somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চোরাবালি-
পোষাক তৈরীর কারখানায় মাসিক বেতনে কামলা দেয় মাস শেষে মাইনের আশায়, যে মাইনে দিয়ে চলবে নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু একটা করার প্রচেষ্টা মাত্র। নিতান্তই সাদামাঠা গ্রাম থেকে আসা স্বল্প শিক্ষিত মানুষ।

যাচ্ছে কোথায় সাধের দেশ

০২ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ যদি স্বাধীন বলা হয় আমার মনে হয় তাতে স্বাধীনতা শব্দের অবমূল্যায়ন নয় বরং অপমানই করা হয়। আমরা সাধারণ তো বটেই ব্যবসায়ীরাও জিম্মি একটা গোষ্ঠীর হাতে আর সেটি হলো সরকারী চাকুরী গোষ্ঠী। আমাদের সর্বপ্রথমে নজরে আসে পুলিশ যারা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে বস্তুত পত্রিকার নিউজান্তে মনে হয় তাদেরই নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। যাকগে সেদিকে আমার লেখার উৎস না আমার উৎস্য অন্য জায়গায়। সেটি হল কাস্টমস বিভাগ। সরকারের এই খোদ রেভিনিউ বা রাজস্ব বিভাগে চলে এক এলাহি কান্ড কারখানা; তারা চলেন সর্বদা তাদের মত করে; কিছু বলা কওয়ার নেই কারো, আছে তো কলেমর ধার তাদের, "রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে"। প্রতিনিয়ত তারা রাজস্বের পরিবর্তে নিজস্ব নিয়ে ব্যস্ত এবং তার পরিমাণ রাজস্বের কয়েকগুন হয়তো বা। এখানে কিছু নিয়ম আছে যেমন কতটাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে চান, যত টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে চাইবেন বনিবনা করতে হবে তার ১/৩দিয়ে আপনি এবার যা ইচ্ছে করে যেতে পারবেন। এই সব রাজস্ব কর্মকর্তারা আপনাকে বাতলে দেবে কিভাবে রাজস্বের পরিবর্তে নিজস্ব দিয়ে সরকারকে ফাঁকি দিবেন। লিখতে গেলে অনেক বড় হয়ে যায় তাতে ব্লগে পাঠকের ধর্য্য হারায়। তাই যে ঘটনায় লেখার উৎস্য সে ঘটনায় চলে যায়।

আমি রপ্তানী প্রকিয়া করণ এলাকা বা ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত একজন তৈরী পোষাক কারখানার কামলা। এই তৈরী পোষাক কারখানায় অনেকেই পরিচয় দেন বিভিন্ন পদাংঙ্কনে; আমি শুধু জানি এখানে সবাই কামলা কেও দুইশ টাকা মুজুরী আবার কেও ২হাজার টাকা মুজুরীর। পার্থক্য শুধু মুজুরীর। গত ২দিন আগে কাস্টটমস্ থেকে ফোন করে জানানো হলো এসি (এ্যাসিটেন্ড কমিশনার অফ কাস্টমস্ ) আপনাকে সালাম দিয়েছে সকাল ১০টার সময়। সরকারী ১০টা বিবেচনায় আমি হাজির হলাম ১০টা ৩০মিনিটে হস্তদস্ত হয়ে। উপস্থিত হয়ে শুনতে পারলাম তিনি হেড কোয়াটারের জরুরী তলবে চিটাগং চলে গেছেন। তার পরিবর্তে আমাদের সাথে কথা বলবেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তিনি হলেন আমার পূর্ব পরিচিতি, সদ্য সাব-ইনেসপেক্টর থেকে পদান্বিত হয়ে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রূপে চেয়ারে বসেছেন। ফলে তার নিজস্বের চাহিদা অন্যান্য রাজস্ব কর্মকর্তা থেকে অনেক বেশী। যা হউক কিছু সময় পর উনি অন্য রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন আমাকে এবং কুশল বিনিময় করে তার বক্তব্য শুরু করলেন।

"ভাই আপনাদেরকে ডেকেছি একটি বিশেষ কাজে আর সে কাজে আপনারা আমাদের অবশ্যই সহযোগিতা করবেন। আর না করলে আমরা বিপদে পড়ে যাব আর বোঝেনইতো আমরা বিপদে পড়া মানে আপনারাও বিপদে পড়া। জানেন তো আমাদের সার্কেলে নতুন যুগ্ন কমিশনার ও কমিশনার এসেছেন গত ২/৩মাস যাবত। তারা যা শুরু করেছে তাতে তো চলা মুশকিল। এই ছোট্ট একটা জোন থেকে তাদের জন্য কি করব বলেন, তাদের ডিমান্ড মাসে ১লাখ টাকা এখান থেকে যা আমাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব না। এসব বিষয় নিয়ে এসি সাহেবের সাথে বেশ খারাপ ব্যবহার করছেন যুগ্ন কমিশনার ও কমিশনার সাহেব। বেচরা বুড়া মানুষ আর কয়েকদিন চাকুরী আছে এত কি তার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব!! তাই ভাই আপনারা মাসে ১০টা হাজার টাকা করে দিবেন এ মাস থেকেই। তা না হলে ভাই বিপদে পড়ে যাব। "

এদের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নাই, খুটি এদের ইউকালিপটাস গাছের মত গভীরে। যদি না দেয় তা হলে এমন হয়রানি করবে যে জীবনে ব্যবসায় করা লাগবে না। তাই বললাম এমাস তো শেষ দেখি ম্যানেজমেন্টর সাথে বলে আগামী মাস থেকে কিছু করতে পারি কিনা। আর সে কথা শুনে তার সমাধান দিলেন এভাবে-

"দেখেন ভাই আমি আপনাদেরকে ডেকে বললাম, কি রবেন এটা আপনাদের ব্যপার যদি না করেন টাকা কিভাবে নিতে হয় সেটা আমি জানি। এই গেট থেকেই ২০হাজার নিয়ে নিব যা দিতে আপনি বাধ্য হবেন। আপনার এক্সপোর্ট আসবে আমি আটকিয়ে রাখব, অযথা চেকিংয়ের নামে ঘন্টারপর ঘন্টা ফেলে রাখব, লেবার নিয়ে মাল নামাতে বাধ্য করব। কোন লোকাল পারসেজ দিব না, আমাদনী আসলে বসিয়ে রাখব তখন আপনি বাধ্য হয়ে দিবেন; আমি চাইনা এ রাস্তায় যেতে দেখেন কি করবেন"।

রমজান মাস কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম অফিসে। এবার আপনাদের জ্ঞাতার্থে ঘুষের কিছু রেট তুলে ধরলাম।

রপ্তানী বা এক্সপোর্ট প্রতি চালান-
সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা- ২০০টাকা যেটি সিএনএফ থেকে নিয়ে থাকে
সিপাহি অথবা সাব-ইনেসপেকটর- ১০০টাকা

আমদানী বা ইমপোর্ট প্রতি চালান-
সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা- ২০০টাকা যেটি সিএনএফ থেকে নিয়ে থাকে
সিপাহি অথবা সাব-ইনেসপেকটর- ১০০টাকা

লোকাল পারসেজ-
ভ্যাট চালান থাক বা না থাক- সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা-৫০০টাকা থেকে ৩০হাজার পর্যন্ত যার কাছ থেকে যেমন পারে
সিপাহি-২০০থেকে ৫০০০ বা যার কাছ থেকে হুমকী ধামকী দিয়ে যা পারে।

সাব কনট্রাক্ট- প্রতি ফাইল ১০হাজার টাকা
আর প্রতিচালান ৩০০টাকা

এভাবে যতবার কাজ করতে যাবেন ততবার তাদেরকে টাকা দিতে হবে। আর বিভিন্ন উৎসব যেমন- দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদিতে তো কথা থাকে না দিতে হবে বড় ধরনের বকশিস।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৪৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×