আমাদের অফিসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে সিকিউরিটি গার্ড। প্রত্যেকদিন অফিসে ঢোকার সময় নতুন একজনের মুখ দেখতে হয়। অনেক চেষ্টা করেও g4s ধরনের কোন কম্পানির সিডিউল পাইনি। যাই হোক এভাবেই কাটছিল দিন।
আমার একটা সমস্যা হচ্ছে বেশভূষা দেখলে কেউ পাত্তা দিতে চায়না, মানে কোঁচকানো শার্ট, ময়লা হয়ে যাওয়া প্যান্ট পরে দিব্বি অফিস করে যাই। (কাউয়ায় দেখছে অফিসে আমার হালত) হালকা "পাগলামির স্বভাব আছে" এই দৃষ্টিকোণ থেকে অফিসও ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে।
তো সেদিন সারে দশটার দিকে অফিসে ঢুকছি, সাধারণত গেট খুলে দিলেই আমি ঠুস করে ঢুকে পরি। তা আর হলোনা, পেছন থেকে হাত টেনে ধরায় থেমে গেলাম। তাকিয়ে দেখি নতুন এক গার্ড, আমাকে হল্ট করে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে। বললাম এখানেই চাকরি করি। বিশ্বাস করেনি সম্ভবত, তাই আই.ডি কার্ড চেয়ে বসল। মহা যন্ত্রণা, আই.ডি কার্ড সাথে থাকেনা প্রায় সময়েই। সেদিনও ছিলনা। উনিতো তখন দিল্লি জয় করে ফেলেছেন ভাব নিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করলেন। কোথায় থাকি, আসলে কার কাছে এসেছি ইত্যাদি ইত্যাদি। যতই বোঝাতে যাই, মানে না। এক পর্যায়ে মেটাল ডিটেক্টর বের করে আমাকে চেক করা শুরু করলেন।
হঠাৎ ওপরে তাকিয়ে দেখি আমাদের ড্যানিশ এডভাইসার বেটা খিক খিক করে হাসতেছেন আমার দুরবস্থা দেখে। মেজাজ পুরা স্ফুটনাঙ্কে, রাইগা মাইগা কিছু কইতে যামু, এডভাইসারে নাইমা আইসা আমারে উদ্ধার কইরা নিয়া গেল। সিঁড়ী দিয়া উঠতে উঠতে কয় "তোমারে বহুত বার কইছি এপিয়ারেন্স বদলাও, কথাতো কানে যায়না। আইজকা হইলো না??"
এই সব আমার নিত্য সঙ্গী। ব্যাংক ট্যাংকে গেলেও খুব একটা পাত্তা পাইনা। প্রায়ই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ফোন করে, ক্রেডিট কার্ডের অফার নিয়ে; অফিসে আইসা দেখা করতে চায়। মাঝে মাঝে বাধ্য হইয়া কাউরে আইতে কইতে হয়, আসেও ওরা। আমার রুমে ঢোকার পরেই প্রথম প্রশ্ন, আপনাদের উনি কোথায়? যখন শুনে আমিই সেই মানুষ, পুরা ফাটা বেলুনের মত চুপ্সায় যায়।
একদিন প্রাইম ব্যাংকের মিরপুর শাখায় গেছিলাম কি এক কাজে, ম্যানেজারের রুমে ঢোকার পর উনি সাথে সাথেই কাকে যেন ফোন করলেন। ফিস ফিস করে বললেও শুনতে পেলাম "এই সব মানুষকে আমার রুমে ঢুকতে দ্যান ক্যান?"। সেইদিন আসলেই লজ্জা পাইছিলাম। ইগোকে বাঁচাতেই পকেট থেকে ভিজিটিং কার্ড বের করে দেখাইছি। বেচারা থতমত খাওয়া চেহারা নিয়া পারলে তার নিজের চেয়ারে বসতে কয়.....
এই হইলো আমার কাহিনী। ক্যান জানি ছোটব্যালা থিকাই নিজে ব্যাপারে খুব বেশি উদাসীন। হাতের কাছে যেইটা পাই তাতেই গা হান্দায়া দেই। চুল আচড়ানো বা শেভ করা বহুত দূরের কথা।
অপমান অপমান। এই জীবন আর রাখপোনা
(এডিট কর্তে গেলেই পোস্ট নাই হইয়া যায় )
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৩