somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোবাইলে প্রেম করার আগে পোস্টটি পড়ে নিন!!(বাস্তব অভিজ্ঞতা)

২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন নতুন যখন মোবাইল কিনেছিলাম মোবাইলটা টেপাই ছিল তখন আমার একমাত্র কাজ। কারন অকারনেই মোবাইলটা টিপতাম। বেশিরভাগ সময়ই খেলতাম গেমস কারন ঐ সময় মাল্টিমিডিয়া ফোন এভেইলেবল ছিলনা। একসময় বিরক্ত ধরে গেল গেমসের প্রতি। ভাবতে লাগলাম কিভাবে মোবাইলটাকে আরো সৃষ্টিশীল কাজে ব্যবহার করা যায়। তো ঐ সময়টাতেই একদিন এক বন্ধু এসে হাজির। সে অবশ্য আমার আগেই মোবাইল কিনেছিল। বলে রাখা ভাল, ঐ সময় মোবাইলই ছিল আড্ডার একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। কে কোন সেট কিনল, কে কোন কোম্পানীর সিম ব্যবহার করছে, কোন কোম্পানীর কলরেট কেমন, নেটওয়ার্ক কেমন এসব নিয়েই তর্ক-বিতর্ক।

তো সেদিন আড্ডার এক ফাকে বন্ধু ফিসফিস করে বলল, দোস্ত মাইয়ার নাম্বার লাগবো নাকি? আমি অবাক হয়ে বললাম, কোন মেয়ের নাম্বার? সে আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল, “আরে ব্যাটা আবুল, একটু স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা কর। বাচ্চাগোর মত মোবাইলে খেলছ গেমস। মোবাইলে যে কত কিছু করার আছে এই সম্পর্কে তোর কোনো ধারনা আছে ব্যাটা?” একথা বলেই সে তার মোবাইলের নাম্বার লিস্টটা আমাকে দেখাতে লাগল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় শ’খানেক মেয়ের নাম্বার তার সেটে সেভ করা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, দোস্ত এত মেয়ের নাম্বার দিয়া তুই কি করছ? সে আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল, “ঘ্যানঘ্যান করিছ না। নাম্বার লাগ্লে বল।“ আমি বললাম, মেয়ের নাম্বার দিয়া আমি কি করমু? তাছাড়া এদের কাউকে তো আমি চিনি না! আমার বন্ধু বিরক্তির স্বরে বলল, আরে ব্যাটা মাইয়া পটাবি। তাগোর লগে বন্ধুত্ব করবি। ডেটিং করবি। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, দোস্ত অপরিচিত একটা মেয়ে কি আমার সাথে কথা বলব? বন্ধু ঝাড়ি দিয়ে বলল, কেনরে ব্যাটা চুলকানি খালি পোলাগোই আছে, মাইয়াগো নাই?

যাই হোক ওর কাছ থেকে তিনটা মেয়ের নাম্বার নিলাম। ও শুধু তিনটা মেয়ের নাম বলতে পারল। আর কোনো তথ্যই নাকি তার জানা নাই। বন্ধু যখন চলে যাচ্ছিল আমি তাকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কয়টা পটাইলা দোস্ত? সে কোনো জবাব না দিয়েই চলে গেল।

সেদিন রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটা মেয়ের নাম্বারে এসএমএস করলাম-বন্ধুত্ত করতে চাই এসব হাবিজাবি লিখে। কোনো সাড়া পেলাম না। তারপর অন্য একটা মেয়ের নাম্বারে পাঠালাম তাতেও কোন সাড়া নেই। এভাবে সারারাত তিনটা মেয়ের নাম্বারেই এসএমএস মিসকল দিতেই লাগ্লাম। কোনো লাভ হল না। ক্লান্ত হয়ে অবশেষে ঘুমিয়েই পড়লাম।

সকালবেলা মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল। চোখ ডলতে ডলতে দেখি, তিন মেয়ের এক মেয়ে ফোন দিয়েছে। আমার খুশী আর দেখে কে!! মুখটা হাসি হাসি করে বললাম, হ্যালো!! ঐ হ্যালোই আমার শেষ কথা। মেয়েটা ফোন করে যে আমাকে কি ভাষায় গালিগালাজ করল সেটা জনসমুক্ষে বলতে পারবনা। তবে মেয়েদের মুখ যে এতটা খারাপ হতে পারে আমার ধারনাই ছিলনা। মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল।

যাই হোক নাস্তা টাস্তা খাওয়ার পর দেখলাম আন-নন নাম্বার থেকে একটা কল এসেছে। রিসিভ করে একটা ছেলের কন্ঠ শুনতে পেলাম। ছেলেটা আমাকে আমার নাম, ঠিকানা, কোথায় পড়ি-এসব জিজ্ঞেস করা শুরু করল। আমি যখন তার পরিচয় জানতে চাইলাম...সে বলল, “আমি তোর বাপ। আর যাকে মিসকল দিয়ে জ্বালাইছস সে তোর মা।“ এরপরই ম্যারাথন গালি শুরু করে দিল। আমি এক সময় আর সহ্য করতে না পেরে কলটা কেটেই দিলাম।

মনটা সেদিন প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছিল। এরকম ছ্যাব্লামী আচরনের জন্য নিজেকে নিজেই কিছুক্ষন গালাগালি করলাম। তারপর মনে মনে ঠিক করলাম আর কোনোদিন কোন অপরিচিত মেয়েকে এভাবে ডিসটার্ব করবনা।

সেদিন বিকেলেই কিছু বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি সেই তিন মেয়ের কোন এক মেয়ের নাম্বার থেকে ফোন। প্রথমে ধরলামই না। তারপর দেখি আবার কল দিছে। এবার ভয়ে ভয়ে ধরেই ফেললাম। আপ্নারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা...মেয়েটা যখন হ্যালো বলল সেই “হ্যালো” শুনেই আমি মোটামুটি কাইত। এত সুন্দর কন্ঠ আমি সেদিনই প্রথম শুনেছিলাম। মেয়েটি বলল, “আচ্ছা আপনাদের ছেলেদের কি মেয়েদের ডিসটার্ব করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই?আপ্নাদের জ্বালায় তো মোবাইল ফোন আর ব্যবহারই করা যাবেনা মনে হচ্ছে।“ আমি খুব নরম স্বরে বললাম, “আমি আসলে খুব দুঃখিত। আমি কথা দিলাম আপনাকে আর কখনো ডিসটার্ব করবনা।“ আমার কথা শুনে মেয়েটার কি হল কে জানে?? সে উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। একসময় হাসিয়ে থামিয়ে বলল, “আমি বোকা লোক খুব পছন্দ করি। আপনি মাঝে মাঝে ডিসটার্ব করলে আমি খুব একটা মাইন্ড করবনা।“

সেই থেকে শুরু। আমার চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারনা সব কিছুই তখন ঐ মেয়েকে ঘিরে। সারাদিন যে কত কথা বলতাম তার কোনো হিসাব নিকাশ ছিলনা। ঐ সময় মোবাইল কল চার্জও ছিল অনেক বেশী। টাকাও যাচ্ছিল পানির মত। সে নিয়ে মাথা ব্যাথাও ছিলনা। একসময় মনে হল মেয়েটার প্রেমেই পড়ে গেছি। মেয়েটাও যে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল বুঝতে পারতাম। অথচ মজার ব্যাপার হল মেয়েটার সাথে আমার তখনও দেখা হয়নি। একটা সময় মনে হল এই মেয়ে ছাড়া আমার চলবেই না। মনে মনে ঠিক করলাম যেদিন দেখা করব, সেদিনই ওকে প্রপোজ করব যা থাকে কপালে।

একদিন দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যদিও অনেকদিন থেকেই চেষ্টা করছিলাম তবে মেয়েটার টাল-বাহানার কারনে অনেক পরেই ডেইট ফিক্সড হল। ওকে বলেছিলাম, একটা শপিং মলের নিচে ওয়েট করতে। আমারই সেখানে আগে পৌছানোর কথা ছিল কিন্তু যানযটের কারনে দেরী হয়ে গিয়েছিল। ওর একটা নীল সেলোয়ার কামিজ পরে আসার কথা। শপিং মলের খুব কাছাকাছি যখন এসে পড়লাম, নীল সেলোয়ার কামিজ পরা একটা মেয়ে আমার চোখে পড়ল। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এই মেয়েই সেই মেয়ে। একটু দূরে সরে এসে ফোন করে সিউর হলাম যে এই সে মেয়ে যাকে আমি আজকে প্রপোজ করব বলে ঠিক করেছি। হৃদয়টা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছিল। কি করব কিছু ভাবতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল আকাশটা আমার মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে। একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। পাশের একটা দোকানে গিয়ে সিগারেট ধরালাম। মেয়েটাকে একটা ফোন দিয়ে বললাম, “হঠাত করে একটা ঝামেলায় পড়ে গেলাম। আজকে দেখা হচ্ছেনা। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।“ জবাবে ও শুধু একটা কথাই বলেছিল, “ইটস ওকে”

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৩২
৫৩টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×