somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেরপাদের জন্য অশ্রুপাত

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এভারেস্ট যাত্রা মোটেও সহজ কোনো ব্যাপার নয় কঠিন পরীক্ষার মখোমুখি হতে হয় পর্বতারোহীদের, মৃত্যুমুখে পতিত সহপর্বতারোহীদের বরফে জমে যাওয়া মৃতদেহ পাড়িয়ে উঠে যায় একে একে পর্বতশৃঙ্গের দিকে। আমরা যারা সমতলের মানুষ, অনেকেই ভাবি এসব পর্বতে চড়ে কি লাভ? কি জন্য এসব দুঃসাহস দেখানো? ঘরে মা-বাবা, স্ত্রী পুত্রকন্যা ফেলে যেসব পর্বতারোহী ছুটে যায় পর্বত জয়ের জন্য, তাদের কেউ কেউ হয়তোবা যায় দুঃসাহস দেখাতে, কেউ কেউ যায় জাগতিক দেনাপাওনার হিসাব মেলাতে। আমরা ঘরকুনোরা এদের কারন বুঝি বা না বুঝি, পর্বতের দিকে ছুটে চলা থামেনি, থামবে না।

এভারেস্টের আরেক নাম হচ্ছে চোমোলুংমা, শেরপাদের কাছে এভারেস্ট পরম পূজনীয়, মহাবিশ্বের দেবী মা। পশ্চিমা এডমন্ড হিলারী এভারেস্টে ওঠার আগে শেরপাদের কেউ চোমোলুংমাতে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এভারেস্টে শৃঙ্গে যেতে হলে শেরপা ছাড়া ওঠার উপায় নেই। এপর্যন্ত যেকজন পর্বতারোহী এভারেস্টে মারা গেছেন, তাদের মাঝে শেরপাও আছে। শেরপাদের কাছে চোমোলুংমা পুজনীয় তীর্থস্থান, পরিবার পরিজন ছেড়ে পশ্চিমা পর্বতারোহীর তল্পিবহন করে যখন একজন শেরপা এভারেস্টে ওঠেন, তার কাছে সেটা ধর্মতীর্থে যাবার সমতুল্য, পশ্চিমা নিউজপেপারে শেরপার মৃত্যুর জন্য অশ্রু বিসর্জন হয় না, যতটা হয় অনভিজ্ঞ পর্বতারোহীর জন্য।

যারা ধর্মকে জয় করে নেবার জন্য অভিযাত্রা করেন, পর্বতারোহীদের মতই কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। পর্বত জয় করার পরে পর্বতারোহী তার ঘরে ফিরে যায়, পর্বত দাড়িয়ে থাকে নিথর , অপরিবর্তিত হয়ে। ধর্মকে পরাজিত করা যায় না, যেমন পর্বতকে পরাজিত করা যায় না। সমাজব্যবস্থায় ধর্ম ও রাজনীতি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সমাজে ধর্ম আছে থাকবে পর্বতের মতই।

দূর্গম পর্বতের তুষারধ্বসে কিংবা শীতল আবহাওয়ার মৃত্যু যেমন অনভিজ্ঞ বা অভিজ্ঞ পর্বতারোহীদের জন্য হরহামেশাই ঘটে, সেরকম ধর্মান্ধদের হাতেও ধর্ম নিয়ে সমালোচনাকারীদের মৃত্যু ঘটে। এভারেস্টে বরফ ধ্বসে মৃত্যুর পরেও শেরপাদের কাছে এভারেস্ট এখনও মহাবিশ্বের দেবী মা, তেমন করে ধর্মন্মাদদের শিকার হলেও সাধারণের কাছে ধর্মের গুরুত্ব কমেনি, কমবেও না।

দীপন ভাই ও তার পরিবারকে অনেকদিন থেকে চিনি, কোনদিনও কাউকে কটু কথা বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই। এমন একজন মানুষের মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না, দেশ ও জাতির জন্য একজন দীপন যা দিয়েছে, দু দশটা রাজনীতিবিদ বা মোল্লা-পুরোহিত তার কানাকড়িও দেয়নি। বাংলাদেশের প্রকাশকদের মধ্যে দীপন সম্ভবত সবচে বেশি সদা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন।
দীপন সম্ভবত সবচে ভালভাবে হাসিমুখে কথা বলতেন নবীন-প্রবীণ লেখকদের সাথে।
আল্লাহর কাছে দীপন ভাইর আত্মার জন্য দোয়া চাই, তার পরিবারের এ দুঃসময়ে আল্লাহ সহায় হউন।

দুর্গম পথে চলা পর্বতারোহীদেরকে যেমন শেরপারা সাহায্য করে, দীপন বা টুটুল এ সমাজে ধর্মের অনাচার নিয়ে কথা বলা লেখকদের জন্য সেটাই করেছে। এজন্য মৃত্যুর সর্বদা আশঙ্কা থাকলেও তারা থেমে থাকেনি। একটা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ার জন্যই আমরা ৭১ এ লড়াই করে জীবন দিয়েছি,- এদেশে ধর্মোন্মাদদের প্রশ্রয় দিতে আমাদের পূর্বপুরুষেরা লড়াই করে রক্ত দেয়নি। ধর্ম থাকবে পর্বতের মত, ধর্মকে তর্ক দিয়ে মোকাবেলা করার মত দুর্গম পথে চলা পর্বতারোহীরাও আসবে একে একে।

আমরা আজকে শেরপা দীপনের জন্য দুফোটা চোখের জল ফেলি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×