somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সচেতন হই, সোচ্চার হই

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন স্কুলেও ভর্তি হইনি। বাসায় আবিষ্কার করলাম বুড়োমত এক লোক। জানতে পারলাম, ইনি হলেন হুজুর। আমাকে আরবি পড়াবেন। পুরোপুরি মনে নেই, কিন্তু আমার প্রথম সূরা এবং পবিত্র কোরান শরিফেরও প্রথম সূরা ফাতিহা এই হুজুরই আমাকে মুখস্থ করান। মনে আছে, মুখস্থ করার পর এক অন্যরকম পবিত্রতায় ভেসে গিয়েছিল শিশুমন। সামনে যাকে পেতাম তাকেই তেলাওয়াত করে শোনাতাম সূরা ফাতিহা। তিনিই আমাকে শুদ্ধভাবে সালাম দিতে শিখিয়েছিলেন। মাফ চাইছি তাঁর নামটি ভুলে যাবার জন্য।

দ্বিতীয় হুজুর আঃরহমান পড়ানো শুরু করেন স্কুলে ভর্তি হবার পর। যিনি এর পরের একটানা ১০ বছর পড়ান। এত সুন্দর করে পড়াতেন তিনি যে ফাঁকি দেবার কথা মনেও আসত না। তাঁর তেলাওয়াত শুনলে মন অন্যরকম হয়ে যেত। কোনরকম গবেষ্ণা ছাড়া শুধুমাত্র ভালবাসা দিয়ে যে সব জয় করা যায় এই হুজুরের কাছ থেকে শিখেছিলাম। আরবি পড়ানো ছাড়াও মানুষের ভাল কিভাবে করতে হয় সেই নৈতিক শিক্ষাও ছোটবেলায় আমার মধ্যে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করেছেন আজীবন।

প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস, " জ়োছনা ও জননীর গল্পের" মুনশি ইরতাজউদ্দিন। স্থানীয় স্কুলের হেডমাস্টার এবং মসজিদের ইমাম। উপন্যাসটিতে এই ভদ্রলোকের কথা পড়তে গেলে চোখে পানি আসবেই।

ছোটবোনের স্কুলের এক অভিভাবকের দুই ছেলে। এক ছেলেকে স্কুলে দিয়েছেন, আরেক ছেলেকে মাদ্রাসায়। যে ছেলে মাদ্রাসায় থাকে তাঁর কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন এভাবে," জানেন, আমার ছোট ছেলেটা মাদ্রাসায় থাকে, প্রতি সপ্তাহে যখন আসে, আমার বাসাটাকে মনে হয় যেন বেহেশত, এতটুকুন ছেলে, ফজরের নামাজের সময় উঠে। আমাকে আর তার বাবাকে যেভাবে সম্মান করে, যেভাবে যত্ন নেয় এই ছোট বয়সেই, আমার মনে হয় আমার জীবন সার্থক এমন ছেলের মা হতে পেরে"।



যে তিনটি ঘটনার উল্লেখ করা হল, আসল ইসলাম এর চেয়ে অনেক বেশি মানবিক, অনেক অনেক বেশি মহিমান্বিত,বিশাল। কিন্তু জামাত-শিবিরের কর্মকান্ড দেখলে কি আর এ কথা বিশ্বাস হতে চায়?

আজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর ১২ ইসলামী সংঘটন মহাসমাবেশের নামে তাণ্ডব চালায়। তাঁদের দাবি, আল্লাহ এবং রাসুল(সঃ) এর উপর যে বেয়াদবি যারা করেছেন তাদের ফাঁসি। যে ব্লগারের নামে তারা দোষারোপ করছেন তিনি আর বেঁচে নেই। তাঁরা সমস্ত ব্লগারদের ফাঁসি চান ! কী পরিমাণ ভুল পথে তাঁদের পরিচালিত করা হচ্ছে।
তাঁদের বোঝানো হয়েছে, শাহবাগে যারা আন্দোলন করছেন তাঁরা মুরতাদ! আমরা জানি, মাদ্রাসা শিক্ষা এখনও ততটা আধুনিক নয়। খোদ ঢাকাতেও এমন অনেক মাদ্রাসা পাওয়া যাবে যেখানে কম্পিউটার নেই, ইন্টারনেট নেই। টিভি থাকতে পারে, সেটা খুললেই তাঁরা দেখতে পায়, তাঁদের উপর আক্রমণ হচ্ছে, তারাও আক্রমণ করছে! কোন কোন চ্যানেল তাদের দোষারোপ করছে। এতে করে তাদের মধ্যেও আক্রমণের নেশা জেগে উঠে। ঢাকার বাইরের মাদ্রাসার কথা ছেড়েই দিলাম।

কজন আলেম আছেন,যারা মাদ্রাসায় পড়ান, তারা সত্যটা তাদের ছাত্রদের সামনে তুলে ধরেন ? কজন হুজুর তাদের বোঝান, যে শাহবাগের আন্দোলন ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, এ দেশীয় দোসর রাজাকারের সর্বোচ্চ শাস্তির বিরুদ্ধে ?

আলেম উলামারা ইসলামের পথে আমাদের সাধারণ মুসলমানের চাইতে আরো কঠোরভাবে চলেন।তারা কেন পুলিশ, সাংবাদিকের উপর চড়াও হবেন, কেন সাধারণ মানুষের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরবেন? ইসলাম কি আমাদের সে শিক্ষা দেয় ? হাদীসে কি এমন একটি কথা নেই, "যখন তোমাদের কেউ খারাপ কথা বলে, তখন নীরব থাক, কারণ যে খারাপ কথা বলেছে তার ঠোঁটে আরেকটি খারাপ কথা অপেক্ষা করছে, তুমি কিছু বলা মাত্রই সে সেটা বলে উঠবে "

কোন ধর্মে জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলার শিক্ষা দেয়? মসজিদের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদের শিক্ষা দেয়? এ দেশটা কি আমার মত আপনারও না ?




নাস্তিক রা মনে প্রাণে সকল স্রষ্টা কে ঘৃণা করেন। কোন স্রষ্টাকে মানেন না সেটা ফলাও করে প্রকাশ করার কিছু নেই। লেখার বিষয়ের কোন অভাব থাকতে পারেনা। কিন্তু তাদের মূর্খামি প্রকাশ পায়, যখন স্রষ্টা হিসেবে তারা কেবল আল্লাহ কে খুঁজে পান! তাদের লেখা পাঠ করলে রম্যরচনা পাঠের আনন্দ হয়। ইসলাম কে না জেনে কেন যে লিখতে যান। খুব সম্ভব গালাগাল এবং হিট এর জন্যে ! নাস্তিকদের নতুন আমদানিকৃত ছাগু বল্লেও ভুল হবেনা বৈকি!

ছাগুদের নিয়ে কিছু বলার নেই। তারা এমনিতেই হিট! আমার মত নাদান ব্লগারের কথায় তাদের কিছু যাবে আসবে না (আমারো না)। শুধুমাত্র ইসলাম কে পুঁজি করে,দেশের ৯০ ভাগ মানুষের আবেগ কে পুঁজি করে কোন খারাপ কিছু জায়েজ করার আগে চিন্তা করে নেবেন, ইসলাম আপনাকে কি শিখিয়েছে! আপনি নিজে কী হতে পেরেছেন।



৪২ বছর আগের কৃতকর্মের শাস্তি পাবেন রাজাকাররা। তারা হয়ত কল্পনাও করেনি, এত বছর পর তাদের শাস্তি হতে পারে। আমরা সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি কতখানি শ্রদ্ধাশীল, এটা বোঝা যায়, শাহবাগেই অবস্থিত কুখ্যাত গোলাম আযম চিকিৎসাধীন থাকলেও কেউ তাকে আক্রমণ করেনি। লাখ জনতার একটি করে কথাও তাকে শুনতে দিলে সে এমনিতেও মারা যেত বলে আমার ধারণা।

আমরা সবাই যুদ্ধপরাধীদের বিচার চাই।রাজাকার যে দলের হোক না কেন তার বিচার চাই, তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। কারণ রাজাকারের কোন দল নেই, কোন দেশ নেই। এ বাংলাদেশে কোন রাজাকারের ঠাঁই নেই।

কোন দলের না, কোন গোষ্ঠীর না, কোন ধর্মের না, এ দাবী আপামর জনসাধারণের। এ দাবী আমাদের সবার।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×