পরী এবং বিশটি বছর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আড়ং এর সামনে থেকে পরী কে পিক্ করে আকাশ। গাড়ী চলছে। ‘কি গান শুনবে পরী?’ আকাশ শুধায়। ‘কখনো ইচ্ছে হয়। আছে ওটা?’ পরীর জবাব। ‘আছে। সিডি change করতে হবে। সিডির ব্যাগটা বের কর। 3rd CD, 1st track’ আকাশ বলে। বাজছে দু’জনেরই খুব পছন্দের গানটা। আকাশের ডান হাতটা steering wheel এ আর বাম হাতটা আলগোছে পরীর কোলে রাখা। দু’টো হাত দিয়ে আলতো স্পর্শে আকাশের হাতটা ধরে আছে পরী। গাড়ী গাবতলী, সাভার, নবীনগর হয়ে ধামরাই। বড় রাস্তা ছেড়ে হাতের বামে সরু একটা পথ ধরে আকাশ। এঁকেবেঁকে কিছুদূর গিয়ে মেঠোপথ। খানিক সামনে একটা বাঁক পেরিয়েই ছোট্ট একটা সবুজ মাঠ। মাঠের এপাশটায় ঝোপঝাড়, জঙ্গল। নাম না জানা অনেক গাছে ছেয়ে আছে। তারপর ছোট্ট মাঠ টা পেরিয়ে একটা সরু নদী। ‘কি নাম এই নদীটার?’ পরীর প্রশ্ন। ‘হবে কিছু একটা’ জবাব দেয় আকাশ। নদীর ওপাশটায় খোলা প্রান্তর। তারপর কিছু ফসলী জমি পার হয়ে দূরে গ্রামের রেখা। ছোট্ট মাঠের এক কোনায় গাড়ী রেখে গাছের ছায়ায় সবুজ নরম ঘাসে বসে দু’জন পাশাপাশি। দু’জনেরই দৃষ্টি মাঝে মাঝে পাশের সঙ্গীকে ছুঁয়ে হারিয়ে যাচ্ছে দূরে। কথা হারিয়ে গেছে দু’জনেরই। হারাবে না? বিশটি বছর অপেক্ষার পর প্রথম দেখা...।
হাসিতে ফেটে পড়ে দু’জনেই। Messenger এর chat window তে কল্পনার জাল বুনছিলো দু’জন এতোক্ষণ। কি অবাক ব্যপার... কল্পনাও বাস্তবের এত কাছাকাছি হয়! পরীর সাথে আকাশের পরিচয় একটা chat room এ। শুরূতে একটা মোহ, অদ্ভুত এক আকর্ষণ। ভুল পরিচয়ে দু’টো মানুষ দিনের পর দিন পথ চলে কল্পনায় হাত ধরাধরি করে। এক সময় অস্থির হয়ে ওঠে আকাশ। মিথ্যের ভয়াল কালো সাপটা ওকে আস্তে আস্তে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে শ্বাস রোধ করছে যেনো। এক বিষন্ন দিনে পরীকে নিজের সব সত্যি জানায় আকাশ। ভীষণ আহত হয় পরী। তবে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয় আকাশ। অনেক দিনের চেপে থাকা এক কষ্টের পাথর গড়িয়ে নেমে যায় ওর মন থেকে। তারপর প্রচন্ড কষ্টে দম বন্ধ করা এক দীর্ঘ নীরবতা। আকাশের মনে হতে থাকে তার পৃথিবী থেকে অনেক প্রিয় কি যেনো একটা হারিয়ে গেছে। Mail এ ক্ষমা চায় আকাশ। ধীরে ধীরে আবারো যোগাযোগ স্থাপিত হয় দু’জনের।
শুধুই net এ কথা। কল্পনার ভেলায় ভেসে ভেসে কোথায় হারিয়ে যায় দু’জন। কত কথা হয়। বেশীরভাগই ভালোলাগা আর কল্পনার কথা। প্রতিদিনই কথা হওয়া চাই। পরীর dial up connection টা মাঝে মাঝে বিগড়ে গেলে কি যে কষ্ট দু’জনের। জানাবার ও উপায় নেই। দু’টো আবেগী মন ছটফট করে শুধু। অনেক কিছু চায় আকাশ। পরী কে দেখতে চায়, ওর কন্ঠ শুনতে চায়, দেখা করতে চায়। কোন কিছুতেই সম্মতি নেই পরীর। তার কথা... এভাবেই ভালো আছি আমরা। কেনো এত জটিলতা বাড়াতে চাও জীবনে? তুমি বিবাহিত। আমারো একসময় নিজের একটা সংসার হবে। তখন সবকিছু সামলানো মুশকিল হবে। আর তাছাড়া, যত পাবে, চাওয়া ততোই বাড়বে। আকাশ বলে... ছোট্ট একটা জীবন আমাদের। না পাওয়ার অতৃপ্তি নিয়ে চলে যাবে কেনো? যতটুকু পাও, দু’হাত পেতে নাও।
আকাশের কথায় ভালো লাগার ছোঁয়া থাকতো। ভালোবাসার কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি কখনো। একদিন পরী বলে ‘ভালোবাসি’। ‘আমিও ভালোবাসি তা জানো কি?’ আকাশ বলে। ‘ভালোবাসি’ বলতে পারার পর সবার জীবনটাই বোধহয় অন্যরকম হয়ে যায়। আকাশ আর পরীর ও তেমনটাই হয়। কত আবেগ আর আকুলতা এসে ভর করে।
আকাশের ছোট্ট সংসারটাকেও অনেক ভালোবাসে পরী। ছবি দেখে বলে সত্যিকার সুখী পরিবার তোমার। তোমরা সবাই এত সুন্দর কেনো? আকাশের স্ত্রীকে ও ডাকে ‘আপুনি’। মাঝে মাঝে বলে... আপুনির কথা ভাবলে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় আমার। আকাশ বোঝায়... তোমার আপুনিকেও অনেক ভালোবাসি আমি। তোমার কারণে তাকে তো আর কম ভালোবাসছি না, আর আমার সংসারের প্রতি উদাসীনও হচ্ছি না। আকাশের এই মনোভাবটাকে শ্রদ্ধা করে পরী। বলে... কখনো যেনো তেমন ক’রো না। তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি। এক রাতে এক আবেগী মুহুর্তে নিজের ছবি দেখায় পরী। আকাশের মনে হয়... এই মুখটাই যেনো এতোদিন কল্পনা করেছি আমি। মনে হয় যেনো কত দিনের পরিচিত। দু’জনেরই মনে হয় এই বুঝি স্বপ্নের রাজকন্যা, রাজপুত্র। যে আকাশ অদেখা কাউকে প্রাণ ভরে ভালোবাসার দ্বিধার দোলাচলে ছিলো, সে যেনো নতুন করে মন উজাড় করা ভালোবাসায় হারিয়ে যায়।
আকাশের এক জন্মদিনের দু’দিন আগে বিগড়ালো পরীর dial up connection। Café থেকে mail করে জানায় পরী। দু’জনেরই ভীষণ মন খারাপ। জন্মদিনটা যেনো ম্লান আর বিবর্ণ মনে হয় আকাশের। দুপুরে পরী café থেকে online হয়। শুভেচ্ছা জানায়। বলে ‘কি উপহার চাও?’ আকাশ বলে ‘যা চাই তা দিতে পারবে না। তাই চাইবো না’। ‘ফোন নাম্বার?’ পরী শুধায়। ‘নাহ্। শুধু আজকের জন্য যেকোন একটা ফোন থেকে একবার কথা বল’ বলে আকাশ। আকাশের নাম্বার নেয় পরী। বলে... ‘কথা দিতে পারছি না’। অপেক্ষা করে আকাশ। এক সময় আসে সেই প্রতীক্ষীত মুহুর্ত। বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা হবো হবো করছে। অন্য সব জন্মদিনের চেয়ে ওই জন্মদিনটা আকাশের কাছে বিশেষ আর অন্যরকম হয়ে ওঠে। সেটাই শেষ কথা নয়। এখন প্রতিদিনই কথা হওয়া চাই।
তারপর আর পিছনে ফিরে তাকায়নি ওরা। ভালোবাসার পথ ধরে শুধুই এগিয়ে চলা। পরীর ও না বলা কথাগুলো বলেছে আকাশকে। সত্যের আলোয় জীবনটাকে অনেক সুন্দর আর আলোকিত দেখে ওরা। শ্রদ্ধা করে একে অন্যের জীবন আর অবস্থান টাকে। ২০২৫ এর কোনো একসময় দেখা করবে ওরা। তখন দু’জনেরই বয়স মধ্যের ওপারে। দু’জনেরই জীবন হয়তো অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে স্থির হবে খানিকটা। আজীবন এমনি ক’রে ভালোবেসে যাওয়ার যে স্বপ্ন ওরা দেখে তা কি বেঁচে থাকবে তখনো? দেখা কি হবে ওদের ঠিক কল্পনার মত করে? জানে না ওরা। তবে বিশ্বাস করে। আপনারা দোয়া করবেন ওদের দু’টো পরিবারের জন্য আর দোয়া করবেন ওদের জন্য... ওদের লালিত স্বপ্নটা যেনো সত্যি হয়। স্বপ্নভঙ্গ যে বড় কষ্টের।
৩১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন