১.
ঘুম ভাঙল বড় ফুপুর ডাকে । “উঠ উঠ বেলা হইয়া গেছে ।“ আমি ভাবলাম নয়টা দশটা বাজে হয়ত । দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখি ঘোর অন্ধকার । আমি বলি এত কুয়াশা পড়ছে?
দরজা বন্ধ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়েই বোকা হয়ে গেলাম । ছয়টা বাজে । যাই হোক রেডি হলাম । ট্রাউজারের উপর প্যান্ট । গায়ে গেঞ্জি, তার উপর হুডি তার উপর জ্যাকেট পরেও হুহু করে কাপছি । ফুপি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন,”আজ তেমন শীত পরে নাই । আমার গরম লাগতেছে ।“
এর প্রত্যুত্তরে আমার কিছু বলার ছিলো না । আমি হাটছি । ফুপি আগে আমি পিছনে । আমার কানে হেডফোন । আমি সিম্পল এলগরিদম নিয়ে ভাবছি । আমি গল্প কবিতা গান সবকিছুতেই এলগরিদম ইউজ করি । কাজটা সহজ হয় এতে । তারপরই ফকির বাড়ির কথা মনে পড়ল । বছর ১৫ আগে একবার দাদা নিয়ে গিয়েছিলো আমায় । এইরকম মাঘ মাসের শীত । তারমধ্যে আমার ১০৪ জ্বর । সেই জ্বরের মধ্যে হীমশীতল পানি দিয়ে গোছল করানো হয়েছিলো । সেই স্মৃতি মনে পড়ল হঠাৎ করে । একবার মনে হল ঘুরে যাই । এই সকালে গোছল করা তাও আবার এই ঠান্ডা বাসী পানি দিয়ে, অন্য কেউ পারলে আমি পারব না । কিন্তু ততক্ষনে পৌছে গেছি ।
২।
ফকির বাড়ির ভেতর বেশ কয়েকটা ঘর । একটা ঘরের বারান্দায় ফকিরের চেম্বার । চেম্বারে ঢুকতেই পেট কামড়ানো শুরু করল । না না জীন টিন বা আধ্যাত্মিক কিছু না । আগরবাতির গাঢ় গন্ধই এর কারণ । ফকির বলল দাড়াও ।
-জ্বি আছি ।
-সমস্যা কি?
-মানে? আমার কোনো সমস্যা নাই ।
-ও । কন্ডিশন কি শরীরের?
-ভালই । শুধু গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা ।
-হুম ।
তারপর পায়ের কাছে বসে দোয়া পড়া শুরু করল । আমি সম্পুর্ন ভাবে তৈরি । হিপটোনাইজ হবো না । হাতটাত উঠলে এই যাত্রায় রক্ষে নেই । ওমা । হাত আমার না উনার টাই পেট পর্যন্ত উঠল । দুইবার । আমি ভাবলাম যাক বেচে গেছি । হাত উঠে নাই । উনি বললেন জন্ডিস আছে । মাইটা জন্ডিস । ধরা পরব না চিকিৎসায় । আর কেউ বান দিছে । তখনই টের পেলাম হাত আমার না, উনারটাই উঠছে ।
এই সময় আরেক সেম রোগের রোগী আসল । তাকে ভেষজ ঔষুধ খাওয়ানো হল । মাথায় একটা ছোট্ট মালা । ওই মালা নাকি মাথা থেকে পা পর্যন্ত নামবে । তাও আবার একা একা । আর যে ঔষুধি খাওয়ানো হয়েছে তা পেটের ভিতরে থাকা জাদুকরী ঔষুধ বের করে আনার জন্য । তবে বেচারীর যে ভাবে বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হল তাতে সে তার অন্নপ্রাসনের ভাত বের হয়ে আসবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই । এতক্ষনে আমার কৌতুহলের দম ফুরালো । আমি এই ঔষুধ খাবো না । সে যে কোনো মুল্যেই হোক । অনেক চেষ্টার পর আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত ঔষুধ খাওয়ানোকে মুলতুবী করানো গেলো । তবে আমি আর ফিরছি না এই খানে । যদি ফিরতেই হয় তবে সে কাহিনীও শোনাবো একদিন ।।