মাঠ জুড়ে হীরা বিছানো রয়েছে...তাতে ভোরের প্রথম সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে...দূর থেকে অন্তত তাই মনে হয়েছিলো...বিস্ময়ে হা হয়ে যাই...সবে কুয়াশা কাটতে শুরু করেছে...চা বাগানের মাঝখান দিয়ে পীচ ঢালা পথ...তবে পীচ উঠে গিয়ে নুড়ি পাথর বেরিয়ে পড়েছে...
রাস্তাটা এক্কেবারে নির্জন...রাস্তার দুধারে বাড়িঘর বা জনমনুষ্যির দেখা নেই...ভোরবেলায় একটু দূর থেকে অপার্থিব এই দৃশ্য দেখে গা-টা কেমন জানি ছমছম করে উঠে...দ্রুত পা চালিয়ে পৌঁছে যাই মাঠটার কাছে...
ভুল ভাঙে তবে বিস্ময় বাড়ে...পুরো মাঠ জুড়ে মাকড়সা বিছিয়েছে তার জাল...তাতে শিশির জমেছে...আর সেই শিশির বিন্দুর উপর সূর্যের আলো পড়ে এই কাণ্ড...
পুরাে শীতকালটা চা-বাগানে কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হয় না...দুধ সাদা কুয়াশা মােড়া নির্জন চা বাগানের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভীষণ চায়ের তেষ্টা পায়...এই তেষ্টাটাও এক ধরণের আনন্দ...বাগানের মাঝে কে আমার জন্য চা বানিয়ে বসে থাকবে...তাই জানি এখানে মিলবে না তবুও তেষ্টা বুকে নিয়ে হেঁটে বেড়ানো...
বাগানের পখ ছেড়ে মূল চওড়া সড়কে উঠতেই কুয়াশা যেনো আরো বেশি চেপে ধরে...এক হাত দূরের জিনিসকেও আবছা মনে হয়...ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিশক্তি কমে আসার এই ব্যাপারটা আমার ভীষন ভালো লাগে...এখনও রাস্তার নীরবতা ভেঙে দেয়নি যন্ত্রদানবেরা...
কুয়াশার মাঝেও দেখতে পাই একটু দূরে রাস্তার পাশে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে কয়েকজন...শীতে গ্রামবাংলার খুব চেনা দৃশ্য...ঠোঁটে হাসি ফুটে...এদের জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয়ই চা দোকানের খোঁজ পাওয়া যাবে...
কাছে যেতেই দৌড়ে পালায়...আবারো হেসে ফেলি...মানুষ নয় বানর...রাস্তার পাশে বসে খুঁটে খুঁটে কী জানি খাচ্ছিল...হুট করে আমার চলে অাসা পছন্দ করেনি...ভালো করে লক্ষ্য করি বাগানের ভেতরে অনেক বানর...ছায়া দেয়া গাছগুলো বেয়ে উঠানামা করছে...এতোক্ষনে একটাও ফলের গাছ চোখে পড়েনি...তাহলে ওরা খায় কী...থাক ওদের খাওয়া নিয়ে আমার চিন্তা না করলেও চলবে...ওদের জন্য প্রভু আছেন...
এবার আমার জন্য এক কাপ চায়ের সন্ধান করা যাক...