ,পুলিশ সম্প্রতি কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতার কারণে তাতে ভরসা বাড়ে না। আর এটা তাদের ব্যবসা হয়ে দাড়িয়েছে।তাই আবার ছাড়া পেয়ে এসে তারা একাজ ছেড়ে দেবে সে আশায় গুড়ে বালি।
আমাদের দেশটা গরীব আর মানুষগুলো আরও গরীব। তাই নিচের বিষয়গুলো ভেবে দেখা যেতে পারে-
১.ট্যানারী শিল্পের উচ্ছিষ্ট যাতে কোনক্রমেই মুরগীর খাবার হিসেবে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য যেতে না পারে সেইজন্য কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।
২.মুরগী/মাছের খাবার তৈরীর ফ্যাক্টরীগুলোতেও নজরদারি রাখতে হবে।
৩. কাজ করার পরিবেশ সুস্থ মানুষের উপযুক্ত করতে হবে (এমন পরিবেশে পশুও থাকতে রাজি হবে বলে মনে হয় না । খানিকক্ষণ ঘুরে এলে ফেরার পথে ডাস্টবিনের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না !)
৪. এমন পরিবেশে যারা কাজ করতে বাধ্য হয় তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা জরুরি।যেমনঃ এসিড handling এর ক্ষেত্রে কোন সতর্কতার বালাই নেই ,যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৫. এছাড়া সবগুলো চামড়ার কারখানায় ইটিপি (বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা) চালু করতে হবে। এ ব্যাপারে বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগ সহায়তা দেবার যোগ্যতা রাখে; কিছুলোকের লাভের গুড়ে কিঞ্চিৎ ঘাটতি পড়বে এই যা!
৬. ওখানে যারা কাজ করেন তাদেরকে এসবের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।

সবকিছুর পরেও কিছু কথা থেকে যায় যা না বললেই না।আর তা হলো, যে মানুষগুলো অর্থের লালসায় এতো জঘন্য কাজ করতে পারে তারা খুব সহজে এহেন কুকর্ম ছাড়বে না।আবার গরীব শ্রমিকদের পেটের দায় না মিটলে তা ছাড়ার কথা ভাবাও বৃথা।তাই উচিৎ হবে মুরগীর এমন একটি খাদ্য প্রচলন করা যা একই সাথে তার আমিষের চাহিদা মেটায় এবং আর্থিকভাবে সহজলভ্য।তাহলেই সবাই সেই বিষাক্ত চামড়ার শুটকির উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাছাড়া আমরা এখানে কেবল একটা পদার্থের বিষক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি।এখানে অনেক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয় যার ক্ষতির মাত্রা ক্রোমট্যানিংয়ে ব্যবহ্রত ক্রোমিয়ামকে ছাড়িয়ে যাওয়া খুব অসম্ভব নয়।এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এগিয়ে আসার আহবান জানাই।তবে সতর্ক হতে হবে এখনই।নইলে অদূর ভবিষ্যতে পস্তানো ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না।


আরো রেফারেন্সঃ
১.Iftekhar M. Rafiqullah, Mohammad Ilias, M. Mozammel Hoq ( Dept. of Microbiology, University of Dhaka ) and A. M. M. Maruf Hossain ( Dept. of Soil, Water and Environment, Faculty of Biological Sciences, University of Dhaka )

পুনশ্চঃ বুয়েটের ল্যাবে বিষক্রিয়ার উপাদান থাকার প্রমাণ মিলেছে। পত্রিকায় প্রকাশের স্বার্থে তা এখানে দেয়া হলো না। সমগ্র কাজটি মনিটর করেছে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এসোসিয়েশন।

লেখাটি সচলায়তন ও আমার বর্ণমালাতেও প্রকাশ করা হয়েছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এসোসিয়েশন এর উদ্যোগে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:২৩
৬০টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×