somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের প্রথম সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা - যেভাবে শুরু হলো বাংলাভাষার এই বিপ্লব

১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০৮ সাল....
শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ২০০৩ ব্যাচের কয়েকজন স্টুডেন্ট থিসিসের টপিক হিসেবে বেছে নিলেন একটি বেসিক সার্চিং সিস্টেম। সেটি ডেটাবেইস থেকে সার্চ করে তথ্য সরবরাহ করতে পারতো। ধীরে সুস্থে এটিকে পরিণত করা হয় একটি বিজনেস ইনফো সার্চিং সিস্টেমে। সেই সময় এই সিস্টেমটি ইয়েলো পেজ ডিরেক্টরী থেকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতো এবং সার্চের রেজাল্ট হিসেবে কাংখিত প্রতিষ্ঠানের ইনফরমেশন প্রোভাইড করতো। এতে তখন প্রায় ৬০,০০০ প্রতিষ্ঠানের ডেটা ছিলো। এটিকে তখন একটি বেসিক বিজনেস সার্চ ইন্জিনে পরিণত করা হয় এবং নাম দেয়া হয় একুশে ফিন্যান্স। এতে সংযুক্ত করা হয় শেয়ার মার্কেট এনালাইসিসের টুল।


তৎকালীন একুশে ফিন্যান্স



এই একুশে ফিন্যান্স ২০০৯ সালে সিটি ফিনানশিয়াল আইটি কেইস কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করে এবং জিতে নিয়ে আসে রানার্সআপ প্রাইজ।


সেই থেকে শুরু......
২০০৪ ব্যাচের কয়েকজন স্টুডেন্টের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে তৈরি হয় ওয়েব ক্রলার এবং নজর দেয়া হয় বাংলা সার্চিং এর দিকে। ডেটাবেইজ সার্চিং থেকে সরে এসে হাত দেয়া হয় ইনডেক্সবেইজড সার্চের দিকে। আস্তে আস্তে একটা শক্তিশালী সার্চ ইন্জিনের রুপরেখা দাড় করানো হয়।
২০০৫ ব্যাচের একটি থিসিস গ্রুপ এই কাজটাকে অনেকদুর এগিয়ে নেয় এবং এটিকে একটি বেসিক বাংলা সার্চ ইন্জিনের কাঠামো হিসেবে দাড় করিয়ে ফেলেন ২০১০ সালের শেষের দিকে। উনারা ডেটাবেইস কোর্স প্রজেক্ট হিসেবে একটা ছোট স্কেলের সার্চ ইন্জিন বানিয়েছিলেন পিপীলিকা নামে। এই দুটো প্রজেক্টকে মার্জ করে শুরু হয় মূল সার্চ ইঞ্জিনের কাজ। তখনের পিপীলিকার লোগো ছিলো এটা।




ইন্জিনটি অংশ নেয় সিলেট রিজিয়নের ডিজিটাল ইনোভেশন ফেয়ারে এবং জিতে নেয় ১ম পুরষ্কার। কম্পিউটার জগতে একটি ফিচারও আসে এটি নিয়ে। (উপরের বামের ছবি)




নতুন নাম ঠিক করা হয় পিপীলিকা। পিপীলিকা তখন বাংলা এবং ইংরেজী দুই ভাষাতেই সার্চ করতে পারা শুরু করে। জিতে নেয় ২০১১ সালের ন্যাশনাল কলেজিয়েট সফটওয়্যার কনটেস্টের চ্যাম্পিয়নের খেতাব।

২০০৬ এবং ২০০৭ ব্যাচের বেশ কয়েকজন স্টুডেন্ট কাজ শুরু করেন বাংলায় ন্যাচরাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং নিয়ে যেটা পিপীলিকার পারফরম্যান্স বাড়াতে সহায়তা করে।
এতদিন পিপীলিকার উন্নয়ন চলছিলো শুধুমাত্র অনেক স্টুডেন্ট এবং কয়েকজন টিচারের উৎসাহে। কিন্তু পিপীলিকার সম্ভাবনা দেখে গ্রামীণফোন আইটি (জিপিআইটি) সাস্টের সাথে চুক্তি করে ফান্ডিং দিতে রাজী হয় পিপীলিকার প্রফেশনাল ডেভলপমেন্টে। চুক্তি সাক্ষর হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে।
তারপর ড: মু: জাফর ইকবাল স্যারের তত্বাবধানে পিপীলিকার ডেভলপমেন্ট শুরু হয়ে ডিপার্টমেন্টের সফটওয়ার হাউজে। ২০০৪ ব্যাচের প্রাক্তন কয়েকজন স্টুডেন্ট এসে জয়েন করেন ডেভলপমেন্ট টিমে। টিমের লীডার হিসেবে অফিশিয়ালী দায়িত্ব নেন রুহুল আমিন সজীব স্যার। ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ ব্যাচের কয়েকজন স্টুডেন্ট পড়াশোনা শেষ করে জয়েন করেন এই টিমে। শুরু হয় স্বপ্নযাত্রা।
খুব দ্রুতই পিপীলিকার বেটা ভার্সনের কাজ শেষ হয়। আজ ১৩/৪/১৩ তারিখে অফিশিয়ালী রিলিজ করা হচ্ছে পিপীলিকার বেটা ভার্সন। পহেলা বৈশাখে বাঙালীরা শাবিপ্রবি আর জিপিআইটির পক্ষ থেকে পাবে নতুন উপহার। বাংলা ভাষার সার্চ ইন্জিন।

পিপীলিকার বর্তমান ডেভলপমেন্ট টিমে কাজ করছেন ১১ জন। ওনারা হলেন
• মাহবুবুর রহমান তালহা
• মো: মহিউদ্দীন মিশু
• তালহা ইবনে ইমাম
• তৌহিদুল ইসলাম
• সাজ্জাদুল হক
• বাকের আনাস
• ফরহাদ আহমেদ
• মো: মাকসুদ হোসাইন শিবলী
• থিম্পু পাল
• আসিফ সামির এবং
• মধুসূদন চক্রবর্তী।

পিপীলিকা নাম এবং লোগো এসেছে ২০০৫ ব্যাচের আহমেদ চিশতী এবং বুরহান উদ্দিনের সেই প্রজেক্ট থেকেই।

পিপীলিকা বর্তমানে বেটা ভার্সন চলছে pipilika.com এ। এর পারফরম্যান্স ভালো করার কাজ চলছে এবং চলতেই থাকবে। এখন হয়তো বেশ কিছু সার্চ রেজাল্ট পারফেক্ট আসবে না। কিন্তু সার্চিং বাড়ার সাথে সাথে এগুলো খুব দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। পিপীলিকা তে বাংলায় ন্যাচরাল ল্যাগুয়েজ প্রসেসিং নিয়ে কাজ করা হয়েছে যা গুগল ইউজ করেনা। সুতরাং আত্মবিশ্বাসের সাথে বলা যায় বাংলা সার্চিং এর জন্য পিপীলিকাই সেরা।

পিপীলিকার পারফরম্যান্স বাড়াতে আপনার কোন সাজেশন থাকলে সার্চ ইন্জিনের ফিডব্যাক পেজে আমাদের জানান। সবার সহযোগিতায় পিপীলিকা খুব শীঘ্রই পরিণত হবে একটি শক্তিশালী বাংলা সার্চ ইঞ্জিনে।
কারণ এর মূল ভাষা বাঙালীর ভাষা বাংলা আর বাঙালী সবই পারে।
জয় বাংলা


পিপীলিকা নিয়ে কোন সাজেশন থাকলে, কি কি ফিচার দেখতে চান ভবিষ্যতে জানাতে চাইলে জানাতে পারেন এই লিংকে

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪৩
১১২টি মন্তব্য ৮৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×