somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বর্বর হত্যাকাণ্ড এবং ইকড়ির মৃত্যু

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইকড়ি একটি চড়ুই পাখি। ঢাকা শহরের একটি ফ্ল্যাটের ভেন্টিলেটরে ইকড়ির বাসা। ইকড়ি তার বাসা থেকে ফ্ল্যাটের ভেতরে কি হচ্ছে সব দেখতে পায়। ফ্ল্যাটে যারা থাকে তাদের নাম মানুষ। ইকড়ি জানে প্রকৃতি তে এদের সন্মান আলাদা। কারন এরা সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। শুধু বুদ্ধি নয়, এদের আবেগ অনুভূতি ও অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় ঢের বেশি। এই ফ্ল্যাটে বাসা নেবার পর ইকড়ির জীবনে একটা ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা টা ইকড়ির জীবনের সবচেয়ে দুঃখের ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনার ফলেই ইকড়ি বুঝতে পেরেছে মানুষ নামের এই ডানা এবং পালক ছাড়া জীব টার বুদ্ধি, আবেগ, অনুভূতি সব কিছু অন্যদের চেয়ে বেশি। এই প্রাণী টাকে মন থেকে সন্মান করতে পেরে সে তৃপ্তি অনুভব করেছে।

এই বাসায় ইকড়ি একা আসেনি। তার সাথে তার বান্ধবী মিকড়ি ও এসেছিল। ইকড়ি এবং মিকড়ি বাসায় উঠার পর অবাক হয়ে দেখল বাসার ছাদে একটা অদ্ভুদ জিনিষ ঝুলানো। ইকড়ি মিকড়ি কে জিনিষ টা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল-

কি রে মিকড়ি! মনে লয় এটা তিন পাঙ্খার রাজহাঁস! মাইরা ঝুলাই দিছে!!

সিরাম ইত্ত মনে লয়!!, ঠোঁট দিয়ে প্লাস্টার খুঁটতে খুঁটতে জবাব দিয়েছিল মিকড়ি।

একদিন বাসার সবচেয়ে ছোট মানুষ টা তার সরু হাত দিয়ে দেয়ালে পুট করে চাবির মত কি একটা টিপ দিল। সাথে সাথে অবাক কান্ড! ঘড় ঘড় আওয়াজ করে তিন পাঙ্খার মরা রাজহাঁস বন বন করে ঘুরতে শুরু করল! সেকি ঘুরা!! পাঙ্খা দেখাই যায় না!!!সাথে সাথে এমন বাতাস উঠল মনে হল ঘরের মধ্যে যেন তুফান বইছে!!

মিকড়ি বলল- ইকড়ি, বাতাসের মইদ্যে উড়াউড়ি করি চ!

ইকড়ি বলল- চ!

পাঙ্খার কাছাকাছি আসতেই বিষম খেল ইকড়ি মিকড়ি। তিন পাঙ্খার আজব রাজহাঁস টি যেন প্রেত! প্রেতের মতই অশুভ শক্তি দিয়ে নিজের দিকে ইকড়ি আর মিকড়ি কে টেনে চলেছে! ইকড়ি সেদিন মরতে মরতে বেঁচে গেলেও মিকড়ি বাঁচতে পারলনা। প্রেতের অদৃশ্য ডানার থাবা খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে ছিটকে পড়ল ঘরের মেঝে তে। এর পরের দৃশ্য টি ইকড়ি কোন দিন ভুলতে পারবে না। বাসার বড়সড় মানুষ টা ঘরে এসে মিকড়ির মৃতদেহ দেখে সে কি কান্না! ভেন্টিলেটরে বসা ইকড়ির দিকে বারবার এমন ভাবে তাকাতে লাগল যেন সে ইকড়ির কাছে বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে। আর সেজন্য ইকড়ির কাছে বার বার ক্ষমা চাচ্ছে।

সেদিন রাতেই ছোট ছোট ছিদ্রের পাতলা নেট দিয়ে ইকড়ির বাসা ঢেকে দেয়া হল। সেই নেট আলগা করে মানুষ টা ইকড়ি কে আগের মতই খাবার দিতে পারে। পানি দিতে পারে। কিন্তু প্রেতের আর সাধ্য নাই এই নেট ভেদ করে ইকড়ি কে কাছে টেনে নেবার! ইকড়ি অনেক বার পরীক্ষা করে দেখেছে। অভিশপ্ত প্রেত যখন বন বন করে ঘুরতে ঘুরতে নিজের ডানাগুলো লুকিয়ে ফেলে এবং চারপাশে মরণ ঝড় তুলে তখন ইকড়ি নেটের সাথে একদম লেগে যায়! প্রেত তার সবটুকু শক্তি দিয়ে ইকড়িকে নিজের কাছে টেনে নিতে চায়। কিন্তু নেট ইকড়িকে আগলে রাখে। যে মানুষ আস্ত প্রেত কে কাঁচকলা দেখানো এরকম সাঙ্ঘাতিক একটা নেট লাগিয়ে দিতে পারে তার বুদ্ধি যে সবার চেয়ে বেশি এটা ত আর বলা লাগে না।

মানুষ টার মনে দয়ামায়া ও সাঙ্ঘাতিক। সময়ের সাথে মিকড়ির কথা ইকড়ি নিজেই অনেক খানি ভুলে গেছে। অথচ মানুষ টা এখনো মনে রেখেছে। এখনো খাবার দেবার সময় দুটা বাটি তে খাবার দেয়। দুটা বাটিতে পানি দেয়। ইকড়ির দিকে যখন তাকায় তার চোখে ফুটে উঠে অপরাধবোধ। খাবার দেবার আগে এবং পরে নেট টা বারবার হাত দিয়ে টেনে পরীক্ষা করে দেখে,ঠিক আছে কি না। ইকড়ি এটাও খেয়াল করেছে মানুষ টা যখন ঘরে একা থাকে তখন বাতাসের জন্য প্রেত ঘুরার চাবিতে কখনো টিপ দেয় না। হাত পাঙ্খা দিয়ে নিজেই নিজেকে বাতাস করে! প্রেত মিকড়ি কে মেরে ফেলেছে- এই কথা টা যে মানুষ টা ভুলতে পারে নাই এটা ইকড়ি বুঝতে পারে।

এই মুহুর্তে ইকড়ি অবাক হয়ে একটা দৃশ্য দেখছে। এই মানুষ টার হাত পা দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে। তার শরীরের উপর চেপে বসেছে আরো দুজন মানুষ। একজন মাথাটা এমন ভাবে চেপে ধরেছে যেন গলাটা টান টান হয়। আরেকজন চকচকে দা দিয়ে মানুষ টার গলা জবাই করছে। যে জবাই করছে তার দিকে চোখ পিট পিট করে ভাল করে তাকাল ইকড়ি- হ্যাঁ, সে ও একজন মানুষ!

ইকড়ির মনে হল সে বরফের মত জমাট বেঁধে গিয়ে ওখানেই অনন্তকাল দাঁড়িয়ে আছে। যে মানুষ কে সে এত সন্মান করে তার এ কোন রূপ দেখছে সে? তারা যে তাকে খাবার জন্য হত্যা করছে না-এটা ইকড়ি জানে। তবে কি তার সাথে এদের ঝগড়া? ঝগড়া হলে জবাই করতে হবে কেন? মিকড়ির সাথে তার ত কতই ঝগড়া হত। দুপুর বেলা ঝগড়া,সন্ধ্যাবেলা মিট মাট। এর কথা ওদের পছন্দ হয় না? ইকড়ি বনে থাকতে দেখেছে একজনের কথা আরেকজনের অপছন্দ হলে একজন আরেকজনের থেকে দূরে সরে যায়! ইকড়ি যতই ভাবে ততই আবিষ্কার করে বনে সে যেসব হিংস্র প্রাণীদের দেখেছে তাদের চেয়ে এই মানুষেরা অনেক অনেক বেশি নিকৃষ্ট!

ইকড়ির মাথাটা ঘুরে উঠে। তার প্রেতের দিকে চোখ যায়। প্রেতের চেহারাতেও যেন একটা বিষণ্ণতা ভর করে আছে।প্রেতের বিষণ্ণ মুখ হয়ে আবার মেঝেতে চোখ পড়ে ইকড়ির। মানুষ টার গলা কেটে গিয়ে গল গল রক্তের ধারা মেঝেতে বইছে আর মানুষ রুপী নিকৃষ্টতম পশুগুলোর চেহারায় বুনো উল্লাস।। রক্তে অর্ধেক ডুবে যাওয়া মানুষটার চেহারা এবং ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে থাকা হিংস্র পশুগুলোর বুনো উল্লাসের দিকে তাকিয়ে ইকড়ি হঠাৎ বুঝতে পারে সে নিজেই মারা যাচ্ছে! না, কোন কষ্ট নয়, বরং একটু স্বস্থিই যেন অনুভব করে ইকড়ি!

যে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী সে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী তে পরিণত হয় সে পৃথিবীতে কোন নিষ্পাপ প্রান স্বস্থি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে না।
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×