somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনোকোফিলিপস এর সাথে পিএসসি চুক্তি: প্রথম আলোয় ম.তামিমের সহজ পাঠের প্রতিক্রিয়া

২৪ শে জুন, ২০১১ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২২ জুন প্রথম আলোয় অধ্যাপক ম.তামিম “গ্যাস উতপাদন অংশীদারি চুক্তির সহজ পাঠ” শীর্ষক লেখায় উতপাদন অংশীদারি চুক্তির অধীনে গ্যাসের মালিকানা ও রপ্তানির বিধান বিষয়ে যে মতামত রেখেছেন তার সাথে দ্বিমত পোষণ করে কিছু কথা বলা জাতীয় স্বার্থে জরুরী মনে করছি।

গ্যাসের মালিকানার তর্ক:
বছর বছর ৫৫% হারে গ্যাস কোম্পানি কস্ট রিকভারি হিসেবে নিতে থাকলে কয়েক বছর পরই কোম্পানির বিনিয়োগের বা খরচের পুরোটা উঠে আসবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন জনাব ম.তামিম। তার আশাবাদ অনুসারে কয়েক বছর পর এভাবে পুরো কস্ট রিকভারি হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৯০% -৯৫% গ্যাসই হয়ে যাবে প্রফিট গ্যাস বা লাভের গ্যাস যার ৫৫% থেকে ৮০% মালিকানা পেট্রোবাংলার থাকায় “সামষ্টিক ভাবে বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে ৫০ শতাংশের বেশি”।

প্রথম কথা, কস্ট রিকভারির পর প্রফিট গ্যাসের ৫৫% থেকে ৮০% মালিকানা পেট্রোবাংলার হলেও সম্পূর্ণ গ্যাসের কত ভাগ মালিকানা পেট্রোবাংলা পেল তা হিসেব করতে গেলে কস্ট রিকভারি পর্যায়ে কত পরিমাণ গ্যাস পেট্রোবাংলা পেল সে হিসাবও করতে হবে। কস্ট রিকভারি পর্যায়ে ৫৫% গ্যাস কস্ট রিকভারি গ্যাস হিসেবে কোম্পানির ভাগে গেলে এবং বাকি ৪৫% গ্যাস সমান অনুপাতে ভাগাভাগি হলে কস্ট রিকভারি পর্যায়ে কোম্পানির ভাগে পড়বে ৫৫%+২২.৫%= ৭৭.৫% গ্যাস এবং পেট্রোবাংলার ভাগে পড়বে ২২.৫% গ্যাস। এই কস্টরিকভারি পর্যায়ের গ্যাস এবং কস্ট রিকভারি পর্যায়ের পর প্রফিট গ্যাস পর্যায়ের প্রাপ্য গ্যস এই দুয়ের যোগ ফলের মাধমে নির্ধারিত হবে পেট্রোবাংলা মোট গ্যাসের কতটুকু পেল। কাজেই কস্ট রিকভারি পর্যায়ের পর প্রফিট গ্যাস পর্যায়ে ৮০% ভাগ গ্যাস পেট্রোবাংলা পাওয়ার মানে এই না যে পেট্রোবাংলা মোট গ্যাসের ৮০% পেল। জনাব তামিম উল্ল্যেখিত বিবিয়ানার কস্ট রিকভারি পর্যায় পার হওয়ার পর উত্তোলিত গ্যাসের ৫০% গ্যাস পেট্রোবাংলা পাওয়ার মানে তাই পুরো গ্যাসের ৫০% পাওয়া নয়।

দ্বিতীয় কথা হলো, বাস্তবে বিদেশী কোম্পানিগুলো নানান ভাবে বাড়তি খরচ দেখিয়ে কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করে ফলে হয় আদৌ প্রফিট পর্যায়ে পৌছানো যায় না বা পৌছালেও ততদিনে সিংহভাগ গ্যাস উত্তোলিত হওয়া শেষ ফলে বাংলাদেশের ভাগে কার্যত মোট উত্তোলিত গ্যাসের ২০-৩০ শতাংশের বেশী গ্যাস জুটে না। বাংলাদেশের স্থলভাগে এবং অগভীর সমুদ্রে এই ভাবে বাড়তি খরচ দেখিয়ে কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করার বিভিন্ন নজির আছে যেমন:

ক) মাগুরছড়ায় অক্সিডেন্টাল ১৯৯৫ সালে সিসমিক সার্ভে এবং তিনটি কুপ খননের জন্য প্রথমে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ ডলারের হিসেব দিলেও ১৯৯৭ সাল নাগাদ ৪ বার সংশোধনের মাধ্যমে তা ৪ কোটি ৯১ লক্ষ ৪০ হাজার ডলারে পরিণত হয়। এবং এই খরচের হিসাব কুপ খননের খরচের হিসাব ছাড়াই। কুপ খননের হিসাব সহ অংকটি কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছিলো সেটি অবশ্য আমাদের জানা নেই কারণ এই কস্ট রিকভারির হিসাবটি প্রকাশিত নয়।

খ) অগভীর সমুদ্রের সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্রে কেয়ার্নের কস্ট রিকভারির হিসাবটা দেখা যাক। বিডিং এর সময় কেয়ার্ন প্রকল্প ব্যায় দেখিয়েছিলো ১০.৮১ মিলিয়ন ডলার কিন্তু একের পর এক সংশোধনী বাজেট আসতে থাকে, তৃতীয় সংশোধনী বাজেটে ব্যায় ১৮ গুণ বেড়ে গিয়ে দাড়ায় ১৮৮ মিলিয়ন ডলার, চতুর্থ সংশোধনী বাজেটে ২৬৪ মিলিয়ন ডলার এবং সব শেষে ৬৬০ মিলিয়ন ডলার। ফলে এই গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত মাত্র ২০% গ্যাস পায়। পেটোবাংলার এপ্রিল মাসের এমআইএস রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, এ বছরের এপ্রিলে মোট ১৩.৮৩৪ এমএমসিএম গ্যাসের মধ্যে কেয়ার্নের ভাগে পড়ে ১১.০৭৫ এমএমসিএম গ্যাস অর্থাত বাংলাদেশের ভাগে মাত্র ২.৭৫৯ এমএমসিএম যা মোট গ্যাসের মাত্র ১৯.৯৪%।

একই রিপোর্ট অনুসারে টাল্লোর বাঙ্গুরা গ্যাস ক্ষেত্রটিতে এপ্রিল মাসে মোট উতপাদন হয় ৮৩.৪৮৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার যার মধ্যে টাল্লোর কষ্ট রিকভারি ও প্রফিট গ্যাসের ভাগ ছিলো ৫৫.৪৭৭ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। সুতরাং পেট্রোবাংলার প্রফিট গ্যাস হলো ২৮.০০৭ মিলিয়ন কিউবিক মিটার যা মোট গ্যাসের মাত্র ৩৩.৫৪% । ২০০৯ -২০১০ সালে ১০৮৬ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাসের মধ্যে পেট্রোবাংলার ভাগের গ্যাস ছিলো ৩৬৪.৬০৩ মিলিয়ন কিউবিক মিটার অর্থাত পুরো বছরের হিসেবেও পেট্রোবাংলার অংশ ৩৩.৫৪%।

গভীর সমুদ্রের বিশাল খরচের কথা বলে নানান ভাবে যে কেয়ার্নের সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্রের মতো কস্ট রিকভারি পর্যায় দীর্ঘায়িত করে বেশির ভাগ গ্যাসই কনোকোফিলিপস আত্মসাত করবে না তার নিশ্চয়তা কি?

তৃতীয়ত, যে মডেল পিএসসি ২০০৮ অনুসারে কনোকো ফিলিপস এর সাথে সাম্প্রতিক পিএসসি চুক্তি হয়েছে তার আর্টিক্যাল ১৫.৫.৪ এ বলা আছে, প্রথম ১০ বছর বাংলাদেশ কোন অবস্থাতেই সর্বমোট বাজারজাত যোগ্য গ্যাসের ২০% এর বেশি দাবী করতে পারবে না, ১১তম বছরের মাথায় কোম্পানি রাজী হলে পেট্রোবাংলা ৩০% দাবী করতে পারবে। প্রশ্ন হলো “বাজারজাতযোগ্য গ্যাস” কি? এটাকি রপ্তানির জন্য এলএনজি গ্যাস নাকি পুরো উত্তোলিত গ্যাস? চুক্তির আর্টিক্যাল ১৫.৫.২ অনুসারে গ্যাস কুপের দৈনন্দিন অপারেশানাল কাজে ব্যাবহারের গ্যাস বাদ দিয়ে সমস্ত গ্যাসই বাজারজাতযোগ্য গ্যাস। এখন চুক্তির আর্টিক্যাল ১৫.৪ অনুযায়ি কোম্পানি যদি বছরে মোট গ্যাসের ৭.৫% হারে(পেট্রোবাংলা অনুমতি দিলে এর চেয়েও বেশি পরিমাণে গ্যাস উত্তোলণের সুযোগ রাখা হয়েছে) গ্যাস উত্তোলণ করতে থাকে তাহলে ১৩.৩৩ বছরের মাথাতেই সব গ্যাস উত্তোলিত হয়ে যাবে। ফলে কস্ট রিকভারি আর প্রফিট গ্যাসের ভাগাভাগি অনুসারে পেট্রোবাংলার ভাগে যতটুকু গ্যাসই পড়ুক না কেন, কার্যত আর্টিক্যাল ১৫.৫.৪ অনুযায়ি পেট্রোবাংলা ২০% এর বেশি গ্যাস পাবে না।

রপ্তানির বিধান ও রপ্তানির সম্ভাবনা:
জনাব ম.তামিমকে ধন্যবাদ তিনি রপ্তানির প্রশ্নে বেশ খোলা খুলি ভাবেই স্বীকার করেছেন:”বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে যদি বিপুল গ্যাস পাওয়ার ১ শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে, সে ক্ষেত্রে কোম্পানি তার বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুততম সময়ে তুলে আনতে চাইবে। কোন ব্যাবসায়ীই বিপুল পরিমাণ টাকা লগ্নি করে বছরের পর বছর বসে থাকতে চাইবে না। রপ্তানির সুদুর প্রসারী একটি সুযোগ অথবা নিশ্চিত গ্যাস কেনার প্রতিশ্রুতি তাই যে কোন আন্তর্জাতিক গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির অংশ।” চুক্তি বিরোধীদের আপত্তিটা ঠিক এই খানেই, রপ্তানির এই “সুদুর প্রসারী” সুযোগ কাজে লাগিয়ে, কোম্পানি তার বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুততম সময়ে তুলে আনার জন্য, গ্যাস এমন বেশি পরিমাণে উত্তোলন করতে শুরু করবে যে পেট্রোবাংলা বাধ্য হবে তাকে “বাড়তি” গ্যাস রপ্তানির অনুমতি দিতে। বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। কনোকোফিলিপস কে দেয়া ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের নিকটে মায়ানমার ৭ টিসিএফ এবং ভারত ১৪ টিসিএফ গ্যাস আবিস্কার করেছে। এখন বাংলাদেশের অংশেও যদি একই ভাবে ৭ টিসিএফ এর মতো গ্যাস আবিস্কৃত হয় তাহলে তাহলে আর্টিক্যাল ১৫.৪ অনুযায়ি কোম্পানি ৭.৫% হারে (যদিও পিএসসিতে গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি হারে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ রাখা হয়েছে) গ্যাস তুলতে পারবে বছরে ০.৫২৫ টিসিএফ বা ৫২৫ বিসিএফ । তাহলে দৈনিক উত্তোলন করতে পারবে ৫২৫/৩৬৫ = ১.৪৩৮ বিসিএফ।

আবার বাংলাদেশে বর্তমানে গ্যাসের ঘাটতি ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট। বছরে ৭% চাহিদা বৃদ্ধি ধরলে ৫ বছর পর যদি গ্যাস আবিস্কৃত ও উত্তোলিত হয়, তখন গ্যাসের ঘাটতি হবে দৈনিক ৭৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট বা ০.৭৫ বিলিয়ন কিউবিক ফুট।

এখন কনোকোফিলিপস যদি ৭ টিসিএফ এর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১.৪৩৮ বিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস তুলতে শুরু করে তখন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ব্যাবহার করতে পারবে ০.৭৫ বিলিয়ন কিউবিক ফুট যার পরও দৈনিক অতিরিক্ত থাকবে ১.৪৩৮-০.৭৫= ০.৬৮৮ বিসিএফ বা ৬৮৮ মিলিয়ন কিউিবক ফুট গ্যাস যা ব্যাবহার করে এলএনজি প্ল্যান্ট বসিয়ে বার্ষিক ৫.৩৭৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন(এমটিপিএ) এলএনজি উতপাদন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ খাতে যখন এই ‘বাড়তি’ গ্যাস ব্যাবহার করতে পারবে না তখন কি হবে? চুক্তি অনুসারে পেট্রোবাংলা তখন এই গ্যাস এলএনজি আকারে রপ্তানির অনুমতি দিতে বাধ্য হবে। এভাবে কোম্পানি দ্রুততম সময়ে মাত্র ১৩ বছরের মধ্যেই তার মুনাফা তুলে নিয়ে গেলেও বাংলাদেশের জন্য পড়ে রইবে গ্যাস বিহীন অন্ধকার ভবিষ্যত।

জাতীয় সক্ষমতা ও উড়োজাহাজ তৈরীর তুলনা:
জনাব ম.তামিম তেল-গ্যাস উত্তোলণে জাতীয় সক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে উড়োজাহাজ তৈরীর প্রচেষ্টার সাথে তুলনা করে বলেছেন: “সমুদ্রে অনুসন্ধানের টাকা, প্রযুক্তি, লোকবল কোনটাই তাদের নেই এবং সেটা করতে যাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে উড়োজাহাজ তৈরির চেষ্টা করার মতো হঠকারিতা হবে; যাতে বিনা কারণে অজস্র টাকা ও সময় ব্যায় হবে।“ এখানে খেয়াল দরকার, আমরা যারা তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলণে জাতীয় সক্ষমতা অর্জনের কথা বলছি, তারা কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় সেমিসাবমারজিবল রিগ, সাপোর্ট ভ্যাসেল ইত্যাদি বাংলাদেশে তৈরির কথা বলছি না, বলছি এগুলো ভাড়া করে/কিনে তেল-গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনে ব্যাবহারের কথা। তাহলে উড়োজাহাজ তৈরীর উদাহরণটা আসছে কেন? তুলনা করতে গেলে তো উড়োজাহাজ চালনা করার উদাহরণটা দেয়া দরকার। উড়োজাহাজ চালানার মতো জটিল কাজও তো বাংলাদেশের পাইলটদের শিখতে হয়েছে তাহলে সেমিসাবমারজিবল রিগ কিংবা সাপোর্ট ভ্যাসেল ভাড়া করে এনে সেগুলো কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে পরিচালনা করাটা অসম্ভব কিংবা হঠকারিতা হতে যাবে কেন? বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কি তেল-গ্যাস উত্তোলণে ব্যাবহ্রত সেমিসাবমারজিবল রিগ, সাপোর্ট ভ্যাসেল ইত্যাদি নিজেরা বানায় বা নিজেরা চালায়?

ম.তামিমের তো অজানা থাকার কথা নয়, আশির দশকের সময় থেকেই কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের অনেক কাজ আউটসোর্সিং করতে শুরু করেছে। টেকনোলজি ডেভেলাপ করার বদলে টেকনোলজি বিভিন্ন সার্ভিস কোম্পানি যেমন Schlumberger, Halliburton, Baker Hughes, Oceaneering, Transocean ইত্যাদির কাছ থেকে সুবিধা মতো ভাড়া করে তেল-গ্যাস উত্তোলণের কাজটি চালাচ্ছে। উদাহরণস্বরুপ বিপি’র কথা বলা যায়। বিপি মেক্সিকো উপসাগরের যে মাকান্দো কুপে দুর্ঘটনায় ঘটিয়েছে, সে কুপে কাজ করছিলো মূলত ট্রান্সওশান, হেলিবার্টন, স্লামবার্গার ইত্যাদি কোম্পানির যন্ত্রপাতি ও সার্ভিস ভাড়া নিয়ে। ডিপ ওয়াটার হরাইজন নামের সেমিসাবমারজিবল রিগটি বিপি ভাড়া নিয়েছে ট্রান্সওশানের কাছ থেকে, এই রিগটি থেকে ড্রিলিং এর কাজটি ট্রান্সওশানের কর্মীরাই করছিলো, কুপ সিমেন্টিং এর কাজটি করছিলো হেলিবার্টন এবং সিমেন্টিং এর পর তার কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ভাড়া করা হয়েছিলো স্লামবার্গার কোম্পানিটিকে; বিপির কাজ ছিলো কেবল এদের কাজ ঠিক ঠাক মতো হচ্ছে কিনা সেটা তদারকি করা। কাজেই স্থলভাগে গ্যাস উত্তোলণের দক্ষতাকে ব্যাবহার করে গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলণ বিষয়ে যথাযথ ট্রেনিং এর মাধ্যমে বাপেক্সের পক্ষে এই ধরণের তদারকির কাজ করাটা অসম্ভব কোন বিষয় নয়।

'অজস্র টাকা'র ঝুকি প্রসঙ্গে:
ম.তামিম উতপাদন অংশীদারি চুক্তির পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে লিখেছেন: “.. বেশির ভাগ দরিদ্র দেশে অংশীদারি চুক্তি জনপ্রিয়। কারণ, এটি সম্পূর্ণভাবে অর্থায়নের ঝুকিমুক্ত এবং সম্পদের মালিকান শতভাগ রাষ্ট্রের অধীনে থাকে।” প্রশ্ন তোলা দরকার, যে উতপাদন অংশীদারি চুক্তিতে কস্টরিকভারি এবং প্রফিট গ্যাসের মাধ্যমে প্রায় আশিভাগ গ্যাসই বিদেশী কোম্পানির দখলে যায়, সে চুক্তির ফলে কেমন করে সম্পদের শতভাগ মালিকানা রাষ্ট্রের থাকে আর কেমন করেই বা তা জনপ্রিয় হয়। তার বদলে এই ধরণের উতপাদন অংশীদারি চুক্তিকে কনসালটেন্ট বা বিশেষজ্ঞপ্রিয় বলাটাই যুক্তিযুক্ত।

ম.তামিমের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের পক্ষে সাগরের গ্যাস উত্তোলণ করাটা বিরাট ঝুকিপূর্ণ কাজ এবং এর জন্য অযথাই “অজস্র টাকা” নষ্ট হবে। “অজস্র টাকা” আসলে কত টাকা সে দিকে যাওয়ার আগে ম.তামিম কে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, আচ্ছা ভাই, বুঝলাম সাগরের গ্যাস উত্তোলণ আর্থিক ভাবে ভীষণ ঝুকিপূর্ণ একটা কাজ কিন্তু তাহলে কনোকোফিলিপস কেন “অজস্র টাকা” ব্যায় করে এই বিশাল ঝুকিপূর্ণ কাজে আগ্রহী হলো? কন্যা দায়গ্রস্থ পিতাকে উদ্ধার করার অনুরুপ গ্যাস দায়গ্রস্থ(!) বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে নাকি নিশ্চিত মুনাফার গন্ধ পেয়েই? তাহলে বাপেক্স বা পেট্রোবাংলা কেন সেই লাভজনক কাজটি করবে না? প্রযুক্তির কথা আমরা আগেই বলেছি। এবার আসা যাক “অজস্র টাকা” প্রসঙ্গে।

কনোকোফিলিপস সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক থেকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলণের জন্য সর্বমোট ১১০.৬৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে যার ২.৪৯৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে প্রথম ৫ বছরে ১২০০ লাইন কি.মি দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করতে, এরপর দুই বছর ধরে ৫০০ বর্গ কিমি এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করতে এবং একটি অনুসন্ধান কুপ খনন করতে খরচ করবে ৫৮.১৬৬৫ মিলিয়ন ডলার এবং এরপর আরো দুই বছর ধরে বিনিয়োগ করবে মোট ৫০ মিলিয়ন ডলার।(সূত্র: দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ১ জানুয়ারি,২০১১) তাহলে মোট ৯ বছরে ১১০.৬৬ মিলিয়ন বা ১১ কোটি ডলার বা ৭৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ কি বাংলাদেশের জন্য কোন অসম্ভব কোন ব্যাপার? আর এই টাকা তো আর একবারে বিনিয়োগ করতে হবে না, কাজেই বছরে গড়ে ৮৫.৫৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ তো বাংলাদেশের জন্য কোন ব্যাপারই না!

সর্বজনাব বিশেষজ্ঞপ্রবর ম.তামিমের তো এইসব তথ্য অজনা থাকার কথা নয়। আসলে তিনি জেনে শুনেই উতপাদন অংশীদারি চুক্তির সহজ পাঠের নামে আসলে সমুদ্রে অনুসন্ধানের টাকা, প্রযুক্তি, লোকবল ইত্যাদি সম্পর্কে জনগণের মাঝে ভীতি তৈরী করে বহুজাতিক কনোকোফিলিপস কর্তৃক সাগরের গ্যাস লুন্ঠনের যৌক্তিতা তৈরী চেষ্টা করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৫:৪৩
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×