somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাইটকুইন

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস্তব এ গল্পের নায়িকা কাপড় কাঁচতে ভালোবাসে ।

অথচ অধিকাংশের কাছে এটা আতংকের কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নায়িকা রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী এবং তার বেলায় এটা কিভাবে প্রিয় কাজের তালিকায় ঢুকে গেলো বলা কঠিন । মন খারাপের বা রাগের সময় তাকে প্রায়ই দেখা যায় চোখ মুখ ফোলা বা কটমট অবস্থায় এক বালতি কাপড় নিয়ে গম্ভীর ভাবে বিশাল ওয়াশরুমের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে এবং ঘন্টা খানেক পরে স্বাভাবিক চেহারায় বের হয়ে আসতে । অবশ্য অত্যাচারিত নিরীহ জামা - কাপড়গুলোর অবস্থা তখন মুমূর্ষু ।

একদিন বালতি ভর্তি কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকার আগ মুহূর্তে একটা ফোন আসলো ।

- তুমি কি ব্যস্ত?
- আমি ব্যস্ত না, মহা ব্যস্ত । বক্তব্য সংক্ষেপে উপস্থাপন করো ।
- আমি তো তোমার হলের সামনে । কাজ একটু পরে করা যায় না?
- হলের সামনে মানে?..... আমি এক বালতি কাপড় ভিজিয়ে ফেলেছি । না ধুয়ে বের হওয়া যাবে না ।

নায়কের নিজেকে সামলাতে একটু সময় লাগে ।
- তোমার ব্যস্ততা কাপড় ধোঁয়া?
- হু । কোন সমস্যা? থাকলে বলো তোমাকেও হুইল ওয়াশিং পাউডার দিয়ে হোয়াইট ওয়াশ করে দেই ।

পাগল ক্ষ্যাপালে জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ার সম্ভবনা । নায়ক ফোনের ওপাশে রাগে দাঁত কিড়মিড় করলেও স্বাভাবিক গলায় বললো,
- নাহ সমস্যা হবে কেন? এটা তো জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ । তা কতক্ষন লাগবে শেষ হতে?
- টিটকারি দিচ্ছো তাই না? দেড় ঘন্টা পর বের হচ্ছি। আমি আসার পর এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ না করলে সংসদে তোমার সদস্যপদ বাতিল।
- দেড় ঘন্টা!! এতোক্ষন আমি একাএকা কী করবো??
- ঘুরাঘুরি করো, হাওয়া খাও। আমার দেড় ঘন্টাই লাগবে। আমাকে টিটকারি দেওয়ার অপরাধে আজকে তোমার কোর্ট মার্শাল। গেট রেডি।

ফোনটা রাখার পর নায়িকা আপন মনে কতক্ষন মিটিমিটি করে হাসলো। আহারে! বেচারা এমনিতেই তাকে যথেষ্ট ভয় পায়। কোর্ট মার্শালের কথায় তো নির্ঘাত পানির পিপাসা পেয়ে যাবে!

কোন কাজ না থাকলে দেড় ঘন্টা সময় কাটানো বিশাল সমস্যার ব্যাপার । নায়ক কি করবে ভেবে পেলো না। ক্যাম্পাসে সে কাউকে চেনে না যে গল্প করে সময় কাটাবে। হলের দারোয়ান এরই মধ্যে গেটের ফাঁক দিয়ে চোখ সরু করে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সময় কাটানোর জন্যে টিএসসিতে কিছুক্ষন বসে থাকা হলো। সময় তো কাটলোই না, বরং আশেপাশের মানুষদের ব্যস্ততা যেন তার ঘড়ির কাঁটাকে করে দিলো নিশ্চল। করার মতো আর কিছু না পেয়ে বেচারা ঘন্টা খানেক কাজী নজরুলের মাজারের পাশের মসজিদে গিয়ে ঘন্টা খানেক ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করে মেজাজ খিটখিটে করে ফেললো।

আর ওদিকে নায়িকার কাজ এক ঘন্টার মধ্যেই শেষ হলেও সে ইচ্ছা করে আধ ঘন্টা পরে বের হলো। নিজের কাছের মানুষটাকে জ্বালানো তার অত্যন্ত প্রিয় কাজ ।

দেখা হওয়ার পর ছেলেটা প্রথমেই চোখ মুখ অন্ধকার করে বললো,
- দেড়টা ঘন্টা অপেক্ষা করালা!

মেয়েটাও হাসিহাসি মুখে গলায় কপট রাগ ফুটিয়ে জবাব দেয় সাথেসাথেই ।
- তো? আমি যে তোমাকে এক জীবন অপেক্ষা করিয়ে রাখি নি তারজন্যে ধন্যবাদ দাও । আর চোখ মুখ শুকনো কেন? সারাদিন কিছু খাও নাই নাকি পেট ব্যথা?

এই আক্রমনের পাল্টা আক্রমনে কি বলা যায় ছেলেটা কিছুক্ষন ভাবলো । মাথায় কিছু আসলো না, কিন্তু কেন যেন মুখে হাসি চলে আসলো । হাসতে হাসতে সে পূর্ণ দৃষ্টিতে পাশে দাড়ানো মানবীর চোখে চোখ রাখে । নিশ্চয়ই তার তখন মনে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা খুব একটা খারাপ না।

.......... গল্পটা মেয়েটার মুখ থেকেই শুনছিলাম । এ পর্যন্ত বলে সে চুপ হয়ে গেলো । আমি ব্যগ্র হয়ে জানতে চাইলাম,
- তারপর?

জবাবটা দেয়ার আগে মানুষটা জীবনে দেখার অভিজ্ঞতা আছে এমন মানুষদের হাসি হাসে। এক চিলতে হাসি, মনে যার রেশ রয়ে যায় বহুক্ষণ।

- তার আর পর নেই ।

আমার মন বিষণ্ন হয় । পৃথিবীর সব সুন্দরতম সম্পর্ক, গল্পগুলো কেন পূর্ণতা পাওয়ার আগেই সমাপ্ত হয়ে যায় - সে প্রশ্নের জবাব বহু খুঁজে আজও পাই নি ।

বাচ্চা এক ফুলওয়ালী এসে রিনরিনে গলায় তার হাতে ধরা ফুলের তোড়াটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো কিনবো কিনা । গোলাপ বা রজনীগন্ধা না, কনক চাঁপা । ফুল কেনার ইচ্ছা ছিলো না বলে তাকে ফিরিয়ে দিলাম । সে একটু মন খারাপ করে সামনে চলে গেলো এবং তখনই বাতাসে ফুলগুলোর চমৎকার ঘ্রাণ পেলাম । পিছু ফিরে দেখি ফুলওয়ালী ততক্ষণে বেশ দূরে চলে গেছে । আশেপাশের গাড়ির শব্দে আমার ডাক আর তার কানে পৌছবে না । বেশ আফসোস হলো ।

পৃথিবীতে সময় মতো সম্পর্ক, অনুভূতি, আবেগ - এসবের যথাযথ মূল্য বুঝতে না জানা বা চাওয়া উদাসীন মানুষদের দেখলেই চিনতে পারার মতো কোন ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিলো । কারণ এরা হারানোর পর আফসোস করে আর গল্পের নায়িকার মতো অনুভূতিপ্রবণ মানুষগুলোর মধ্যেও অন্যায়ভাবে শূণ্যতা তৈরি করে যায় । প্রথমটা তাদের প্রাপ্য, কিন্তু দ্বিতীয়টা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ।

গন্তব্যে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে হেঁটে রওনা হলাম। হঠাৎ কি মনে করে একটু পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখি মানুষটা আকাশের দিকে মুখ করে চুপচাপ সম্মোহিতর মতো দাড়িয়ে আছে । সন্ধ্যার আকাশে অন্ধকার ঘনাচ্ছে, একটু পরই একটা দুটো করে তারারা উঁকি দিতে শুরু করবে । মানুষটা বেশ কিছুক্ষণ আকাশ দেখলো, তারপর ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করলো ।

ইদানীং পিছু না ফিরে সে একা একা পথ চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ।
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×