’বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ’- একটি রম্য কাহিনী
বর্ষাকাল যায় যায় অবস্থা। এমন সময় হঠাৎ করিয়া দেশের বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারন করিল।
দেশের সকল নদ-নদীর পানি বিনা নোটিশে রাতারাতি লোকালয়ের দিকে প্রবল বেগে ধাবিত হইতে লাগিল। নদীর পাড় মাড়াইয়া বেড়িবাঁধ ভাঙ্গিয়া দুকূল ছাপাইয়া জলরাশি সারাদেশের গ্রামের পর গ্রাম ডুবাইল।অবশেষে গ্রাম জয় করিয়া শহরের দিকে রওয়ানা দিল।হঠাৎ একদিন নগরবাসি ঘুম হইতে উঠিয়া দেখিল সারাদেশের নদীর পানি একজোট হইয়া প্রতিটি শহরে অবস্থান ধর্মঘট করিতেছে।রাজধানীর জনজীবন স্থবির হইয়া পড়ায় সরকারের টনক নড়িল। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এহেন অবস্থান ধর্মঘট সরকার স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে গ্রহণ করিলনা। দেশবিরোধী কোন একটি মহল নাশকতার মাধ্যমে সারাদেশ অচল করিয়া দেওয়ার কুমতলবে সুকৌশলে পানি লইয়া রাজনীতির নতুন খেলা খেলিতেছেন বলিয়া ক্ষমতাসীন দলের বাঘা বাঘা নেতারা মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দিতে লাগিলেন।নাশকতাকারীরা রাতের অঁধারে নদীগুলির বাঁধ ভাঙ্গিয়া দেওয়ায় এহেন অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি বলিয়া দপ্তরবিহিন মন্ত্রিরা বিবৃতি দিতে লাগিলেন।পানি সম্পদমন্ত্রি তাহার নিয়ন্ত্রণাধীন পানির বেয়াড়ামোর উচিত শিক্ষা দিতে সারা দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করিলেন। স্বরাস্ট্রমন্ত্রি নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য সব গোয়েন্দা সংস্থা এবং ক্রসফায়ার বাহিনীকে কড়া হুকুম দিলেন। সরেজমিন তদন্তে দেখা গেল নদীগুলির রক্ষাবাঁধ ভাঙ্গিয়া যাওয়ায় জলমিছিলের রাজধানী যাত্রা সহজতর হইয়াছে।বাঁধ নির্মান ও রক্ষনাবেক্ষনকারী ঠিকাদারদের ঠিকানা গোয়েন্দাদের হাতে থাকিলেও কংক্রিটের ব্লকের পরিবর্তে কে কতখানি
মাটির ব্লক বাঁধ রক্ষার কাজে ব্যবহার করিয়াছেন তাহা একটিবারও শুধাইলেননা। সকল বাহিনী নাশতাকারীদের পাকড়াও করিতে সারাদেশ চষিয়া ফেলিতে লাগিলেন। জলমগ্ন ঢাকা শহরে হাবুডুবু খাইতে খাইতে অবশেষে তিন দিন পর বিশেষ বাহিনীর এক গোয়েন্দা অফিসার ইউরেকা ইউরেকা বলিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলেন। নাশকতাকারীদের হদিস পাওয়া গিয়াছে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে সুরম্য এক অট্টালিকায়। সারাদেশে হৈচৈ পড়িয়া গেল।বিশেষ বাহিনীর গল্পকারগণ গল্প লিখার জন্য আট ঘন্টা সময় পার করিয়া মিডিয়ার মুখোমুখি হইলেন।তাহাদের গল্পবলা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে প্রকাশ পাইল- গ্রেপ্তারকৃত সাতজন আসামী ফেসবুকের মাধ্যমে উসকানি দিয়া সারাদেশে হাজার হাজার অনুসারির মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে বড় বড় নদীগুলির বাঁধ ভাংগিয়া দিয়াছে.... উপস্থিত মিডিয়ার লোকজন প্রমান দেখিতে চাহিলে বাহিনীর প্রধান গল্পকার একটি ডিজিটাল ব্যানার মেলিয়া ধরিলেন, যাহাতে লেখা ছিল- সামহয়ার ইন ব্লগ ‘বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ’.........
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:০১