সানজু বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে সেনাপতি তার নিয়োগদাতার আদেশ অমান্য করেন। ভুল ব্যাখ্যার কারনে এই কথাটি প্রায়শই সানজুকে বিতর্কিত করে তোলে। সানজু আর তার ‘আর্ট অব ওয়ার’ এঁর গবেষকদের মতে, যখন একজন জেনারেল অভিযানে বের হয়ে যান, তখন যুদ্ধক্ষত্রে সৈন্য পরিচালনায় তিনিই সর্বেসর্বা। অন গ্রাউন্ড কমান্ডার হিসেবে তিনিই নিবিরভাবে যুদ্ধক্ষত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেন, তাই ঐ মুহুর্তে তার নিয়োগদাতার কোন নির্দেশ যদি তার কাছে উপযুক্ত মনে না হয়, সেক্ষত্রে তিনি সেই আদেশের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিজ পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যান এবং পরে তিনি এঁর কারন তার নিয়োগদাতার নিকট ব্যাখ্যা করেন।
১
সেনাপতি হিসাবে গ্রাউন্ড আর টেরেইন দুইটা সম্পর্কেই ভাল ধারনা থাকা জরুরী। ম্যাপ বলতেছে এই রাস্তায় ট্যাঙ্ক যাবেনা, আপনি ভাবতেছেন উল্টাটা, তাহলে হবে না। ‘দ্য নাইন ভেরিয়েবলস’ বা ‘নাইন চেঞ্জেস’ নামের সানজুর এই চ্যাপ্টারটা কিছুটা এলেবেলে টাইপ, সম্ভবত এঁর কিছু অংশ ঐতিহাসিক ভাবেই হারিয়ে গেছে বলেই চ্যাপ্টারটা অভিব্যাক্তিতে এমন অসম্পুর্ন। ঐতিহাসিক ওয়াং শি মনে করেন এই চ্যাপ্টারে ব্যবহৃত ‘নাইন’ বা নয় দ্বারা অসংখ্যতা কেই বঝানো হয়েছে। এই চ্যাপ্টারে কিছু কথা আগের চ্যাপ্টারের রিপিটেশন, আবার ১১তম চ্যাপ্টার ‘নয়টি পরিস্থিতি’ এঁর সাথে সম্পর্কিত। যাহোক, ভুমির গঠনের প্রেক্ষিতে সানজুর পরামর্শ হলঃ
একঃ নিচু ভুমিতে ক্যাম্প স্থাপন করা থেকে বিরত থাকুন। কারন উঁচুতে থাকা শত্রু আপনার সব কিছু দেখতে পাবে। তাছাড়া ঢাল বেয়ে একপাল গরুও যদি স্ট্যাম্পিড করে নিচে পাঠায়, তাতেই আপনার ক্যাম্প তছনছ হয়ে যাবে।
দুইঃ মিত্রদের সাথে মিলিত হবার জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন এলাকা খুজে নিন। কারন রাস্তাঘাটের অবস্থা যত ভাল প্রয়োজনের সময় রি ইনফোর্সমেন্টই বলেন আর রিজার্ভই বলেন, সবারই যাওয়া আসা সহজ আর দ্রুত হয়।
তিনঃ বিচ্ছিন্ন এলাকা থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসুন। কারন এই এলাকায় আপনি আটকা পড়লে, রসদ পৌছানো যেমন কঠিন, তেমনি রি ইনফোর্স করাও কঠিন।
চারঃ চারপাশ সংকীর্ন এমন এলাকায় কৌশলের সাথে চলুন। কারন এইসব এলাকায় শত্রুর এম্বুশে পরার ঝুকি বেশি।
পাঁচঃ খোলা প্রান্তরে শত্রু পেলে অবশ্যই লড়বেন। কারন এখানে জয় পরাজয় স্পস্টভাবে বোঝা যায়।
ছয়ঃ কিছু রাস্তা আছে যা কখনো ব্যবহার করতে নেই। যেমন শত্রু বরাবর সংক্ষিপ্ত রাস্তা, কারন এই রাস্তার মোড়ে মোড়ে শত্রু ফাঁদ পেতে রাখবে।
সাতঃ কিছু বাহিনী আছে যাদের আক্রমন না করাই শ্রেয়। যেমন শত্রুর এলিট ফোর্স।
আটঃ কিছু শহর আছে যা আক্রমন করতে নেই। যেমন পর্যাপ্ত রসদ নিয়ে উঁচু দেয়াল ঘেরা শহরে অবস্থান নেয়া শত্রু।
নয়ঃ কিছু এলাকা আছে যা নিয়ে লড়তে নেই। যেমন এমন এলাকা যা জয় করার পর রক্ষা করা কঠিন, অথবা এমন এলাকা যার সাথে শত্রুর ইগো জড়িত অথচ আপনার কাছে তা স্রেফ জমি ছাড়া আর কিছুই না।
একজন বিচক্ষন জেনারেল এইসব ভেরিয়েবেলস এঁর প্রেক্ষিতে যদি তার ট্যাকটিকস মডিফাই করতে না জানেন, তাহলে তার পক্ষে যুদ্ধ জয় অসম্ভব। প্ল্যানিং এঁর সময় তাকে অনুকুল আর প্রতিকুল উভয়বিধ ফ্যাক্টর সমুহ যাচাই করতে হবে। তাকে প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে ঝুঁকি হিসেব করতে পারতে হবে।
২
শত্রুকে অনেকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়। কখনো শত্রুর জ্ঞানীদের ভাগিয়ে এনে শত্রুকে উপদেস্টা শুন্য করে ফেলা যায়; যেমন সুগ্রীব এসে রামের দলে ভিড়েছিল। কখনো কুচক্রীদের দিয়ে তার প্রশাসনকে দুর্বল করে দেয়া যায়; অনেকটা ইদানিংকার আরব বসন্তের মত। কখনো তার প্রভাবশালী সভাসদদের কিনে ফেলা যায়; যেমন মীরজাফর। কখনো ক্ষতিকর সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়ে তাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেয়া যায়, যেমন ??? ; আবার কখনো সুন্দরী রমনী দিয়েও কাবু রাখা যায়। প্রতিপক্ষকে সবসময় কিছু না কিছু সমস্যায় জর্জরিত রাখুন আর মাঝে মাঝে কিছু সুবিধা দিন যেন তারা ব্যস্ত থাকে।
৩
কথায় আছে ঝড়ের আগে সব শান্ত লাগে। যদি দেখেন সেনাদল নিয়ে কোন বাঁধা ছাড়াই তরতরিয়ে এগুচ্ছেন, জেনে রাখুন সামনেই এম্বুশ পাতা আছে। তেমনি শত্রু এখনো আক্রমন করেনি মানে যে আক্রমন করবেনা কখনো, এমন ভাবনা বোকামি। তাই নিজেকে প্রস্তুত রাখার বিকল্প নেই।
৪
সানজুর মতে জেনারেলদের পাঁচটা বৈশিস্ট বড়ই খতরনাক।
একঃ অতি সাহসী হলে সে অসম্ভব সব যুদ্ধে অযথাই জড়িয়ে পরে।
দুইঃ অতি সাবধানী হলে সে সারাক্ষন দ্বিধান্বিত থেকে সঠিক দময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেনা।
তিনঃ বদ মেজাজি হলে আগপিছ না ভেবেই যুদ্ধে গিয়ে সমস্যায় পরে।
চারঃ নিজের সুনাম নিয়ে বেশি সচেতন হলে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও আত্মসমর্পন না করে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
পাঁচঃ খুব বেশি জনদরদী হলে নিজের সৈন্য হতাহত হবে ভেবে সে কোন ঝুকিই নেয় না, তাই যুদ্ধেও জেতে না।
জেনারেলদের এই পাঁচ চারিত্রিক সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সদা সচেতন থাকা উচিত। অন্যথায় সে নিজের আর তার আর্মির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে।