১।
রহিম সাহেব। সরকারের একজন
বড়সড় আমলা। থাকেন
গুলশানে নিজের বিশাল ফ্লাটে।
পুত্রসন্তানের আশায় তিন
তিনটে বাচ্চা নিয়েছেন। সফলও
হয়েছেন। তিন নম্বরটা ছেলে। বড়
মেয়ে রিসা ও লেভেলে পড়ে। ছোটটার
নাম ইরা, পড়ে সেভেন। আর
মীন,ছেলেটা প্লেগ্রুপে। এবার
শীতে কি মনে হল তার, দেশের
বাড়িতে বেড়াতে গেলেন।
ছেলেমেয়েগুলো সারাদিন ভার্চুয়াল
জগতেই থাকে। আর বাস্তব জীবন
বলতে ২৫০০ বর্গফুটের ফ্লাটটা। সেই
তিন বাচ্চা সহ স্বস্ত্রীক রহিম
সাহেব তার দেশের বাড়ি আসলেন।
গাড়িটা রাস্তায় রেখে একটু হাটতে হয়
তাদের বাড়ি যেতে। কিন্তু তাদের
দেখে বোধহয় পুরো গ্রামই
চলে এসেছে। বড় মেয়ে সবার আগে।
টাইট জিন্স আর টপস পরিহিতার
চোখের বিশাল গগলসটাই যেন সবার
কাছে উপভোগ্য লাগছে।
হটাৎ মেঝ মেয়ে বলে উঠল “ড্যাড, ও
কিয়া হ্যা?” রহিম সাহেব বললেন,“ও
টা গোবর মা।”
পুচকে ছেলেটা বলে উঠল,“তাহলে বাবা গোবউ
নেই কেনো?” রহিম সাহেব কি উত্তর
দেবেন খুজে পাচ্ছিলেন না।
রিসা তাকে উদ্ধার করল।
অনেকটা সবজান্তা ভাব
নিয়ে বলল,“দ্যাটস বুলশিট”
ইরা সাথে সাথে বলে উঠল,“আগে বললেই
হত!”
পরদিন সকাল বেলা,
মীন খুব অবাক
হয়ে তাকিয়ে আছে উঠোনের দিকে।
হা করে। গুলনাহার বানু, মীনের দাদু,
বলে উঠলেন, দাদু ভাই? কি দেখছ?
ও বলতে পারল না। কিন্তু হাত
দিয়ে দেখিয়ে দিল। লাল নীল
পালকওয়ালা দোপেয়ে কিছু একটা।
গুলনাহার
হো হো করে হেসে উঠলেন। “ও ও ও,
ওটাতো মুরগীরে দাদু ভাই।” সেই ছিল
শুরু তারপর থেকে টানা তিনদিন,
আসার আগ পর্যন্ত মীন আর ইরার
গবেষণার বিষয় ছিল মুরগী।
যথারীতি চারদিনের সফর শেষে রহিম
সাহেব
সপরিবারে ঢাকা অভিমুখে রওনা হলেন।
২।
আজ তিনদিন রহিম সাহেব আর তার
স্ত্রী খুব টেনশনে আছেন। মীন আর
ইরাকে নিয়ে। দুজনেই
ক্ষেপেছে মুরগী চাই। জ্যান্ত মুরগী।
কি আর করা! অগত্যা বাধ্য হয়েই
বাসায় নতুন অতিথি আসল।
একটা লাল দেশী মুরগী। মীন আর
ইরাকে আর দেখে কে! এবার অবশ্য
এগিয়ে আসল রিসা। তাদের মুরগী ।
একটা সেলফি তুলতে হবে তো!
পরদিন সকাল বেলা।
মিসেস রহিমের চিৎকারে ডাইনিং এ
ছুটে এলো সবাই! একি হাল
ডাইনিং এর! টেবিল চেয়ার রুম সব
নোংরা হয়ে আছে! চারিদিকে মুরগীর
বিষ্ঠা। কিন্তু কোথায় সেই ভিলেন
মুরগী বাবাজি? ওমা সে যে ফ্রিজের
ওপরে উঠে সব দেখছে। সবার
আগে তেড়ে গেলেন রহিম সাহেবের
স্ত্রী। মুরগী আগায় তিনি পেছান। তার
আর মুরগীর ডিফারেন্স সমান থাকে।
এরই মধ্যে আর দুবার প্রকৃতির
ডাকে সাড়া দিল মুরগী। তারপর
তাকে ধরার জন্য শুরু হল জোর
তৎপরতা। কিন্তু কেও আর
ওটাকে ধরতে সাহস করে না। অস্ত্র
হিসেবে সবার কাছেই কিছু না কিছু
আছে। রিসার হাতে টেনিস ব্যাট, ইরার
হাতে ঝাড়ু, মীনের হাতে ক্রিকেট
ব্যাট। তাদের মা আর কাজের
মেয়ে এই
মুরগী বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব
দিচ্ছেন হাতে ফ্রাইয়িং প্যান নিয়ে।
দুই ঘন্টা যাবৎ চেষ্টা করেও যখন
কিছুতেই ধরা যাচ্ছিল না তখন
আসলেন স্বয়ং রহিম সাহেব । এসেই
চুপিসারে মুরগী ধরতে গেলেন, কিন্তু
বিধিবাম! মুরগী দিল লাফ। আর এক
লাফে রিসার মাথায়।
গগনবিদারী আর্তচিৎকারের
মাধ্যমে মুর্ছা গেল রিসা।
তাকে নিয়ে হৈ চৈ শুরু হল। হাসপাতাল
থেকে ডক্টর এল। দু ঘন্টা পর জ্ঞান
ফিরল রিসার। ডক্টর
বললেন,“ব্যাপার না, ভয় পেয়েছিল
তো। প্রতিদিন সকালে ডিম দিবেন
আর ঔষুধতো দিয়েই যাচ্ছি।” ডিমের
কথা বলতেই সবার সেই মুরগীর
কথা মনে পড়ল। কোথায় সে?
সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুজেও
পাওয়া গেল না মুরগীটাকে।
এই বিশাল ঢাকা শহরের কোনো এক
রাস্তায় আছে সেই মুরগীটা।
আপনারা কি দেখেছেন ওই লাল
ঝুটিআলা খয়েরী মুরগীটাকে?
দেখে থাকলে অবশ্যই জানাবেন। আর
রহিম সাহেবরা? তারা আছেন বহাল
তবিয়তে। শুধু একটাই সমস্যা।
তারা কেউ আর মুরগীর মাংস খায় না।।