সংজ্ঞা:
পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে বস্তিবাসীকে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে হাউজিং কন্ডিশন (ঝুপড়ি, কাঁচা পাকা, সেমিপাকা), বাড়ির ঘনত্ব ও বসবাসের অবস্থান, সেবাসমূহ (অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সেবা), আয় (৫ হাজার টাকার নিচে আয়), মানুষ ধারণ করার ক্ষমতা। একত্রে ছোট ঝুপড়ি আকারের ১০টি ঘরকে একটি বস্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া ঢাকার বস্তিগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। বৈধ ও অবৈধ । ব্যক্তি মালিকানাধীন বস্তিগুলো বৈধ, আর সরকারি, ঢাকা সিটি করপোরেশন ও রেলওয়ের জমিতে মূলত অবৈধ বস্তিগুলো গড়ে উঠেছে।
পরিমাণ:
ঢাকা শহরে প্রায় ২০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক, ৫ লাখ নির্মাণ শ্রমিক, সাড়ে ৭ লাখ রিকশা চালক এবং সাড়ে ৪ লাখ আয়া রয়েছেন। যাদের প্রায় সবাই বস্তিতে বসবাস করেন। ঢাকার ১ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি বস্তি এলাকায় বসবাস করে। সে হিসেবে পঞ্চাশ লক্ষাধিক লোক বস্তিতে বসবাস করে।
ব্যয় বৈষম্য:
* বস্তির একটি পরিবারকে দৈনিক মাত্র ৮/১০ ঘণ্টা একটি লাইট ও ফ্যান ব্যবহারের বদৌলতে মাসে প্রায় ২৫০ টাকা ব্যয় করতে হয়। একই সময় একটি ধনী পরিবারকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে দিতে হচ্ছে মাত্র ১৫০ টাকা।
* আবার জ্বালানির ক্ষেত্রে বস্তিবাসী পরিবারগুলো (যেহেতু গ্যাস সরবরাহ নেই) দৈনিক রান্নার কাজে প্রায় ৪ কেজি লাকড়ী ব্যবহার করে। প্রতি কেজি লাকড়ির মূল্য ৮ টাকা হিসেবে দৈনিক ৩২ টাকা এবং মাসে প্রায় ৯৬০ টাকা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে সারাদিন চুলা জ্বালিয়ে, কাপড় শুকিয়ে একটি উচ্চবিত্ত পরিবার ব্যয় করছে মাত্র ৪৫০ টাকা।
* নগরীর একটি সচ্ছল পরিবার এক হাজার লিটার ওয়াসার পানির জন্য পরিশোধ করেছে মাত্র ৭ টাকা। আবার একটি দরিদ্র বস্তিবাসী পরিবারকে দুই টাকায় ২০ লিটার (এক কলস) পানি ক্রয় করতে হয়। সেই হিসেবে এক হাজার লিটার পানি ব্যবহার করে বস্তির একটি হত দরিদ্র পরিবারকে একটি ধনী পরিবারের তুলনায় প্রায় ১৪ গুণ বেশি ব্যয় করতে হয়।
অবদান:
নগরের বস্তিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান। এদের প্রায় ৮০ ভাগ নগরের ইনফরমাল ইকোনমির সাথে যুক্ত থেকে নগরের জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। নগরীর ইনফরমাল সেক্টরের প্রধান খাতগুলো হচ্ছে পরিবহন নির্মাণ গার্মেন্টস, ক্ষুদ্র ব্যবসা, গৃহস্থলীর কাজ, খাবার হোটেল, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি। এতে জড়িত নানা পেশার অদক্ষ ও আধাদক্ষ বস্তিবাসী।