somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাভারের আহতদের জন্য রক্তদান কর্মসূচি : প্রিয় গনজাগরন মঞ্চ, আজ হতাশ করলে আরো একবার

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় শাহবাগের গনজাগরন মঞ্চ,

আমাকে আজ যথারীতি অবলীলায় হতাশ করলে আরেকবার । হয়তো তোমার থেকে প্রত্যাশা সবসময় অনেক বেশি ছিলো বলেই তুমি হতাশ করতে পেরেছো বারবার । ভুলটা বোধহয় আমারই ।

সকাল ১১টার দিকে শাহবাগ পৌছলাম । গতকাল রাতে ফেসবুকে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের জন্য যেমন আহাজারি দেখলাম পারলে রাতেই চলে যেতাম । বাসে করে শাহবাগে পৌছানোর আগ পর্যন্ত কল্পনায় ছিলো ওখানে উপচে পড়ছে মানুষ, কমপক্ষে ১৫ - ২০ টা বেডে রক্ত নেয়া হচ্ছে অবিরাম, সাথে সাথে গাড়িতে করে তরল জীবন ছুটে যাচ্ছে সাভারের মৃত্যু কূপে । গিয়ে আমি মোটামুটি থ । মানুষ আছে ঠিকই, কিন্তু সকাল ১১টা বাজেও রক্ত নেয়া শুরু হয় নি । কিছুটা হতভম্ব অবস্থায় নাম এন্ট্রি করালাম । ব্লাড গ্রুপ ও নেগেটিভ শুনে নাম এন্ট্রির ডেক্সে বসা ভাইয়া একটু নড়ে চড়ে বসে বললেন বিকেল তিনটার দিকে আসতে!! তারাই ফোন দেবেন । কি আশ্চর্য!!! সাভারে নাকি নেগেটিভ ব্লাডের জন্য মানুষ কাতরাচ্ছে আর এরা রক্ত নেয়া শুরুই করবে বিকেল ৩টায় । পাঠাবে কখন তাহলে? ভাবলাম সাভারই চলে যাবো কিনা । কিন্তু সকালে ওখানকার এক ফ্রেন্ডের থেকে শুনলাম এনাম মেডিক্যালের আশেপাশে যাওয়াই নাকি প্রায় অসম্ভব । পুলিশ কাউকেই ঘেষতে দেয় না । ওখানে পরিচিত কেউ নেই তেমন, আমার একেবারেই অপরিচিত এনাম মেডিক্যালে এমন হাজারো মানুষের মধ্যে ঢুকতে পারবো বলেও তেমন ভরসা হলো না । মতিঝিলে কোথায় কি হচ্ছে খবর পেলাম না, কাজেই রাজাকারের বিচার চাওয়া লাখো মানুষকে হতাশ করার পরও আস্থা ছিলো শাহবাগেই ।

ঘড়ির কাটা তিনটা গড়িয়ে কিছুটা এগিয়েও গেলো । কোন খবরই নেই । গেলাম আবার । মানুষ যথারীতি ভালোই আছে । অনেক দূর - দূরান্ত থেকে মানুষ চলে এসেছে, কারো কোলে বাচ্চা, কারো কলেজের ব্যাগ ,কারো বা অফিসের অ্যাটাচি । সাড়ে তিনটা বাজার পরেও দেখি কোন নামগন্ধও নেই কাজ শুরু করার । তারা নিবিষ্টমনে কেবল নাম লিখেই যাচ্ছেন । অথচ অনেক মানুষ দাড়িয়ে আছেন সেই সকাল থেকে । অবশেষে এক মাঝবয়সী মহিলা ডেক্সে বসা আপুকে খুব যৌক্তিক প্রশ্নই করলেন - " আপনার এতো প্রচারণা চালালেন রক্ত নেওয়ার অথচ এখানে কোন ম্যানেজমেন্টই নেই । রক্ত যখন নিচ্ছেনই না তাহলে এভাবে মানুষের ভোগান্তি বাড়ানোর মানে কি? অপেক্ষারও তো একটা সীমা আছে । আপনারা না নিতে পারলে আমাদের বলুন, আমরা অন্য কোথাও যাই । এমনভাবে সারাদিন তো অযথা নষ্ট করতে পারেন না । "

আপু বিরক্তিতে মাথা চেপে ধরলেন এবং চটাং চটাং কিছু কথা শোনালেন । বোঝা গেলো তিনি একাজে বেশ দক্ষ । একসময় পাশের ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বললেন, " এতো কথা বলার কি আছে একটা মানুষের সাথে? "

মানুষের বিরক্তি বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে । আশপাশ দিয়ে অযথা গুরুত্বপূর্ণ ভাব নিয়ে চলা অনেক পাঞ্জাবী গায়ের কবিসুলভ মঞ্চের কর্মীদের মধ্যে থেকে একজনকে ধরলাম ।
- ভাই, আর কতক্ষণ?
- হবে। ডাক্তাররা আসুক আগে ।
- মানে?
- ডাক্তাররা রাস্তায়। তারা আসছেন। দেরী হবে আরেকটু ।
- সারাদিন কি করলেন আপনারা তবে? সকাল থেকে রক্ত নিলে তো অনেক ব্যাগ কালেক্ট করে পাঠিয়ে দিতে পারতেন।
- সকাল থেকে তো রোদ ছিলো। তাই নেওয়া যায় নি।

এ কোন ম খা আলমগীরের পিলার নাড়াচাড়া টাইপ অযুহাত? রোদ থাকলে রক্ত নেয়া যাবে না কেন? যে মানুষগুলো দুই - তিন ঘন্টা গাড়িতে করে এসেছে তাদের জন্য রোদ কি কোন ব্যাপার? আর তেরপল টানিয়ে তো অনেকখানি জায়গা ঠিকই ছায়া বানিয়ে রাখা হয়েছে । ওখানে কেন নেয়া হলো না? নিজেদের আড়মোড়া ভাঙ্গতে দেরী হওয়ার দায় কিভাবে তারা রোদের উপর চাপান? আর সারাদিন কোন ডাক্তারের ব্যবস্থা না করে তারা কেবল নামই লিখে গেছেন! এমনটা কেন হবে? গনজাগরন মঞ্চ কি কোনদিক থেকে কোন কালে কম পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলো? ডাক্তারের ব্যবস্থা না করেই মানুষকে সারাদিন কেন রাখা হলো? এই মানুষগুলো তো অন্য কোথাও রক্ত দিলে তা এতোক্ষনে কাজে লেগে যেতো। মঞ্চ কেন সার্বক্ষণিক ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে পারবে না? কথা বলার সময় তো কথা কম বলা হয় না, কাজের সময় এই অবস্থা কেন? ইমরান এইচ সরকারই বা কই? সে কি ডাক্তারি ভুলে গেছে?

এসব প্রশ্ন করার আগেই পাঞ্জাবীওয়ালা হাওয়া । সারাদিন এক ব্যাগ রক্তও না নিয়ে, ডোনারদের অনেককে সারাদিন বসিয়ে রেখে অবশেষে রক্ত নেয়া শুরু হলো পাঁচটারও পর । যথারীতি ক্যামেরা ম্যানিয়া । প্রথম দিকে রক্ত দিচ্ছেন একজন, ক্যামেরা তাক হয়ে আছে তিনটা, এক সাংবাদিক আবার মাইক্রোফোন নিয়ে রেডি!

ভন্ডামি ভন্ডামি ভন্ডামি ।

অবশেষে আমার রক্ত নেয়া শেষ হলো ছয়টার দিকে । এই রক্ত সাভার যাবে কখন? ততক্ষনে কি এই রক্ত শরীরে নেয়ার মতো কোন রোগী কি জীবিত থাকবে? দাড়িয়ে আছেন আরো কয়েকশ ডোনার ।

যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা প্রবাদটা আমি জানি । প্রচন্ড আকর্ষনে কাছে টেনে নিয়ে একসময় দলীয়করণ করে আমাদের ঠকানোয় আর হাস্যকর কাজ কর্ম করে শাহবাগ মনে এখন বিরক্তির জায়গাটাই নিয়ে আছে বলেই হয়তো এতো বিষোদাগার করছি । কিন্তু ভুল কিছুকি বললাম? সাধারণ মানুষের একজনের আরোকজনের পাশে দাড়ানোর ক্ষমতাটা কি আপনারা কমিয়ে দিলেন না? সকাল থেকে রক্ত নিলে কি আরো কয়েকটা জীবন বাঁচত না? আপনাদের কার্যক্রমের জন্যে আমরা সবাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আপনাদের জন্য গর্ববোধ করি যেমন সত্য, তেমনই সত্য আমার এখন মনে হচ্ছে " এক হাত কাঁকুড়ের তের হাত বিঁচি " টাইপ কিছু দেখে আসলাম । আমার কোন প্রশ্নের জবাব মঞ্চের উচ্চমার্গীয় কেউ দেবেন না জানি, কিন্তু মানুষের অন্তত রক্তগুলো যেনো সময়মতো কাজে লাগানো হয় , বিপ্লবী চেতনার মতো ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা না হয় । আপনাদের কাছে এরচেয়ে বেশী আর কিছু চাই না । সম্ভব হলে এটাও চাইতাম না. I am crossing my heart.
২৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে ফেরার টান

লিখেছেন স্প্যানকড, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৩১

ছবি নেট।

তুমি মানে
সমস্ত দিনের ক্লান্তি শেষে
নতুন করে বেঁচে থাকার নাম।

তুমি মানে
আড্ডা,কবিতা,গান
তুমি মানে দুঃখ মুছে
হেসে ওঠে প্রাণ।

তুমি মানে
বুক ভরা ভালোবাসা
পূর্ণ সমস্ত শূন্যস্থান।

তুমি মানে ভেঙ্গে ফেলা
রাতের নিস্তব্ধতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×