ঋজু সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ চৈত্রের বড় নিষ্ঠুর রোদ আর ঝড় ৷ দুটোই উন্মাদ ক্ষ্যাপা ৷
সবে দুমাস হয়েছে জলপাইগুড়ি আসা ৷ দেশ আর বন্ধুদের গন্ধ ঋজুকে বড্ড বেশী অনুভূতি জাগায় ৷
গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে আপন মনে অতীত খুঁজে বেড়ায় ৷ মাঝে মাঝে আতকে উঠে ঋজু বুঝতে পারেনা তাকে গোলির মুখে কে দাঁড়িয়ে রাখে ৷ কাকে খুঁজে , বুঝতে পারেনা ৷
মোবাইল আর ফেসবুক ঋজুকে স্বদেশ হারাবার কষ্ট তীর বেঁধা পাখি যে
,রুহুম জলপাইগুড়ির ছেলে আধ পেটা ছেলে ঋজুর বন্ধু ৷
ভলোবাসা আর বন্ধুত্ব এক নয় মৃত্রিকা বলেছিল ঋজুকে , যেমন নাকি সুখ আর আনন্দ এক নয় , ভালবাসতে সাহস লাগে , বন্ধুত্ব করতে সাহস লাগেনা ৷
কেন লাগেনা !
কেন ভালবাসতে সাহস লাগে!!
রুহুম ঋজু কাধে হাত রেখে বলে - এনি প্রবলেম?
ঋজু রুহুমের দিকে অপলোক দৃষ্টিতে তাকায় ৷ কিছু একটা বলার চেষ্টা করে , কিন্তু বলতে পারেনা ৷
রুহুম , ঋজুকে বুঝতে চেষ্টা করে ৷ ঋজুর মনের গড়মিলটা রুহুমকে কষ্ট দেয় ৷ রুহুম পাশের দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে এসে ঋজু দিকে বারিয়ে দেয় ৷ ঋজু রুহুমের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে আবার কিছু একটা বলার চেষ্টা করে কিন্তু বলতে পারে না ৷
রুহুম নিজেকে সামলে নিয়ে বললো-এনি প্রবলেম ?
ঋজু ভাবল এবার রুহুমকে এরিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না ৷
ঋজু নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে বলল-পুরনো দিনগুলো আমাকে আধ পেটা করছে ৷
রুহুম বুঝতে পারল ঋজুর অতীত বলতে দেশ আর মৃত্রিকা ৷
মৃত্রিকার অনেক গল্পই তার জানা রুহুম ছোট্ট করে বলল- মৃত্রিকা না ফরিদপুর ?
ঋজু সিগারেটে আড়ষ্ট টান দিয়ে বলল- কাকে বাদ দিব ?দেশ আমারে পরদেশি বানিয়েছে ৷ আর মৃত্রিকা আমাকে কষ্টের থলি উপহার দিয়েছে ৷ দেশকে বাদ দিলে মাটির গন্ধ বেমানান লাগে আর মৃত্রিকা ? সে তো আমার ঘোরায় তোলার জল ছিল ৷
রুহুম হরবর করে বলল-বাদ দে না ইয়ার নতুন হোক জীবনটা ৷
ঋজুও চেয়েছিল ভেবেও ছিল তাই হোক , ভেবেছিল লাভ ক্ষতি বলতে কি শুধুই দেশ আর মৃত্রিকা ?
আকাশে যখন ফুটো মেঘে অনাগোনা করে ৷ সময় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশকে আলাদা করে ৷ মাঝ খানে শুধু একটি তার কাঁটার বেড়া দিয়েছে ৷ কিন্তু সূর্য যে একটাই
ঋজু জলপাইগুড়ির অন্ধ অলিগোলি খোঁজে বেড়ায় দেশ আর মৃত্রিকাকে ৷
ঋজু জানেনা , সেই অন্ধ গোলিতে খুঁজে পাবে কিনা আলো আর একচিলতে অক্সিজেন বাঁচার সাহারায় ।