somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিস - পর্ব ৩

০৮ ই জুন, ২০১২ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সক্রেটিস পর্ব- ১
সক্রেটিস পর্ব- ২
শায়মা আপিকে কথা দিয়েছিলাম, আমি সক্রেটিস নিয়ে লিখবো। সেই কথা রাখতেই এই লেখা শুরু করা। এর আগে সক্রেটিসের জম্মপরিচয় আর সক্রেটিস এর শিক্ষার পদ্ধতি বা যে পদ্ধতিতে তিনি জ্ঞান অহরন করতেন সেই সম্পর্কে বলা হয়েছে। আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো সেই সময় তরুণেরা কেন সক্রেটিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলে এবং তাঁকেই পথনির্দেষক হিসেবে ভাবতে শুরু করেছিলেন।

কুৎসিত-দর্শন, দরিদ্র, পৌঢ় সক্রেটিসের দেবার মতো তেমন কিছু ছিলো না। শাসকবর্গের প্রিয়পাত্র ছিলেন না তিনি, উঁচু মহলের সঙ্গে ছিলো না কোনো যোগাযোগ, কোনো কিছুরই ধার ধারতেন না তিনি। তাহলে? এর একটা ছোট্ট জবাব হচ্ছে, যারাই তাঁর সংস্পর্শে আসতেন, তারাই প্রবেশ করতেন এক মহত্তর উন্নতর জীবন-বৃত্তে। 'অন্যদের উন্নত করার' অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো তাঁর। চুম্বকের মতো আকর্ষণ শক্তি ছিলো সক্রেটিসের ব্যক্তিত্বের, তাঁর সান্নিধ্যে এলে মোহগ্রস্ত অভিভূত এবং পরাস্ত না হয়ে উপায় থাকতো না কারো। তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলোঃ 'মানব্জাতির নৈতিক উন্নতি সাধন। এ কাজ তো আর নৈতিক উপদেশ বিতরণ করে হয় না, একমাত্র ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপন এবং মানুষকে তাদের নিজেদের মুখোমুখি হবার কাজে প্রবৃত্ত করার ভিতর দিয়েই এটা হতে পারে।'
এ জিনিসটাকেই আত্মজ্ঞান বলা হচ্ছে। নিজের ভেতরটা খোঁড়াখুড়ি করা, ভিতরে যা কিছু আছে তার সবটাই বুদ্ধি ও যুক্তির পরিস্কার আলোতে মেলে ধরা। সক্রেটিস কিন্তু কারো হাতে আত্মজ্ঞান তুলে দিতে পারেন নি- কোনো প্রশ্নেরই চূড়ান্ত জবাব দেবার চেষ্টা তিনি করেন নি। তাঁর কোনো সুসম্পূর্ণ দর্শনও নেই। কারন তিনি জানতেন, তিনি কিছুই জানেন না

তিনি শুধু মানুষকে সংক্ষুব্ধ করে করে তুলতে পারতেন, বিরামহীম জিজ্ঞাসার যন্ত্রণায় তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিতেন। তাঁর সঙ্গে কথা শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই যে কোনো জ্ঞানগর্বিত মানুষের অহঙ্কার খসে পড়তো, তার ভেতরের দৈন্য প্রকাশ পেয়ে যেতো, তিনি তখন উপলব্ধি করতে পারতেন, যেসব ধ্যান-ধারনা, মূল্যবোধ বিশ্বাস, মত, সংস্কার নিয়ে তিনি এতকাল জীবন কাটিয়ে এলেন, তার কোনো কিছু সম্বন্ধেই তাঁর স্পষ্ট জ্ঞান নেই।

সক্রেটিসের সঙ্গে আলাপের পরে জ্ঞানগর্বিত ব্যক্তিটির মনে দেখা দিতো এক প্রচন্ড লজ্জাবোধ, অজ্ঞানতার মধ্যে ডুবে থাকার লজ্জাবোধ, কিছুই না জেনে বাগাড়ম্বরকে প্রশ্রয় দেয়ার লজ্জা, দেখা দিতো একধরনের হীনতার উপলব্ধি। তা ঐ অজ্ঞানতা সম্বন্ধে সচেতনতা থেকেই জন্ম নিতো। মানুষটি তখন পড়ে যেতেন একরকম আত্মিক সংকটের মধ্যে। তাই বলা চলে যে মানুষের অস্তিত্বের গভীর প্রলয়ঙ্কারী ঝড় সৃষ্টি করার নাম ছিলো সক্রেটিস। এই প্রলয়ঙ্কারী ঝড় শেষ পর্যন্ত জাগিয়ে তুলতো প্রবল জীবনতৃষ্ণা, মনুষ্যজীবনের শ্রেষ্ঠতার বোধ এবং শ্রেয়কে অনুসন্ধান ও প্রাপ্তির ক্ষন্তিহীন বাসনা।

বলে রাখা ভালো, সক্রেটিস মানুষের সাথে কথা বলতেন, পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে, ভোজসভায়, উৎসব-অনুষ্ঠানে, উন্মুক্ত প্রান্তরে যেখানে লোকের সমাগম হয়। আর তার সাথে কথার তর্কে নেমে কেউ যখন তার জ্ঞানের ভান্ডার খুলে দিচ্ছে, তখন সেসব শুনতেও ঘিরে থাকতো উৎসাহী জনতা। চিরচেনা সুপন্ডিতদের বয়স্ক সক্রেটিসের কাছে নাকাল হতে দেখে তখনকার যুবকেরা-তরুনেরা সক্রেটিসের কাছে আসতেন তার কথা শুনতে। আর তিনিও যুবকদের কাছে যেতেন। কেননা, তরুণেরাই সকল সময় চিন্তা করতে প্রস্তুত থাকে। যা জানে তা নিয়ে সর্বদা গর্বিত থাকে না।

শুধুই কি সক্রেটিসের কথা শুনতে আসতো? না। তরুণেরা তাঁর কাছে আসতো নানা করণে। কেউ আসতো ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠির সন্ধান পেতে, কেউ আসতো সক্রেটিস যেভাবে অন্য লোকের অজ্ঞানতা ও নির্বুদ্ধিতা নির্মমভাবে উদোম করে দিতেন তা দেখতে। এথেন্সের রাজনৈতিক জীবনে কিভাবে সফল হওয়া যায় সে শিক্ষাও নিতে কেউ কেউ আসতো।

কি বিষয় নিয়ে সক্রেটিস আলোচনা করতেন? একে আলোচনা বা তর্কও বলা যায়। হ্যাঁ এটা গুরুত্বপুর্ণ। তার আলোচনার বিষয়গুলো বেশ অদ্ভুত। যেমনঃ জ্ঞান, সাহস, সংযম, ন্যায় কি? সততা কি? ধর্ম কি? কর্তব্য কি? আবার এগুলোর একটার সাথে অন্যটির সম্পর্কই বা কি। একটি আদর্শ রাষ্ট্রের উপাদান কি হবে? সেখানে কার দায়িত্ব কি হবে? এমন হাজারো বিষয়ে তিনি আলোচনা করতেন।

সে সময় এথেন্সে যে সামাজিক জীবন, জীবনবোধ, প্রচলিত ব্যবস্থা, ধর্মীয় অনুশাসন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই সবকিছু নিয়েই তিনি কথা বলেছেন। এমনকি যে সকল খাদগুলো আছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। এগুলোর যে পরিবর্তন দরকার তার দাবী জানিয়েছেন। কি করা উচিত তার সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। বিশেষ করে 'প্লেটোর রিপাবলিক' এবং 'ফিডো' তে সক্রেটিসের চিন্তাধারা, দর্শন ফুটে উঠেছে।

কেন জানি মনে হয় এই সময় আমাদের একজন সক্রেটিস দরকার। তবে ভয় হয়, এই সময় সক্রেটিস এলে গুম হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। (শেষ ছত্রটি একান্ত ব্যাক্তি গত। তাই যাদের ভালো লাগেনি তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।) কাল 'প্রেম' সম্পর্কে সক্রেটিসের মনোভাব জানবো।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×