অপরিচিতা
ধ্রুব নয়ন
বগুড়া জংশন থেকে দৈনিক আজ ও আগামীকাল পত্রিকা কিনে সোজা ট্রেনে গিয়ে বসে পড়লো অপরাজিতা লাবণ্য। অনার্স ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিল উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে পুপলার বিদ্যাপীঠ সরকারী আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে। অপরাজিতার সঙ্গে ওর বান্ধবী নিলাও ছিল। পত্রিকা মেলাতেই চোখে পড়লো এস বি ডির- লেখা "আমি তোমাকেই ভালবাসি" কবিতা (৩০/০৩/২০০৮)। কবিতাটি বেশ কয়েকবার মনোযোগ সহকারে পড়লো অপরাজিতা। যতবারই পড়ছে ততবারই সে মুগ্ধ হচ্ছে। এক সময় ভাবনার রাজ্য হারিয়ে ফেলে নিজেকে। সে না দেখা কবিকে নিয়ে সাজায় তার রঙ্গিন স্বপ্ন। ভাবতে থাকে কবিতাটি এত সুন্দর না জানি সে কবির মন আরও কত সুন্দর। বার বার পড়তে থাকে আমি তোমাকেই ভালবাসি।
আমি তোমাকেই ভালবাসি
তোমার ভালবাসা কেমন?
তেমনটি কি? যেমনটি আমার ভালোবাসা?
তোমাকে কিন্তু কোনদিন স্বপ্নেও দেখিনি,
তবুও তোমারি ছবি হৃদয়ে এঁকেছি-
কল্পনার কোন এক স্বপ্নিল মুহূর্তে।
নব বসন্তের কুঞ্জবনে, সাগর তীরে দাঁড়িয়ে,
নির্জন সন্ধ্যায়, শ্রাবণের গভীর রাতে,
তোমাকে একান্ত আপন করে ভেবেছি।
জানি-
আমার সব চাওয়া মিথ্যে হয়ে যাবে
তোমাকে পাব না কোন দিনই।
কিন্তু, কি আশ্চর্য্য!
এত কিছু জেনে-বুঝেও আমি শুধু
তোমাকেই পাগলের মতো ভালবাস।।।
ট্রেন কখন যে নশরতপুর স্টেশনে পৌঁছে গেছে তা টেরই পায়নি অপরাজিতা লাবণ্য। অপরাজিতার ধ্যান ভাঙল নিলার ধাক্কাতে।
নিলা বললঃ কিরে কি হল? চল চল নেমে পড়ি।
অ হ্যাঁ চল। লাজুক হেঁসে মাথা নেরে বলল অপরাজিতা।
নিষাদের ট্রেনিং ছিল চান্দু স্টেডিয়ামে। মেজর রফিক স্যারের টিমে নিষাদ জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি তোলার ট্রেনিং শেষ করে ঐ ট্রেনেই গ্রামে ফিরছিল। নিষাদ ছদ্মবেশী লেখক। নিষাদ পত্রিকায় এস বি ডি নামে লেখালেখি করে। এইতো আজো তার লেখা আমি তোমাকেই ভালবাসি কবিতাটি ছাপা হয়েছে।
অপরাজিতা ও নিলা গিয়ে ভ্যানগাড়িতে উঠলো। আরও একজন উঠেছে। নিষাদের আঙ্গুলে স্টার থাকলেও দৌড়ে গিয়ে উঠে পড়লো।
এ ভ্যানে ধূমপায়ী ব্যাক্তিদের ওঠা সম্পূর্ণ নিষেধ। প্রতিবাদী কণ্ঠে বলল অপরাজিতা।
নিষাদ মেয়েটিকে একবার দেখল। মেয়েটি দেখতে হেব্বি সুশ্রী। নিষাদ তার প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্বাগত জানিয়ে জোরে জোরে দু টান মেরে ছুঁড়ে ফেলল আঙ্গুলের স্টার।
নিকোটিনের ধুঁয়া ছেড়ে- তা ম্যাডাম, প্রকাশ্য ধূমপান করিলে ৫০ টাকা জরিমানা সংসদে বিল পাশ করা হয়েছে। এই ৫০ টাকা নিবে কে? জানেন না হয়তো- পুলিশ ভায়েরা পাবলিকের আগুনে চলে। যাগগে সে কথা, কাজের কথা বলি- ধূমপায়ী ভ্যানে উঠা নিষেধ এটা আবার কবে পাস হল দয়া করে জানাবেন কি? কথাগুলু ভেংচি কেটে বাচ্চা ছেলের মতো করে বলল নিষাদ।
অপরাজিতা বিব্রতবোধ করছে। কিন্ত সে দেখল- ছেলেটার চোখমুখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। সে ভয় পেল। তা ছাড়া নিলা তাকে কথা না বলতে বার বার রিকুয়েস্ট করছিলো। তবুও অপরাজিতা মুখ খুলল- সেও ভেংচি কেটেই বলল-
জি না স্মোকার সাব, এটা সংসদে পাস করা হয়নি। এটা আমি আমার থেকেই পাস করেছি।
নিষাদ নিজে নিজেই গদ গদ করে বলল- তা তো জানিই! আল্লাহ তোমার ভাগ্যে এরকমই একজন স্মোকার মিলাবে।
এই যে মিস্টার, কি বললেন? আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করল অপরাজিতা।
আহা চুপ করত! কি শুরু করলি রাস্তায়? ধমক দিয়ে বলল নিলা।
তোমার নাম কি? জিজ্ঞেস করল নিষাদ।
অপরাজিতা বিরক্তবোধ করল। দেখল ছেলেটি নাসরবান্দা।
কি হল? নামটা বলুন?
অপরাজিতা ঠাস করে বলে ফেলল- অপরিচিত।
অপরিচিত? হহা হা হা এটা আবার কেমন নাম?
জি! আপনাদের মতো বখাটেদের জন্য এটাই প্রাপ্য।
ভাল ভাল। তবে এই একটু মিস্টেক আছে। এখন থেকে যদি কেউ নাম জিজ্ঞেস করে তবে নামের সাথে আকারটা যোগ করে বলবেন।
মানে? দাঁত কিরবির করে বলল অপরাজিতা।
মানে অপরিচিতর পরিবর্তে অপরিচিতা। অপূর্ব অপরিচিতা। তাছাড়া- অপরিচিত বললে ছোকরা ছোকরা মনে হয়।
এবার রেগে মেগে আগুন। কি?
ইতিমধ্য তারা মুরইল বাসট্যান্ডে পৌঁছে গেছে। নিলা হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অপরাজিতাকে। রতন, আনিস, ইলিয়াছ এসে জরিয়ে ধরল নিষাদকে।
নিষাদ হাত নেড়ে অপরিচিতাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাল বিনিময়ে উপহার পেল বাঁকা চাঁদের জ্যৌৎস্না।
(চলবে)