somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'দ্য আর্ট অব ওয়ার' : ০১ : যুদ্ধ পরিকল্পনা (১৭-২৮)।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইংরেজি 'ডিসেপসন' শব্দের অর্থ ধোঁকা, প্রতারনা অথবা ছলনা। বাইজান্টাইন রোমানদের বিরুদ্ধে ইয়ারমুখের যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ ইয়ারমুখ প্রান্তরে পশ্চিম দিকে মুখ করে পজিশন নিয়েছিলেন। এইটারে বলে 'পজিশনাল এডভান্টেজ' বা অবস্থানগত সুবিধা। এর ফলে সকাল থেকে দুপুর অবধি প্রতিপক্ষ বাইজান্টাইনদের চোখে সুর্য পড়ত, ফলে দূর থেকে তারা মুসলিম আর্মির সঠিক সংখ্যা ঠাহর করতে পারতনা। উপরন্তু খলিফা ওমর নির্দেশ দিলেন যেন প্রতিদিন সকালের দিকে মুসলিম সেনারা ছোট ছোট দলে কিন্তু ঢাক ঢোল পিটিয়ে খালিদের আর্মিতে যোগ দেয়। ফলে বাইজান্টাইনরা ভাবতে লাগল যে প্রতিদিনই মুসলিম শিবিরে না জানি কতশত নতুন সেনা যোগ দিচ্ছে। ব্যাপারটা সামান্য হলেও এর ইম্প্যাক্ট অনেক বড়, কেননা বাইজান্টাইন ভাবনা বাইজান্টাইনদেরই ক্রমশ ফ্রাস্ট্রেটেড করে তুলছিল। এই জাতীয় ট্রিক কেই বলে ডিসেপসন। আর সানজু বলেন, "সব যুদ্ধই ডিসেপসন নির্ভর।"

তাই যখন আপনি শত্রুকে হরিয়ে দিতে প্রস্তুত, ভান করুন যেন যুদ্ধ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তেমনি এমন কিছু করুন যেন শত্রু তটস্থ থাকে এই ভেবে যে আপনি বোধহয় আশেপাশেই ঘাপটি মেরে পড়ে আছেন, অথচ বাস্তবে আপনি তখনো বেশ দুরেই আছেন; আর যখন শত্রুর ওপর হামলে পরবেন তার আগমুহুর্ত পর্যন্ত যেন শত্রু টের না পায় যে আপনি এতটা কাছে চলে এসেছেন। অথবা শত্রুকে প্রলুব্ধ করুন আপনার ফাঁদে পা দিতে, তারপর ধ্বংস করুন।

শত্রু যখন আক্রমনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আপনিও প্রস্তুত হন। শত্রুর শক্তি অথবা বিশেষ সামর্থ্যকে চিনহিত করুন এবং পারতপক্ষে তার স্ট্রেন্থ কে এড়িয়ে চলুন। তার জেনারেলদের রাগিয়ে দিন আর বিভ্রান্ত রাখুন। ইরিটেডেড আর কনফিউজড মানুষ ভুল করে বেশি।

কিছু রাজা-বাদশা-প্রসিডেন্ট আছেন যারা গায়ে পরে আশেপাশের শান্তিপ্রিয় দেশের সাথে লাগার ধান্দায় থাকেন। ইস্টার্ন হু এর রাজা ছিলেন তেমনই একজন। তো তিনি একদিন প্রতিবেশি দেশ শিংনু এর রাজা মোতুং এর কাছে এক হাযার অশ্ব দাবি করে বসল। দাবি শুনে মোতুং এর সভাসদেরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালো। কিন্তু রাজা মোতুং বললেন ঘোড়ার চে প্রতিবেশির সাথে সুসম্পর্ক বেশি জরুরী। তাই পাঠানো হল একহাজার ঘোড়া।

কিছুদিন পর ইস্টার্ন হু এর রাজা ফের আব্দার করল। এইবার তার একজন রাজকুমারী চাই। সভাসদেরা রাগে ফেটে পড়ল, যুদ্ধ ছাড়া কোন ছাড় নাই এইবার। কিন্তু রাজা মোতুং বললেন এক রাজকুমারীর চে প্রতিবেশির সাথে সুসম্পর্ক বেশি জরুরী। তাই ঘটা করে এক রাজকুমারীর বিয়ে দেয়া হল।

কিছুদিন পর ফের আরেক বায়না। এইবার একহাজার লি জমি দিতে হবে। রাজা মতুং সভাসদদের মতামত চাইলেন। সভাসদদের কেউ বলল 'কক্ষনো না' আবার কেউ বলল 'কিছু জমির চে প্রতিবেশির সাথে সুসম্পর্ক বেশি জরুরী।' আর যায় কই, রাজা মোতুং রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, "মাটি হল রাস্ট্রের ভিত্তি, এক কনা মাটিছাড়ার কথাও যে ভেবেছে, তাদের সব কয়টার কল্লা কাটো। আর এক্ষুনি প্রস্তুত হও ইস্টার্ন হু আক্রমনের জন্য। আমি রওনা দেবার পর যারেই আমার পেছনে পাওয়া যাবে, তাদেরো কল্লা যাবে।" ইস্টার্ন হু এই রিএকশনের জন্য রেডি ছিলনা। ফলে রাজা মতুং সহজেই তাদের পরাস্ত করেছিল। আর সানজু বললেন, "মোক্ষম সময়ের আগ পর্যন্ত দুর্বল সাজার ভান কর আর প্রতিপক্ষকে উস্কে দিতে থাক!"


শত্রুকে ক্রমাগত চাপের মুখে রাখতে হয়, সে যখন দু দন্ড শান্তি খোজে, তখনই তাকে জ্বালাতে হবে। যখন সে এক থাকার চেস্টা করবে, আপনি তখন ফন্দি খুজবেন কিভাবে তারে ডিভাইড করা যায়। এক্ষেত্রে শত্রুর নিজেদের ভেতর কোন্দল লাগায়া দেন, তার মিত্র দের সাথে প্যাচ লাগান, মোটকথা তারে দৌড়ের উপর রাখেন।

গালফ ওয়ারে সাদ্দাম হোসেন কুয়েত দখলের পর কুয়েতের মাটিতে খুব শক্তিশালী ডিফেন্স নিয়েছিল। শোয়ার্জকফের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনীও সেই ডিফেন্স বরাবর সৌদি আরবের মাটিতে অবস্থান নিল। তারপর এমন একটা অবস্থা তৈরি করল যে সাদ্দাম বিশ্বাস করল যে এটাক যদি হয়, তাহলে তা হবে পার্সিয়ান গালফ দিয়ে। তাই সে অই এম্ফিবিয়াস এসল্ট থামাইতে আরো এফোর্ট দিল। কিন্তু ধুর্ত শোয়ার্জকফ কিন্তু সম্পুর্ন উলটা দিক দিয়ে, কুয়েত থেকেও অনেক পশ্চিমে ইরাকের ভেতর দিয়ে ঢুকে আক্রমন করে সাদ্দামকে চমকে দিয়েছিল। এই যুদ্ধে রিপাব্লিকান গার্ড সহ সাদ্দাম হোসেন ১০০ ঘন্টার ভেতর পরাস্ত হন। এই ব্যাপারে সানজু আগেই বলেছিলেন, "শত্রু প্রস্তুত হবার আগেই আক্রমন কর আর আক্রমন কর সেই দিক দিয়ে যেদিক দিয়ে শত্রু কস্মিকালেও আক্রান্ত হবে বলে ভাবেনি।"

এসবই একজন স্ট্রেটেজিস্টের যুদ্ধজয়ের চাবিকাঠি। যদিও যুদ্ধ একবার শুরু হয়ে গেলে বদলে যাওয়া পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন কর্মপন্থা ঠিক করতে হয়। তারপরও যুদ্ধ শুরুর আগেই পরিকল্পিত হিসেব নিকেশ আপনাকে বাতলে দেবে যুদ্ধ জেতার সম্ভাবনা কতখানি। সানজু বলেন, "যে যত বেশি হিসেব কষে পরিকল্পনা করে সে তত বেশি যুদ্ধ জেতে।"
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×