somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামায়াতের পাশে আওয়ামী লীগ!

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বগুড়ার সাত উপজেলায় তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় মামলা হয় ৫৯টি, আসামির সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার। এক বছরে ৪৪টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ৭১৬ জন আসামির মাত্র দুজন এখন কারাগারে, বাকিরা জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।

এদিকে মূল আসামিদের তিনজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা। অভিযোগ আছে, অন্য আসামিদের জামিন পেতে অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা।

‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে’—এই গুজব ছড়িয়ে গত বছরের ৩ মার্চ বগুড়ায় ব্যাপক সহিংসতা চালান জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা। নন্দীগ্রাম থেকে শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর থেকে শেরপুর উপজেলার বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়। নিহত হন ১৩ জন, আহত হন হাজার খানেক। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীর ফাঁসির রায় হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন থেকেই মূলত এসব এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে জামায়াত-শিবির।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব মামলার আসামি জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা যাতে জামিনে মুক্ত হতে পারেন, তার সব চেষ্টাই করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ জন্য জামায়াতের কর্মীদের আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন বগুড়া আওয়ামী লীগের অন্তত সাতজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। একই কাজ করেছেন ইউনিয়ন পর্যায়ের আরও অন্তত ১০ জন নেতা।

জামায়াতের কর্মীকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা যেহেতু এলাকায় রাজনীতি করি, তাই এলাকার শত শত মানুষ আমাদের কাছে চাকরিসহ বিভিন্ন কারণে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে যদি কেউ তা জামিনের জন্য আদালতে ব্যবহার করে, তাহলে আমাদের কী করার আছে!’

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিমও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাজাহানপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলীপ কুমার এবং যুবলীগের নেতাদের দেওয়া প্রত্যয়নপত্র দেখে তিনি দুজনের জামিনের জন্য আইনি সহায়তা দিয়েছেন। পরে এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তিনি এ ধরনের সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেন বলে দাবি করেন।

রেজাউল করিম জানান, গত মাসে জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের এক সভায় এ ধরনের জামিনের ক্ষেত্রে সহায়তা না করার সিদ্ধান্ত হয়। মামলায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সহায়তা করায় আওয়ামীপন্থী সাত আইনজীবীকে সতর্কও করা হয়েছে।

কাহালু পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলালউদ্দিন কবিরাজ প্রত্যয়নপত্র দেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত জামায়াতের এক কর্মীকে। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ জন্য হেলালউদ্দিনকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। মোখলেসুর রহমান নামের জামায়াতের এই কর্মীকে আওয়ামী লীগের কর্মী বলে সুপারিশ করার কথা স্বীকার করেন হেলালউদ্দিন কবিরাজ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য আওয়ামী লীগ করে, তাই আমি তাকে প্রত্যয়নপত্র দেই। এ নিয়ে বিতর্ক ওঠায় এখন আর প্রত্যয়নপত্র দিচ্ছি না।’

নন্দীগ্রাম উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বগুড়া যুবলীগের সহসভাপতি রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ একাধিক আসামিকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। ফোনে যোগাযোগ করা হলে রেজাউল আশরাফ বলেন, এই আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুরোনো আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে নব্য আওয়ামী লীগারদের একটা চক্রান্ত।

আওয়ামী লীগের নেতাদের করা মামলা থেমে আছে: ৫৯ মামলার ২৫টি করেছে পুলিশ, তিনটি করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বাকিগুলো সরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে করা। পুলিশের মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের করা মামলাগুলো এগোচ্ছে না।

জানা গেছে, মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য জামায়াতের নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা পুলিশের কাছে পাঠিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

যোগাযোগ করা হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অজ্ঞাতনামা এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে আসামি করার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া হলো। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের নষ্ট রাজনীতি। এতে যারা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যারা নির্দোষ মানুষ, তাদের ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে।

তিন আসামি চেয়ারম্যান: নন্দিগ্রাম উপজেলা থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মণ্ডল দুই মামলায়, শেরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান এবং উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক দবীয়ুর রহমান হত্যাসহ মোট ১০টি মামলা, শিবপুর উপজেলা থেকে নির্বাচিত বগুড়া জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আবু নসর মোহাম্মদ আলমগীর হুসেইনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হলেও জামায়াতের এই তিন নেতা সম্পর্কে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কোনো প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি।

উপজেলা আইন অনুযায়ী, কোনো জনপ্রতিনিধি কোনো মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হলে তাঁকে সরকার বহিষ্কার করতে পারবে। নির্বাচিত হওয়ার পর অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিকে শপথ করানো থেকে বিরত রাখার নিয়ম রয়েছে।


জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহ কামাল বলেন, মামলার অভিযোগপত্রে নাম থাকলে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী উপজেলা চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করা যায়। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:২৯
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×