somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুরগীনামা

২৩ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
রহিম সাহেব। সরকারের একজন
বড়সড় আমলা। থাকেন
গুলশানে নিজের বিশাল ফ্লাটে।
পুত্রসন্তানের আশায় তিন
তিনটে বাচ্চা নিয়েছেন। সফলও
হয়েছেন। তিন নম্বরটা ছেলে। বড়
মেয়ে রিসা ও লেভেলে পড়ে। ছোটটার
নাম ইরা, পড়ে সেভেন। আর
মীন,ছেলেটা প্লেগ্রুপে। এবার
শীতে কি মনে হল তার, দেশের
বাড়িতে বেড়াতে গেলেন।
ছেলেমেয়েগুলো সারাদিন ভার্চুয়াল
জগতেই থাকে। আর বাস্তব জীবন
বলতে ২৫০০ বর্গফুটের ফ্লাটটা। সেই
তিন বাচ্চা সহ স্বস্ত্রীক রহিম
সাহেব তার দেশের বাড়ি আসলেন।
গাড়িটা রাস্তায় রেখে একটু হাটতে হয়
তাদের বাড়ি যেতে। কিন্তু তাদের
দেখে বোধহয় পুরো গ্রামই
চলে এসেছে। বড় মেয়ে সবার আগে।
টাইট জিন্স আর টপস পরিহিতার
চোখের বিশাল গগলসটাই যেন সবার
কাছে উপভোগ্য লাগছে।
হটাৎ মেঝ মেয়ে বলে উঠল “ড্যাড, ও
কিয়া হ্যা?” রহিম সাহেব বললেন,“ও
টা গোবর মা।”
পুচকে ছেলেটা বলে উঠল,“তাহলে বাবা গোবউ
নেই কেনো?” রহিম সাহেব কি উত্তর
দেবেন খুজে পাচ্ছিলেন না।
রিসা তাকে উদ্ধার করল।
অনেকটা সবজান্তা ভাব
নিয়ে বলল,“দ্যাটস বুলশিট”
ইরা সাথে সাথে বলে উঠল,“আগে বললেই
হত!”
পরদিন সকাল বেলা,
মীন খুব অবাক
হয়ে তাকিয়ে আছে উঠোনের দিকে।
হা করে। গুলনাহার বানু, মীনের দাদু,
বলে উঠলেন, দাদু ভাই? কি দেখছ?
ও বলতে পারল না। কিন্তু হাত
দিয়ে দেখিয়ে দিল। লাল নীল
পালকওয়ালা দোপেয়ে কিছু একটা।
গুলনাহার
হো হো করে হেসে উঠলেন। “ও ও ও,
ওটাতো মুরগীরে দাদু ভাই।” সেই ছিল
শুরু তারপর থেকে টানা তিনদিন,
আসার আগ পর্যন্ত মীন আর ইরার
গবেষণার বিষয় ছিল মুরগী।
যথারীতি চারদিনের সফর শেষে রহিম
সাহেব
সপরিবারে ঢাকা অভিমুখে রওনা হলেন।
২।
আজ তিনদিন রহিম সাহেব আর তার
স্ত্রী খুব টেনশনে আছেন। মীন আর
ইরাকে নিয়ে। দুজনেই
ক্ষেপেছে মুরগী চাই। জ্যান্ত মুরগী।
কি আর করা! অগত্যা বাধ্য হয়েই
বাসায় নতুন অতিথি আসল।
একটা লাল দেশী মুরগী। মীন আর
ইরাকে আর দেখে কে! এবার অবশ্য
এগিয়ে আসল রিসা। তাদের মুরগী ।
একটা সেলফি তুলতে হবে তো!
পরদিন সকাল বেলা।
মিসেস রহিমের চিৎকারে ডাইনিং এ
ছুটে এলো সবাই! একি হাল
ডাইনিং এর! টেবিল চেয়ার রুম সব
নোংরা হয়ে আছে! চারিদিকে মুরগীর
বিষ্ঠা। কিন্তু কোথায় সেই ভিলেন
মুরগী বাবাজি? ওমা সে যে ফ্রিজের
ওপরে উঠে সব দেখছে। সবার
আগে তেড়ে গেলেন রহিম সাহেবের
স্ত্রী। মুরগী আগায় তিনি পেছান। তার
আর মুরগীর ডিফারেন্স সমান থাকে।
এরই মধ্যে আর দুবার প্রকৃতির
ডাকে সাড়া দিল মুরগী। তারপর
তাকে ধরার জন্য শুরু হল জোর
তৎপরতা। কিন্তু কেও আর
ওটাকে ধরতে সাহস করে না। অস্ত্র
হিসেবে সবার কাছেই কিছু না কিছু
আছে। রিসার হাতে টেনিস ব্যাট, ইরার
হাতে ঝাড়ু, মীনের হাতে ক্রিকেট
ব্যাট। তাদের মা আর কাজের
মেয়ে এই
মুরগী বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব
দিচ্ছেন হাতে ফ্রাইয়িং প্যান নিয়ে।
দুই ঘন্টা যাবৎ চেষ্টা করেও যখন
কিছুতেই ধরা যাচ্ছিল না তখন
আসলেন স্বয়ং রহিম সাহেব । এসেই
চুপিসারে মুরগী ধরতে গেলেন, কিন্তু
বিধিবাম! মুরগী দিল লাফ। আর এক
লাফে রিসার মাথায়।
গগনবিদারী আর্তচিৎকারের
মাধ্যমে মুর্ছা গেল রিসা।
তাকে নিয়ে হৈ চৈ শুরু হল। হাসপাতাল
থেকে ডক্টর এল। দু ঘন্টা পর জ্ঞান
ফিরল রিসার। ডক্টর
বললেন,“ব্যাপার না, ভয় পেয়েছিল
তো। প্রতিদিন সকালে ডিম দিবেন
আর ঔষুধতো দিয়েই যাচ্ছি।” ডিমের
কথা বলতেই সবার সেই মুরগীর
কথা মনে পড়ল। কোথায় সে?
সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুজেও
পাওয়া গেল না মুরগীটাকে।
এই বিশাল ঢাকা শহরের কোনো এক
রাস্তায় আছে সেই মুরগীটা।
আপনারা কি দেখেছেন ওই লাল
ঝুটিআলা খয়েরী মুরগীটাকে?
দেখে থাকলে অবশ্যই জানাবেন। আর
রহিম সাহেবরা? তারা আছেন বহাল
তবিয়তে। শুধু একটাই সমস্যা।
তারা কেউ আর মুরগীর মাংস খায় না।।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×