somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর আত্মজৈবনিক রচনা - '' আমি ''

২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

একটি কিশোরীকে হকচকিয়ে দেবার জন্য আমার জীবনের প্রথম কবিতাটি ডাকে পাঠিয়েছিলাম সাপ্তাহিক 'দেশ' পত্রিকায় এবং কী আশ্চর্য, ছাপাও হয়ে গিয়েছিল!
সেই সদ্য স্কুল-উত্তীর্ণ বয়সে আমার সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করার জন্য তেমন আগ্রহ ছিল না। আমি ছিলাম বুভুক্ষু পাঠক এবং সুচতুর বইচোর, নিজে কখনও গ্রন্থ রচনা করব, এমন স্বপ্নেও ভাবিনি। কলেজে এসে কয়েকজন সহপাঠী ও বন্ধুকে দেখেছি কবিতা লেখার জন্য তারা অন্যদের কাছ থেকে কিছুটা খাতির পায়, তখন আমার মনে হয়েছিল, ও আর এমন কী শক্ত কাজ। আমিও পারি। কবিতা লিখে কফি হাউসের বন্ধুদের কাছে পাঠ করে বাহবা পেলেও তা কবি হিসেবে স্বীকৃতি পাবার মাপকাঠি ছিল না। তখন বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত 'কবিতা' পত্রিকায় মনোনয়নই ছিল সসম্মান স্বীকৃতি এবং সেখানে পাঠানো আমার প্রথম কবিতাই অল্পকালের মধ্যে মুদ্রিত হয়ে যায়। তারপর আর কবিতা থেকে সরে যাবার উপায় রইল না।
'দেশ' পত্রিকাতে কবিতা ছাপা হলেও, তাতে বিশেষ সম্মান ছিল না সে সময়। কারণ মুড়ি, পচা নারকেল ও মিছরির মতো কবিতাগুলো ভালো, মন্দ ও খুব খারাপের সংমিশ্রণ। সাগরময় ঘোষের সঙ্গে আমার মতো কয়েকজন অতি তরুণ লেখকের আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হবার ফলেই 'দেশ' পত্রিকায় কবিতা পায় সম্মানের আসন। আমরা প্রায়ই ফিসফিস করে সাগরময় ঘোষকে অনুরোধ করতাম, সাগরদা আপনি কবিতার জন্য আলাদা পাতা বরাদ্দ করুন! সাগরদা মেনে নিলেন। আলাদা কবিতার পাতা তো দিলেনই, কবিতার জন্য সম্মানদক্ষিণাও প্রবর্তিত হলো। সাগরময় ঘোষ প্রবাদতুল্য সম্পাদক, বহু বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও প্রখর দৃষ্টি, কিন্তু কবিতা বিচারের ব্যাপারে ছিলেন সংকুচিত, নির্বাচনের ভার দিতেন অন্যদের। যেমন আমি নিজেই অন্তত তিরিশ-পঁয়তিরিশ বছর 'দেশ' পত্রিকায় কবিতা নির্বাচন করেছি। আমার আগে ছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, কিছুদিনের মতো আনন্দ বাগচী, এখন যেমন জয় গোস্বামী। গদ্যের জগতে আকস্মিক প্রবেশের পর আমি আর ছুটি পাইনি। আমার প্রথম উপন্যাস 'আত্মপ্রকাশ'-এর আগে আমি 'দেশ'-এ একটিও ছোটগল্প লিখিনি। কিন্তু নিবন্ধ, রম্যরচনা লিখেছি বেশ কিছু, নীললোহিত ও সনাতন পাঠক নামে।
এছাড়া গ্রন্থ সমালোচনা, কখনও-সখনও ফিল্ম ও নাট্য-সমালোচনা। পরে এমনও হয়েছে, 'দেশ' পত্রিকার কোনো একটি সংখ্যায় আমার চারটি রচনা বেরিয়েছে, যেমন ধারাবাহিক উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, পুস্তক সমালোচনা। সম্পাদকীয় রচনা ধরলে আরও একটি। 'দেশ'-এর মুদ্রণ পদ্ধতিরও কত পরিবর্তন হয়েছে। আমি 'দেশ' পত্রিকার পাঠক থেকে লেখক হয়ে গেছি। এমনকি কবিতা বিভাগটি দেখাশোনা করছি। কিন্তু আমার চাকরিক্ষেত্র ছিল আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগ। তখন আনন্দবাজারের সর্বেসর্বা সন্তোষকুমার ঘোষ। আনন্দবাজার সংস্থার সম্প্রসারণের জন্য এঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এক সময় তিনি পরিকল্পনা করলেন, এই সংস্থা থেকে একটি সাহিত্য মাসিকও প্রকাশিত হবে, তার নাম তিনিই দিলেন, 'সানন্দা'। সে পত্রিকার প্রস্তুতি চলল। সন্তোষকুমার ঠিক করলেন, আমাকে আনন্দবাজার থেকে সরিয়ে এই নতুন পত্রিকায় স্থাপন করা হবে। সন্তোষকুমারই নেতা সম্পাদক, আমি তাঁর উপ-সহায়ক। সাগরময় ঘোষের সঙ্গে সন্তোষকুমার ঘোষের মৌখিক সুসম্পর্ক থাকলেও ভেতরে ভেতরে যে একটা ঠাণ্ডা যুদ্ধ চালু ছিল তা আমরা জানতাম। আমি সন্তোষকুমারের সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এই সময় একদিন সাগরদা আমাকে ডেকে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, তুমি ওই নতুন কাগজটায় যোগ দিচ্ছ?
এই প্রশ্নের মধ্যেই প্রোজ্জ্বল তাঁর অভিপ্রায়। সত্যি কথাটাও জানালাম, আমাকে সানন্দার সঙ্গে যোগ দিতে হচ্ছে। সাগরদা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, আমি অশোকবাবুকে বলে তোমাকে 'দেশ' পত্রিকায় আনিয়ে নিচ্ছি, তুমি আমার সহকারী হবে! তখন আমাকে উপলক্ষ করে সন্তোষকুমার ও সাগরময়ের মধ্যে ছোটখাটো একটি সংঘর্ষই ঘটে গেল। 'দেশ' পত্রিকার প্রতিই আমার পক্ষপাতিত্ব জেনে সন্তোষকুমার অভিমান ভরে আমার সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন ও নতুন পত্রিকার পরিকল্পনাও মুলতবি রাখেন। আমি অবশ্য পরে সন্তোষকুমারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি এবং 'সানন্দা' পত্রিকাও অন্য রূপ নিয়ে বেরিয়েছে।
['সাহিত্যের কোন শর্ত নেই' গ্রন্থ থেকে]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×