রাত তখন আড়াইটা । বুটের আওয়াজ আর বাঁশির শব্দে গভীর ঘুম হাল্কা হয়ে আসছিল । পাশে ভাইয়া জাগিয়ে তুলে বললেন “তাড়াতাড়ি উঠ, বাসায় পুলিশ এসেছে “। আতঙ্কের মাঝে ঘুম ভাঙল, তখনও বুঝে উঠতে পারিনি আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে । খুব জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে, মনে হচ্ছে দরজা ভেঙ্গে ফেলবে । ঐদিকে আবার হাই ভোল্টেজের আলো রুমের মধ্যে ফেলছে , কিন্তু পর্দা থাকাতে রুমের ভেতরে আলো প্রবেশ করছে না । বুঝতে পারলাম পুলিশ চারিদিক ঘিরে ফেলেছে । ততক্ষণে আম্মা ভয়ে ভয়ে দরজাটা খুলে দিলেন । চার পাঁচজন পুলিশ বাসায় ঢুকে জিজ্ঞেশ করা শুরু করল ।
আপনার নাম কি ? আপনার ছেলে মেয়ে কয়জন ? বাসায় থকে কয়জন ? ইত্যাদি ইত্যাদি । পরে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে বলা হল । প্রথমে ভাইয়্যা তারপর আমি বেরিয়ে আসলাম । আমার পরনে পায়জামা আর হাফহাতা গেঞ্জি ছিল, মাথায় টুপি দিয়ে আসার খেয়াল ছিল না।
প্রথমে আমাদের নাম জানতে চাইল। নাম বলার পরে বাড়ি কোথায়, কোথায় পড়ালেখা করছি; এসব অনেক কিছু জানতে চাইল। তারপর বড় ভাইয়ের পড়ার ঘর দেখিয়ে দিতে বলল। তিনিও তাদের কথামত পড়ার ঘর দেখিয়ে দিলেন। বইপত্র ভালো করে তল্লাশি করে দেখল; কিন্তু কিছু পেলো না। তারপর শুরু হল আমার পালা। আমিও তাদেরকে তাদের কথামতো বইপত্র দেখিয়ে দিলাম। খুব ভালো কিরে সবকিছু দেখল, কিন্তু কি আর পাবে কিছু থাকলে তো ? তাদের মধ্য থেকে সাদা পোশাকধারী হাতে ওয়্যারলেস থাকা একজন আমাকে জিজ্ঞেস করল তুমি তো শিবির কর তাই না? তুমি এখন শিবিরের কোন পদে আছ? তোমাদের নামে রাস্তা অবরোধ আর পিকেটিং করার অভিযোগ আছে। আমি থ বনে গেলাম। আদর্শগত ভাবে যে দলকে আমি কখনও পছন্দ করি না, সেই দল করার অভিযোগ কিনা আমার ওপরে ? এসব কি বলেন স্যার, দাড়ি টুপি থাকলেই কি শিবির হয়ে যায় না কি স্যার ?
কেন ? তুমি শিবির কর না কেন ? শিবির তো ভালো, আমরাও তো শিবির পছন্দ করি শুধুমাত্র পোশাকের কারনে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে; না স্যার আমি শিবির পছন্দ করি না । কেন ? শিবির পছন্দ কর না কেন ? না স্যার ওদের মূলনীতির সাথে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলি সাংঘর্ষিক। ততক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম ঘটনা আসলে এই জায়গায় না , ঘটনা অন্য জায়গায় । আমি তাদকে জিগ্যেস করলাম , দেখেন স্যার আপনারা তো কোনো ইনফরমেশন ছাড়া আসেন না, নিশ্চই আপনাদেরকে কেউ ইনফরমেশন দিয়েছে । আমাদের চাচার সাথে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে আমাদের বিরোধ চলতেছে । তারাই আপনাদেরকে এইরকম ভুল ইনফরমেশন দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করার চেষ্টা করতেছে । তাদের কথাবার্তায় বুঝতে পারলাম তারা আমাদের শত্রুদের কাছ থেকেই ইনফরমেশন পেয়েছে । আমাদের সব কথা শোনার পর সাদা পোশাকধারী পুলিশ অফিসার আম্মাকে লক্ষ্য করে বলল ঠিক আছে আমরা একজনকে (আমকে উদ্দেশ্য করে) থানায় নিয়ে জিগ্যাসাবাদ করি। আম্মা প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, এটা কেমন কথা আপনি কোনো কারন ছাড়া তাদেরকে নিয়ে যাবেন কেন ? তরপর আমাদের সবার জোর প্রতিবাদের কারনে পুলিশ আমাকে আর নিয়ে যেতে পারে নি । যাওয়ার সময় আমদেরকে হুমকি দিয়ে বলে গেল, এখন থেকে তারা আমাদের মুখ চিনে রাখছে পরবর্তীতে কোন অভিযোগ পেলে সরসাসরি এসে ধরে নিয়ে যাব !!
দাড়ি টুপিওয়ালা মানুষগুলো কি এইদেশে শান্তিতে থাকতে পারবে না ? এটাই কি তাহলে প্রতিরোধ কমিটির নমুনা ? বর্তমান পরিস্থিতিতে কত মানুষকে যে এভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তার খবর কি আমরা রাখছি ?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



