somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইপড়ার অভিজ্ঞতা..!!! ( উৎসর্গ ফিউশন ফাইভকে :):):) )

২৯ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলায় পড়েছিলাম বই কিনে নাকি কেউ দেওলিয়া হয় না । বর্তমান যুগে এই কথাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে । কিন্তু এটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই যে বই পড়ে কেউ দেওলিয়া হয় না । আমি বিশ্বাস করি একমাত্র বই পড়লেই প্রাচুর্য লাভ করা যায় । জ্ঞানের প্রাচুর্য । যা কখনও কমেনা , বরং বেড়েই যায় । কারণ বইই একমাত্র মাধ্যম যেখানে সঞ্চিত আছে হাজারো মানুষের অর্জিত জ্ঞান । আর সেই বই পড়া মানেই তার অর্জিত জ্ঞান নিজের মধ্যেও নিয়ে নেওয়া । শতাব্দী প্রাচীনকাল থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে কাগজ থেকে বই আজ ইবুকে রূপ নিয়েছে ।

খুব ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের বাইরে আর কোন বই পড়তাম না । ছোটবেলার সেই ধারাপাত বই পড়তেই অনেক কষ্ট হত আর ভাবতাম কখন পড়া শেষ করে খেলতে যাব । ছোটবেলায় ঠাকুমার ঝুলিতে ঝোলেনি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে । ছেলে বুড়ো সকলের কাছে এখন পর্যন্ত সমান জনপ্রিয় ঠাকুমার ঝুলি । আমার মনে হয় বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে বেশিবার পঠিত বই ঠাকুমার ঝুলি । রাক্ষোস ক্ষোকসের সাথে রাজকন্যা আর রাজপুত্রের প্যাচগোচ বুঝতে বুঝতে ঘুমাতে হত তখন । ঠাকুমার ঝুলি মানুষ নাকি দাদী নানীর কাছেই প্রথম শুনে থাকে । কিন্তু সত্যি বলতে কি আমি প্রথম গল্প শুনি আমার বড় আপুর কাছে । ঠাকুমার সাথে আপু প্রাইজ হিসেবে পাওয়া বিভিন্ন দেশের রূপকথার গল্প বইটাও পড়ে শোনাত । আমার পেছনে আমার বড় আপুর অবদান কখনই ভুলতে পারব না ।:):):)

যাই হোক এরপর কিছুটা বড় হয়ে কমিকস পড়া শুরু করলাম । ক্লাশ থ্রিতে পড়ার সময় হাতে এল প্রাণের কমিকস..!! প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে কমিকস কিনতাম । আম্মুর সাথে আমার ডিলই ছিল প্রতিদিন আমাকে কমিকস কিনে দেয়া । আর সেই সব বই বন্ধুরা শেয়ার করতাম । চাচা চৌধুরী , বিল্লু , পিঙ্কি , রমণ , ডায়নামাইট , ফ্যান্টম , লম্বু মোটু , প্রাণের সব বইই পড়াতাম । তবে এর মধ্যেও সবচেয়ে প্রিয় ছিল অবশ্যই চাচা চৌধুরী । সাবু আর কুকুর রকেটকে নিয়ে চাচা চৌধুরীর সেই কাহিনীগুলা আজও ভুলতে পারিনি । আর ভুলতে পারিনি ব্যাক ডায়ালগ...চাচা চৌধুরীর বুদ্ধি কম্পিউটারের চেয়ে প্রখর...!!! ;););)

আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম । কিন্তু বই পড়ার দিক থেকে আর বড় হতে পারছিনা । ছোট গল্প আর কমিকসের বাইরে অন্য কিছুই ভাল লাগেনা । ততদিনে আপুরা দেখতাম মাঝারি সাইজের কিছুটা মোটা তিন গোয়েন্দা নামে কি বই যেন পড়ত । অনেক চেষ্টা করেছি । কিন্তু ভাল লাগাতে পারিনি । আমার বন্ধুরাও ততদিনে তিন গোয়েন্দা পড়া শুরু করে দিয়েছে । কিন্তু আমি পড়তেই পারছিনা । কষ্ট লাগে এত বড় বই পড়তে..!!! ওই সময়ে বিমান দূর্ঘটনা বইটা যে কতবার শুরু করেছি তার ইয়াত্তা নেই । কিন্তু শেষ করতে পারিনি । অবশেষে ক্লাশ সেভেনে আমার বন্ধু রিফাত আমাকে এক রকম জোর করেই একটা তিন গোয়েন্দা বই পড়তে দিল । অনেক অনুরোধ করে বলল শুধু একটা বই যেন আমি পড়ি । এরপর ভাল না লাগলে আর পড়ার দরকার নেই । আমার এখনও মনে আছে রিফাতের দেয়া আমার পড়া তিন গোয়েন্দার প্রথম বইটির কথা । বইটি ছিল জলদস্যুর মোহর নামে একটা বই । ওই বইতে তিন গোয়েন্দার চিরশুত্রু শুঁটকি টেরিও ছিল । স্কুল থেকে এসে ড্রেস চেঞ্জ না করেই বিছানায় শুয়ে পড়া শুরু করেছিলাম বইটি । আমার এখনও মনে আছে সারাদিন লেগেছিল বইটা শেষ করতে । বইটা শেষ করে মনে হয়েছিল আমি যেন অন্য কোন জগতে চলে গিয়েছি । ওই বয়সে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় প্রতিটি কিশোর কিশোরীর কাছে তিন গোয়েন্দা ছিল রীতিমত হিরো । সবাই আচ্ছন্ন ছিল তিন গোয়েন্দার লাইফের প্রতি । আমিও তার ব্যাতিক্রম ছিলাম না । বাংলাদেশে তিন গোয়েন্দা পড়েনি এমন শিক্ষিত কিশোর কিশোরী মনে হয় কমই আছে । আমার মনে হয় তিন গোয়েন্দা পড়ার পর থেকেই আমি কিছুটা আধুনিক হয়েছি, বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছি । সেই দিক থেকে আমি মনে করি তিন গোয়েন্দার কাছে আমি ঋণী ।

এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার আগ পর্যন্ত শুধু তিন গোয়েন্দাই পড়েছি । এর বাইরে সেবার কিছু অনুবাদ আর ওয়েস্টার্ণ পড়েছি । তবে তিন গোয়েন্দার মত আর কিছুই আমাকে টানতে পারেনি । অনেকেই তখন মাসুদ রানা পড়ত । কিন্তু মাসুদ রানা আমাকে কখনও টানতে পারেনি । কারণটা আমি নিজেও জানিনা । তখন পর্যন্ত যে কোন ধরণের উপন্যাস আমার জন্য নিষিদ্ধ ছিল । কিন্তু আমি ওই সময় ফুপির বাসায় গিয়ে তসলিমা নাসরিনের নিষিদ্ধ উতল হাওয়া বইটি লুকিয়ে পড়ে ফেলেছিলাম..!! হা হা হা । যদিও আইনটা আমার ছোট বোনের ক্ষেত্রে ছিল না । ও ক্লাশ সেভেন থেকেই হুমায়ূন, মিলন পড়ত । দুইজনের জন্য কেন দুইটি ভিন্ন আইন বলবৎ ছিল আমি জানিনা । বড় আপু ছিল এই আইনের প্রবক্তা । তবে অবশ্য পাঠ্যের তালিকায় হাজার বছর ধরে ছিল বলে ওই কার্ফিউর সময় উপন্যাসটা পড়েছিলাম । আমার সর্বাধিক পঠিত বইয়ের তালিকায় হাজার বছর ধরে বইটি বেশ উপরের দিকেই থাকবে । মন্তু আর টুনির কৈশোরিক প্রেম কাহিনী সেই কিশোর বয়সে আমার মনে অনেক দোলা দিয়েছিল..!!:P:P

কলেজে উঠেই আমার যে কথা প্রথম মনে হয়েছে সেটা হল আমি এখন অনেক বড় । তাই সবকিছুই পড়ার বয়স আমার হয়েছে । কিন্তু হায় যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় । সাতকাহন বইটা নিয়ে প্রথমেই ধরা খেলাম আপুর হাতে । যথারিতী জানলাম কার্ফিউ বলবৎ আছে । সুনীল সমরেশ পড়ার বয়স হয়নি । অগ্যতা হুমায়ূন আর জাফর ইকবালই ভরসা । কলেজের দুই বছর চুটিয়ে হুমায়ূন আহমেদ আর জাফর ইকবালের বই পড়েছি । জাফর ইকবালের বই আগেও পড়েছি, কিন্তু সত্যিকারের মজা পাইছি এই দুই বছরে । ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরীর সদস্য ছিলাম, সেই সাথে বাসার সংগ্রহ নেহাত কম ছিল না । তাই বইয়ের অভাব হয়নি । দুই ভাইয়ের সব লেখাই গোগ্রাসে গিলতাম । হিমু পড়ে উদাস হতাম, তো মিসির আলী পড়ে আবার বিচক্ষণ ব্যাক্তি, তার মাধ্যমেই ট্রেনে করে ঘুরে এসেছি দারূচিনি দ্বীপ আর কলম্ব । মনে আছে জাফর ইকবালের আমি তপু পড়ে চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি । খুব ইচ্ছে করত দুষ্ট ছেলেদের দলের সাথে মিশে যেতে, দীপু নাম্বার টুর মত প্রাচীন গুহায় গুপ্তধন খুজতে, হাত কাটা রবিনের মত বন্ধু পেতে । আর আমার বন্ধু রাশেদ পড়ে শিখেছি রাজাকার হায়েনাদের ঘৃণা করতে , দেশকে ভালবাসতে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করতে ।

এতসব ছাড়া আহসান হাবীব, আব্দুল্লাহ আবু সাইদ স্যার , নিমাই ভট্টাচার্য, জীবনানন্দ দাসের লেখাও পড়েছি । ভালবাসা কি জিনিস তা নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব পড়েই প্রথম বুঝেছি । পাঠ্য বইয়ের বাইরে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের কিছু বই পড়েছি । কিন্তু শ্রীকান্ত আর দেবদাস ছাড়া শরৎ রচনাবলী পড়া হয়নি । যুগের হাওয়ায় হ্যারি পটার, দ্য দ্যা ভিঞ্চি কোড পড়তে হয়েছে । পটার সিরিজ আমার কাছে তিন গোয়েন্দার মতই প্রিয় । এছড়াও ইমদাদুল হক মিলন, প্রণব ভট্ট আর আনিসুল হকের কিছু বই পড়া হয়েছে । শেষ পড়েছি সৈয়দা ফারজানা সুলতানার জলে ভেজা মন । কিন্তু পড়া হয়নি সুনীল সমরেশ...!!! এই ইউনিভার্সিটি জীবনে প্রবেশ করেও আপুর কাছে শুনতে হয় " আগে বড় হও তারপর সুনীল সমরেশ পড়বা..!!" আমিও আর সেটা নিয়ে মাথা ঘামাইনা । আগ্রহও হারিয়ে ফেলছি সুনীল সমরেশের প্রতি । ও আমার ছোট বোনের কিন্তু সমরেশের প্রধান বইগুলা পড়া শেষ..!!:-*:-*

আজ যখন ফেলে আসা জীবনের পাতা উল্টাই তখন মনে হয় কম বই পড়িনি । তখন হিসেব করতে বসে যাই কি শিখলাম আমি । ভেবে কোন কূল পাইনা । ছোট্ট একটা অনুভূতি বুকের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে । জ্ঞানের মহাসমুদ্রে এ আমার ক্ষুদ্র পদচিহ্ন মাত্র ।

পুর্বে স্বপ্নব্লগে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৮
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×