somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যরাতের নূপুর

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীতু কে পড়ানোর একটা বিরাট সুবিধা হল পড়ার ঘরে সিগারেট খাওয়া যায়। আমি অঙ্ক বই খুলে নিতু কে দুএকটা অঙ্ক করানোর পরেই নিতু বলে- স্যার এবার একটা সিগারেট ধরান। সিগারেটে টান দিলে মাথা খুলবে।

আমি আহত হয়ে বলি- মাথা খোলার কথা বলছ কেন নীতু? অঙ্কের উত্তর ত মিলছে!

নীতু হঠাৎ গাল টাল লাল করে ফেলে! তারপর লম্বা দম নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে জিজ্ঞেস করে- স্যার আপনি অঙ্ক ছাড়া আর কিছু বোঝেন না??

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে নীতুর দিকে তাকাই। নীতুকে কেমনে বোঝাই, কারো জন্য বুকের ভেতর টা তীব্র ভাবে হুহু করলেই তাকে ভালোবাসা যায় না। অনেক সময় প্রিয় মানুষের তীব্র ভালোবাসার সামনে প্রবল প্রতিরোধের দেয়াল তুলে পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভালোবাসাটাই পৃথিবীতে সবকিছু না।

নীতু ছাড়াও আমি আরো দুটো ছাত্র কে পড়াই। সব মিলিয়ে মাসে সাড়ে ছ হাজার টাকা পাই। বিশ্ব বিদ্যালয়ের হলের ডায়নিং এ মাছ দিয়ে ভাত খেলে সাত টাকা আসে। মুরগী দিয়ে ভাত খেলে নয় টাকা। আমি সব সময় মাছ দিয়ে ভাত খাই। এভাবে যতটা সম্ভব কম টাকায় মাস চালিয়ে আমি বাকী সব টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। মাসের পনের তারিখের পর থেকেই আমার বাবা মা ভাই বোন রা করুন মুখে আমার মনি অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করে। শুধু সিগারেট টা ছাড়তে পারি না। আমার মনে হয়- যেদিন আমি পাশ করে একটা ভাল চাকরি পাব, বাবা একটু গর্বের হাসি হাসবে, মা একটু মাথায় আঁচল টেনে আমাকে উপদেশ দেবে- ‘বাবা সৎ থাকিস। সৎ থাকলে মালিক তোকে কখনো চাকরি থেকে ছাঁটাই করবে না’, ছোট বোন হুমাইরা তার বান্ধবীর নতুন জামা দেখে আর মন খারাপ করবে না, সেদিন আমি সিগারেট ছেড়ে দেব।

আমি জানি নীতুর সাথে প্রেম করতে গেলে বাড়িতে এই টাকা গুলো পাঠাতে পারব না। এক হাতের মানুষ জীবনের দুই খাতার অঙ্ক কখনো একসাথে মিলাতে পারে না।

টিউশনি থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া করে আমি অনেকক্ষণ হলের পেপার রুমে পত্রিকায় চোখ বুলাই। প্রত্যেকটা চাকরির বিজ্ঞাপন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। চাকরির বিজ্ঞাপন পড়লে কেন জানি নিজেকে একটা চাকরির কাছাকাছি আছি বলে মনে হয়।

সবগুলা বিজ্ঞাপন পড়ার পর আমি গভীর রাত পর্যন্ত হলের বারান্দায় হাটাহাটি করি। সব রুমের বাতি নিভতে দেখলে আমি গুটি গুটি পায়ে হেটে আমার রুমে ঢুকে যাই। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে আমার রুম মেট দের ঘুম ভাঙ্গাই না। আমি অন্ধকারেই মশারী খাটাতে পারি।

মশারী খাটিয়ে শোবার পর কোত্থেকে যেন আবছা একটা আলো এসে ঘরের ভেতর ঢোকে। সেই আবছা আলোয় আমি দেখি ধবধবে সাদা একটা জামা পরে নীতু আমার মশারীর উপর এসে দাঁড়িয়েছে! নীতুর দুহাত ভরা অনেক গুলো কাঁচের চুড়ি। পায়ে ঘুঙ্গুর। একসময় নীতু আমার দিকে তাকিয়ে হা হা করে হেসে উঠে। তারপর আমার মশারীর ছাদের উপর নাচতে থাকে। চুরির ঝম ঝম আর নূপুরের ঝক ঝক শব্দ আমার মাথার ভেতর আর্তনাদের মত শোনায়!

আমি মরার মত ঝিম ধরে পড়ে থাকি। প্রাণপণে চেষ্টা করি মন কে যুক্তির আশ্রয়ে রাখতে- পুরাটাই আমার মনের বিভ্রম! বাস্তবতার কারনে নীতু কে ভালবাসতে না পারলেও আমার মন প্রবল ভাবে নিতু কে কামনা করে। সেই কামনা ই রাতের পর রাত এই দৃশ্যের জন্ম দিয়ে চলেছে।

কিন্তু একদিন আমার আত্নবিশ্বাসে চূড়ান্ত রকম চিড় ধরে!

নীতুকে অঙ্ক করাচ্ছিলাম। বাইরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অঝোরে বাতাস বইছে। কারেন্ট চলে যাওয়ায় চার্জার জ্বালানো হয়েছে। নীতু একটা সাদা জামা পরে আছে। চার্জারের অদ্ভুতুড়ে আলোয় নীতুর মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হচ্ছে-পাওয়া না পাওয়া এসবের বাইরে তীব্র দুঃখের বিষে নীল একটা সুখের নাম আসলে ভালোবাসা। তীব্র দুঃখের বিষে নীল এই সুখের সন্ধান যারা পায়নি তারা ভালোবাসা সম্পর্কে কিছুই জানে না।

নীতু হঠাৎ মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে নখ খুটতে খুটতে বলল- স্যার আমি প্রায় ই আপনাকে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখি!

কি স্বপ্ন নীতু?

স্যার এটা আপনাকে বলতে না পারলে আমি মরে যাব। আপনি প্লিজ আমাকে নির্লজ্জ ভাববেন না স্যার!

বল নিতু।

নিতু মুখ দিয়ে দুহাত চেপে ধরে প্রায় ফিস ফিস করে বলল- স্যার আমি প্রতিদিন রাতে স্বপ্নে দেখি একটা বিশাল বড় রুম। রুমের ভেতর একটা বিশাল লাল রঙের গালিচা পাতা। গালিচার এক কোনায় আপনি বসে আছেন। আর আমি আপনার সামনে বিভোর হয়ে নাচছি। আমার পরনে সাদা জামা। হাতে কাঁচের চুড়ি। পায়ে ঘুঙ্গুর!

নীতু টেবিলে মাথা রেখে কাঁদছে। বাইরে বজ্রপাতের সাথে শুরু হয়েছে তুমুল বর্ষন। চার্জার টা হঠাৎ করেই নিভে গেছে। হঠাৎ হঠাৎ বিজলির আলো এসে পড়ছে নীতুর খোলা এলো চুল, সাদা জামায় পবিত্র শুভ্র বাহুর উপর।

আমার মনে হচ্ছে মানুষের নিয়তি মানুষের অন্তরের মহানবোধের চেয়ে অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী।
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×