কুকুর মানুষকে কামড়ালে সংবাদ
খবরের কাগজের মহিমা বোঝা মুশকিল। বাইরের জগতে প্রতিদিন অনেক ঘটনাই ঘটছে। যার মধ্যে সুস্থ ও স্বাভাবিক ঘটনাই বেশি। কিন্তু তার কোনটাই খবর নয়,খবরের কাগজে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়। ঘটনা মাত্রই খবর নয়। ঘটনার মধ্যে যা অস্বাভাবিক ঘটনা, যা আশাতীত ও কল্পনাতীত, একমাত্র তাই হল খবর। খবরের খুব প্রচলিত এক উদাহরণে বলা হয়, কুকুর মানুষকে কামড়ালে তা সংবাদ নয়, কিন্তু মানুষ কুকুরকে কামড়ালে সংবাদ। অস্বাভাবিক ঘটনার প্রতি খবরের যে পক্ষপাত তা বোঝাতেই ওই উদাহরণ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, কোনো কুকুর যদি সাবেক সেনাপ্রধান মঈনকে কামড়ে দেয়,তাহলে সেটিও নিশ্চয়ই সংবাদ। কারণ সেটিও যে বড় হিসেবছাড়া ঘটনা। সুতরাং আমাদের বলতে হবে কুকুর মানুষকে কামড়ালে সংবাদ হবে কি না তা নির্ভর করছে কুকুর কোন মানুষকে কামড় বসাচ্ছে তার ওপরে। এই হলো খবর। আর খবরকে নিয়ে যার প্রকাশ্য বেনিয়া তার নাম খবরের কাগজ।
দেশের সংবাদপেত্র আবারো ঘরভাঙ্গার খেলা
বর্তমানে দেশের খবরের কাগজের দুনিয়ায় আবারো ঘরভাঙ্গার খেলার শুরু। এবার আসছে তুফান। সবাইকে প্রস্তুত হতে বলছে ভাগ্যবিধাতা। লাভের পয়সা উসুল করতে, বাজারে দর উঠাতে সবাই কমবেশি প্রস্তুত। যে প্রস্তুতির রেশ ধরে মড়মড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ে পাঠকের আস্থা। টিকে থাকে কেবল একদল বেকুব সংবাদকর্মীর হতাশা। আজকের নোটে আলোচনা থাকবে দেশের সংবাদপত্র দুনিয়ার লেটেস্টে আপডেট। বিশেষ করে রাজধানীর মিডিয়া পাড়ায় অস্থিরতার গন্ধ।
প্রথম আলো এখন ইনহাউজ অস্থিরতার শীর্ষে
শুরুতেই প্রথম আলো। আর এই কাগজ মানে অনিবার্যভাবেই চলে আসে মতিউর রহমান নামটি। যেন একই মুদ্রার এপিট-ওপিট। এককালের সাম্যবাদী দর্শনের মুখপত্রের সম্পাদক মতিউর রহমান এখন বর্তমান ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তিশালী সংবাদ প্রতিষ্ঠানের’ সেনা নায়ক। তাঁর মতো সম্পাদক যিনি বণিকী প্রতিষ্ঠানের কৃপাধন্য হবার পরে ক্রমশ তার সাম্যবাদী ভাবাদর্শের সম্পাদকীয় প্রতিভার সৃজনশীল ‘একতা’ পর্বকে ক্রমাগত খারিজ করে তবেই ‘প্রথম আলো’র সম্পাদক হয়ে ওঠেন। জাতির ক্রান্তিকালে তাঁর নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠীই দাড়িয়ে যায় ত্রাণকর্তা রূপে। তারাই দেখান একমাত্র আশা আবার তারাই এলিটের মুখকে করেন উজ্জ্বল। বসুন্ধরার কালের কণ্ঠ প্রকাশ হওয়ার পর আগাগোড়াই অস্থিরতার মধ্যে আছে এই পত্রিকা। মাঝে মাঝে ডেস্কে লোক খুজে পাওয়া মুশ্কিল গাইবান্ধার মত মফস্বলের নিউজ এডিট করার। মতি ভাইয়ের গত মংগলবারের মিটিং ছিল আশাবাদী। অনেক নতুন প্ল্যানিং। অনেক চমক। অপেক্ষার পালা।
‘গোন কেস' সমকাল
সমকাল যে কায়দায় এগুচ্ছে তা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার কোন কারণ নাই। গুঞ্জন জোরেশোরে রয়েছে,সারওয়ার ভাই সমকাল ছাড়ছেন। এর পেছনে নাকি হাল আমলে ‘ব্যাবসায়িক’ গ্রুপের নতুন বিনিয়োগের হাতছানি। নতুন নিউজ এডিটর হিসেবে বিপ্লব ভাই জয়েন করার পর কাজে সন্তুষ্ট নন কলিগরা। মালিকের সাথে সম্পর্কের অবনতি চলছে সম্পাদকের। কালের কণ্ঠ এসে যে মার্কেট ধরেছে তার সিংহভাগই সমকালের পাঠক। অবশ্য এসবই শোনা কথা। হয়তো কোনটাই সত্য নয়। তারপরেও যদি এর একটিও সত্য হয়, তাহলে আসলে সমকালকেও ‘গোন কেস’ বলে ধরে নেয়া শ্রেয়।
হাবুল টাবুল কাবুল বাবুলের মেতাই যুগান্তরের
যুগান্তরের বাবুলের নিজের মতোই অবস্থা কাগজটির। নিজ স্ত্রীকে টুপ করে সম্পাদকীয় কেদারাখানায় বসিয়ে দিয়ে ভারটা তিনি নির্বাহীর গলায় ঝুলিয়ে দিতে চান সর্বদা। লজ্জাজনক সাংবাদিকতাকে পুজি করেই চলছে যুগান্তর। শীর্ষ ৫ জনকে ল্যপটপ দেয়ার দাবী অধরাই রয়ে গেল। গতমাসের শেষ মিটিংএ আলোচনা ছাড়াই ল্যপটপ প্রসংগ শেষ হয়!
সম্ভাবনার খোলা দুয়ারে কালের কণ্ঠ
সম্ভাবনার দুয়ার খোলা প্রবসব্যথা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় না যার সেই কালের কণ্ঠের। হয়তো আবেদ খান সেখানে সম্পাদক হিসেবে আরো অনেকদিন থাকবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উনার দ্বারাও কি এ সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা সম্ভব হবে এনিয়ে চাপা গুনজন আছে। প্রেস নিয়ে জটিলতা চলছে। মার্কেটিং পলিসি, খরচাপাতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সাথে হর্তকর্তাদের রেষারেষি নিত্য। স্বপ্নবিলাসী নেপথ্য নায়ক অমিত হাবিব ভাই মূলত হাল ধরেছেন কাগজটির। সংবাদকর্মীরাও সন্তুষ্ট পেশাগত প্রাপ্তি নিয়ে। ফিচার বেইজট কাগজ হয়ে যাচ্ছে, হট নিউজের আকালের কারণে। আমাদের দেশের সংবাদপত্র জগতে বিস্ময়কর চরিত্র প্রথম আলোর সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে এই কাগজ। মফস্বলের সঙ্গীতের মুর্চ্ছনাও কালের কণ্ঠ ধরতে পারে নিউজ ম্যানেজমেন্ট রুম থেকে। সে মতে কাজও করে সমন্বয় করে। পাঠক সংখ্যা তাদের অনেক কম। হাওয়ায় কান পাতলে শুনতে পাই,একেক হাউস থেকে আসা সংবাদকর্মীদের দ্বন্দ্ব নাকি বেশ ভালোই বেধেছে। কবে কাটবে তা নিয়ে এখনো ধন্দ। আজকের কালের কণ্ঠ কিন্তু ফেসবুক নিয়ে লিড স্টোরি করেছে, দেখেছেন? তারা একটা টার্গেট গোষ্ঠী নিয়ে আগাচ্ছে মনে হচ্ছে। ভালোই!
আসছে... দৈনিক অধিনায়ক
এক সময় মতিউর রহমানের ভীষণ ঘনিষ্ঠ, তবে গ্ল্যামারের দুনিয়ায় নির্বিষ হবার কারণে প্রথম আলোর বাইরে আসা মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু এখন নতুন পত্রিকার জন্ম দিতে যাচ্ছেন। জুনের ১৭ সম্ভ্যাব্য তারিখ পত্রিকা প্রকাশের কথা থাকলেও মালিক নূর আলীর সাথে দেন দরবারে গিয়ে সাত মাস পিছিয়ে গেল প্রকাশ। এ পত্রিকার সাথে আছেন তিনজন চৌকষ পরামর্শক। মধ্যবিত্তের স্বচ্ছ দৈনিক হওয়ার বাসনায় মঞ্জু ভাই কাগজের নাম প্রস্তাব করেছেন দৈনিক অধিনায়ক। মঞ্জু ভাই সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক (এই ভারে তিনি আগেও বহুবার আক্রান্ত ছিলেন)থাকাকলীন পারফরম্যন্সেই বলে দেয় তিনি পারতেও পারেন। তবে তা সর্ম্পূণ নির্ভর করছে তার দল গোছানো নিয়ে। এই কাগজে সম্পদকের পছন্দ তালিকায় আছেন সমকাল, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, নিউ এজের একদল তরুণ। জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে সমানে। তবে পর্যবেক্ষন শক্তি বলেছে, কম খরচে বেশি পাওয়ার লক্ষ্যে ছুটলে এদের মধ্যে হতাশা আসবে আগামী মাসেই।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম, অনলাইল জার্নালিজমে নতুন কিছু!
সমকালের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে আসছে নতুন একটি অনলাইন নিউজ এজেন্সি। অর্থায়ন করছে বসুন্ধরা। একই কোম্পানির বিনিয়োগে এসেছে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলা নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডট কমে অনেক নতুনত্ব থাকবে বলে জানা গেছে।
কবরে ঘাস গজাচ্ছে যমুনাটিভির
দক্ষ পেশাদার মিডিয়া কর্মী দল, সুসজ্জিত অফিস, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ মহা আড়ম্বরে গত বছরের ১৫ অক্টোবর অনানুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল ২৪ ঘণ্টার সংবাদভিত্তিক চ্যানেল যমুনা টেলিভিশন। কিন্তু মাত্র এক মাসের মাথায় ১৯ নভেম্বর রাত ১০টায় বিটিআরসির কর্মকর্তাদের পুলিশি অভিযানে থমকে দাঁড়াল যমুনা। আজ ২০১০-এর এপ্রিল মে মাসে এসে সবকিছুই এখন ইতিহাস, একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়। দর্শকেরা একই ঘটনা দেখেছিল দেশের জনপ্রিয় বেসরকারি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের ক্ষেত্রে। জনগণের কাছে এটা খুব পরিষ্কার, এ দেশের সরকার অতীত থেকে কখনো কোনো কিছু শেখে না। তাই বারবার মহাসমারোহ চলে অতীত নাটকের পুনঃমঞ্চায়ন। ২০০২ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি যমুনা টেলিভিশনের অনুমতি পান যমুনা গ্র“পের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল।
অনিশ্চিতয়তার ঘোরাটোপে বন্দি চ্যানেল ওয়ান
চ্যানেল ওয়ানের টেলিভিশনের কর্মীদের চাকরির অনিশ্চয়তা আরও বাড়ল। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার বন্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ খারিজাদেশ দেন।
বসুন্ধরার নয়া প্রজেক্ট দ্য ডেইলি সান
বসুন্ধরা গ্রুপের নয়া এক প্রজেক্ট মাঠে নামছে আগামী সেপ্টেম্বরে। এই নয়া প্রজেক্টের নাম দ্য ডেইলি সান! সান-এর সম্পাদক হয়েছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। শিগগিরই সৈয়দ আনোয়ার সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করবেন।
সব কথার শেষ কথা
যাক গে অনেক হলো। এবার তাহলে রাখি। খবরের কাগজ পড়া। সাদা কাগজের উপরে অনিঃশেষ সারিবদ্ধ অরের কালো কীট। বিরাজ করছে পাকা ফলের ভেতরে পোকার মতো। সমস্ত পৃথিবী সেখানে উদোম খোলা পড়ে আছে। কিন্তু তাঁতে শাঁস নেই, রক্ত নেই, রস নেই। খবরের কাগজের ভোক্তা যে পাঠক তারও মনে কোন ঢেউ নেই, কোন ক্ষোভ নেই, কোন কিছুতেই ঝাঁপিয়ে পড়ার কোন উদ্যম নেই। মিটছে শুধুমাত্র একটা পরিত্যক্ত কৌতূহল। সেই পথের চালক আমরা। কিন্তু আমরা খেয়ে পড়ে বাঁচতে চাই। বাইলানই চাই। অফিসে ফেসবুকের অধিকার চাই। চাই প্ল্যানিং, নার্সিং। চাই বেতন বোনাস। চাই অফডে তে শান্তিতে দারাপুত্র পরিবার সমেত সময় কাটাতে। মহান’দের ভাঙ্গাগড়ায় আমার আশা ভাঙ্গবে কেন?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




