দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিশ্বের ৯৫% লোক আংশিক/সম্পুর্ণ অন্ধত্বকে অবলম্বন করে।কিন্তু কেও স্বীকার করতে রাজি নয় যে সে তার জীবন পরিচালনা করছে যে চিন্তা-দর্শনের ভিত্তিতে তা অন্ধত্বের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে।বাস্তবতা ও যুক্তির বিচারে তা কতটুকু সঠিক আর কতটুকু বেঠিক সেটা মুক্ত বিবেক-বুদ্ধির বিচারে যাচাই করা হয়নি। প্রত্যেকে যে ধর্ম/জীবন দর্শণ আনুসরণ করে থাকে বলতে গেলে তার প্রতিটিরই কিছু কম/বেশি সঠিক,যৌক্তিক ও আকর্শনিও দিক আছে।সেই সঠিক,যৌক্তিক ও আকর্ষনীয় বিষয়গুলো ধর্ম/জীবন দর্শণ ভেদে কোনটির ৩০%, কোনটির,৫০%, কোনটির ৮০% রয়েছে।প্রত্যেক ধর্ম/জীবণ দর্শনের অনুসারিরা উক্ত ৩০%/৫০%/৮০% বিষয়গুল নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা ও তার মহত্ত্ব বর্ণনাই ব্যস্ত থাকে এবং উক্ত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে আত্ব-তৃপ্তিতে থাকে।মানব জীবনের জন্য কোন বিষয় কল্যাণকর আর কোন বিষয় অকল্যাণকর তা বিচার করা হয় প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম/জীবব দর্শণের উপর ভিত্তি করে- যেখানে যুক্তি ও বাস্তবতা গৌণ। যুক্তি ও বাস্তবতাকে ততটুকুই আনা হয় যতটুকু নিজ নিজ দর্শণ ও বিশ্বাসের সাথে মেলে আর যতটুকু না মেলে তার জন্য গোজামেলির আশ্রয় নেয়া হয়।নিজ ধর্ম/মতাদর্শ ঠিক,যে বা যারা এর পক্ষে কথা বলে তারা পরম শ্রদ্ধেও।আর যারা এর বিপক্ষে কথা বলে তারা ঘৃণ্য।
এর ছোট্ট একটি প্রমাণ দেই।ড. জাকির নায়েকের একটি প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠাণে দেখলাম একটি হিন্দু মেয়ে ড. জাকির নায়েককে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে কি কি বিষয়ে মিল/অমিল রয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করছে। মেয়েটিকে ড. জাকির নায়েক প্রশ্ন করেন যে সে কি তার হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে ঈশ্বরের ধারণা বিষয়ক লেকচার শুনেছে কিনা।মেয়েটি হ্যা উত্তর দেয়। এরপর ড. জাকির মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেন যে ঈশ্বরে একত্বতা ও মুহাম্মাদ (স.) রসুল হওয়ার বিষয়টি যেহেতু তার ধর্মেও আছে, সে বিশ্বাস করে কিনা।মেয়েটি জবাব দেয় যে হ্যা, সে বিশ্বাস করে।কোন ধর্ম সঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা আরেকটি আলোচনার বিষয়।এখানে আমি যে বিষয়টি প্রমাণ করতে চায় তা হল কোন বিষয় এর সঠিক/বেঠিকের যাচাইয়ে আমরা( প্রায় পৃথিবীর ৯৫% মানুষ)যুক্তি, বিবেক-বুদ্ধি ও বাস্তবতার স্থলে অন্ধত্বকে মাপকাঠি হিসাবে নিয়ে থাকি। ড. জাকির যদি হাজারো যুক্তি দেখাতেন আর প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন যে আল্লাহর একত্ব ও মুহাম্মাদ আল্লাহর রসুল এ বিষয়টি বিশ্বাস করা অতিব যৌক্তিক এবং সঠিক বিষয় আর এমন প্রমাণ করতেন যে এমন সঠিক বিষয় তোমাদের ধর্মে নেই, সুতরাং তোমাদের ধর্ম ভাল না ইত্যাদি-তাহলে কি মেয়েটি কোনক্রমেই ড. জাকিরের কথায় একমত হত?ড. জাকির নায়েক যত শক্তিশালি যুক্তি আনুক না কেন, মেয়েটি তা গ্রহণ করত না।এ মেয়েটি একটি উদাহরণ মাত্র।বাস্তবে আমরা যে যেটা বিশ্বাস ও অনুসরণ করি তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে থাকি।আমি এখানে বলছি না ড. জাকির নায়েক সঠিক/ভূল বলছেন বা মেয়েটি জাকির নায়েকের সাথে একমত হয়ে ঠিক বা বেঠিক করেছেন।এটা আমার এখানে আলোচনার বিষয় না। আমার আলোচনার বিষয় হল কোন বিষয় ঠিক বা বেঠিক তা যাচায়ের জন্য আমরা যুক্তি, বিবেক-বুদ্ধি ও বাস্তবতার স্থলে অন্ধত্বকে মাপকাঠি হিসাবে নিয়ে থাকি যা মানবতার জন্য অত্যান্ত দুঃখজনক ও ক্ষতিকর।
আমার পিতা-মাতা যে ধর্ম,মত-পথ অবলম্বণ করেছেন সেটাকে যাচায়-বাছায় না করে অনুসরণ করা কখনো বুদ্ধিমত্তার কাজ নয়। একদিন একজন লোক বলছিল মুসলমানদের বেশি করে সন্তান নেয়া উচিত যাতে করে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ে।আল কুরআনের কোথাও মুসলমানের সন্তান মুসলমান হয়- এ নীতিকে সমর্থন করে কোন বক্তব্য নেই।
একসময় চট্টগ্রামে কে বা কারা বোদ্ধ মন্দির ভাঙ্গে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধরা প্রতিবাদ মিছিল করে। আমার এক সহকর্মী এ প্রতিবাদি মিছিলে অংশ নিতে একদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকে। একই সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মায়ানমারে শত শত মুসলমান নিধনযজ্ঞের শিকার হচ্ছিল। এর প্রতিবাদে সারা বিশ্বের ন্যায় কিছু মুসলমান প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিচ্ছিল।কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মহত্ত্বর কাজ কোন সন্দেহ নেই।আমার পক্ষের লোককে নির্যতিত হলে প্রতিবাদ করি।চরম অবিচার বলে চিৎকার করি।আর বিপক্ষের লোক নির্যতিত হলে, নির্যাতিতের দোষ খুজি বা চুপ থাকি।
প্রতিবাদ করতে হলে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।অন্যায়কে অন্যায় আর ভালকে ভাল বলার মত হৃদয়ের অধিকারী লোকই সত্যিকার মহৎ।সকল ধরনের ধর্মীয়/দর্শনগত চিন্তা-চেতনার সংকীর্ণতার উর্ধে উঠতে পারাটায় অন্ধত্ব মুক্ত হওয়া।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




