somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুঁজিবাদী গণিত!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'স্যার আসব?'

আমি ফাইল হাতে দরজায় দাঁড়ানো চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়সী ছেলেটার দিকে তাকালাম। ছেলেটার হাবেভাবে চাকুরী প্রার্থীর ‘অহেতুক স্মার্টনেস দিয়ে আড়ষ্টতা লুকানো’র ব্যাপার টা একেবারেই নাই। বরং তার চেহারায় একটা বিনয়ী অথচ বেপরোয়া ভাবের সাথে কোথায় যেন মিশে আছে প্রচণ্ড কৌতুক!

আমি মাথা ঝুঁকিয়ে তাকে আমার রুমে ঢুকতে বলে হাতের ইশারায় সামনের চেয়ারে বসতে বললাম। আমার হাতে ওর সিভি। সিভি টা খুব সহজ এবং নির্ভুল ভাষায় লিখা। ‘লাভ টু ওয়ার্ক আন্ডার প্রেশার’ টাইপের হাস্যকর কোন তথ্য সিভি তে নেই। শুধু একটা তথ্য মারাত্নক বিভ্রান্তিকর। ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স এর জায়গায় ‘থ্রি ইয়ারস( জুলাই ২০১৩ টু জুলাই ২০১৪)’ লিখা! চিন্তা করলাম এটা দিয়েই প্রশ্ন শুরু করি।

- আপনি মাস্টার্স পাশ। জুলাই ২০১৩ থেকে জুলাই ২০১৪ পর্যন্ত কয় বছর হয়?

- ১ বৎসর স্যার!

- তাহলে তিন বছরের অভিজ্ঞতা কেন লিখলেন?

- ঠিক ই লিখেছি স্যার!

- আপনার মাথা ঠিক আছে?

- জ্বী স্যার, ঠিক আছে।

- মাথা ঠিক থাকলে এক বছর কে তিন বছর কেমনে বলেন??

- স্যার আমি লিখেছি চাকুরির অভিজ্ঞতা তিন বছর। ঠিকই লিখেছি!

- আমি দুঃখিত। আপনার সাথে কথা বলে নষ্ট করার মত সময় আমার হাতে নাই। আপনি আসেন!

ছেলেটা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চেয়ার ছেড়ে উঠল।আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাসল। তারপর বলল- আমি তাহলে আসি স্যার!
ছেলেটা ঘুরে চলে যাচ্ছে, হঠাৎ করে আমার মনে হল ছেলেটাকে চলে যেতে দিলে সে আমাকে একটা রহস্যের মধ্যে রেখে চলে যাবে। সময় যত গড়াবে, রহস্য তত বাড়বে! আমি অস্বস্তি এড়ানোর জন্য খুক করে একটু কেশে তার উদ্যেশ্যে বললাম- আপনি বসেন!

সে এবারো এমন ভাবে বসল যেন কাউকে ‘আসেন’ বলার পর পর ই ‘বসেন’ বলাটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা।

আমি পিয়ন কে ডেকে চা আনালাম, বিস্কুট আনালাম। সে খুব সহজ ভঙ্গিতে চায়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খেল। তারপর আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগে নিজে থেকেই বলা শুরু করল-

আমি যেখানে চাকরি করতাম সেখানে সকাল আট টা থেকে রাত আট টা পর্যন্ত ডিউটি। ফেস্টিভাল ছাড়া কোন ছুটি নাই। প্রায় সময় আবার নাইট করা লাগত। আমি হিসাব করে দেখেছি এক বছরের চাকরি জীবনে আমি যে কয় ঘণ্টা কাজ করেছি সেটা নরমাল ছুটিছাঁটা সহ যেকোন নটা-পাঁচটা চাকরিতে এক বছরে যে কয় ঘণ্টা কাজ করা লাগত তার তিনগুন।সেই হিসাবে সিভি তে অভিজ্ঞতা তিন বছর লিখেছি! হিসাবের স্প্রেড শীট আমার কাছে আছে স্যার। দেখবেন?

বলে সে ফাইল থেকে স্প্রেড শীট বের করতে গেল। আমি হাতের ইশারায় তাকে স্প্রেড শীট বের করতে না করলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম,

-তুমি কি চাকরির ইন্টার ভিউ দিতে যেখানে যেখানে যাচ্ছ সবখানে একই ব্যাখ্যা দিচ্ছ?

নিজের অজান্তেই আপনি থেকে তুমি বলে ফেলেছি। বুঝতে পারছি নিজের অজান্তেই ছেলেটার প্রতি একটা মায়া তৈরি হয়ে গেছে। মায়ার কারনেই ছেলেটার চেহারার ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠা প্রতিটা রেখার ভাষা আমি পড়তে পারছি!

-হ্যাঁ স্যার বলেছি। সবাই এমন ভাবে তাকায় আমি যেন পাগল। স্যার আপনি ত ইঞ্জিনিয়ার। আপনি ই বলেন, আমার হিসাব কি ভুল?
ছেলেটার মুখের রেখার ভাষা আমাকে এমনিতেই এলোমেলো করে দিয়েছিল। ‘আমার হিসাব কি ভুল?’ এই প্রশ্নের তীর যেন আমার অনুভূতি’র মর্ম মূলে গিয়ে বিঁধল!

পুঁজিবাদের ভয়ঙ্কর বিষে নীল যে পৃথিবীতে গণিতের বিবর্তন হয়ে ‘সমীকরণের’ পরিবর্তে সব ‘অসমতা’ হয়ে গিয়েছে, সেখানে অঙ্ক শুদ্ধ রাখার জন্যই যে তিন কে প্রতি মুহুর্তে এক বানাতে হয়- এই কঠিন সত্য আমি তাকে সেই মুহুর্তে কিছুতেই বলতে পারলাম না। আমি চোখের চশমাটা খুলে অসম্ভব ভারী একটা মন নিয়ে ছেলেটার মুখের কাঁপা কাঁপা রেখা গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম।

১৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×