somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাঁর নাম পল রোবসন—পিট সীগার

১৫ ই জুন, ২০১১ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূল লেখাটি

তাঁর নাম পল রোবসন—পিট সীগার

সেটা ১৯৩০ সালের কথা : বিশ্বব্যাপী ফ্যাসিবাদী উত্থানের প্রতিবাদে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ২০,০০০ লোক জমায়েত হয়েছে। উপরের সারিতে সমবেত তরুণদের মধ্যে আমিও ছিলাম। সেই বিকালে অনেক বক্তৃতা হলো, প্রধানত শ্বেতাঙ্গরাই বক্তৃতা করলেন। অনেকে কালো মানুষ মাইক্রোফোনের সামনে এসে দাঁড়ালেন। ‘শুভ সন্ধ্যা, বন্ধুগণ’ সেই কণ্ঠ এত নীচু, গম্ভীর এবং অনুনাদী ছিল যে মনে হচ্ছিল তা যেন সমগ্র বিশ্বের মানবতাকে প্রতিনিধিত্ব করছে। পুরো সমাবেশ একসাথে ফেটে পড়ল উষ্ণতা ও ভালবাসা নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে। সেই মানুষটি আমাদেরকে- আমাদের সকলকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন র‌্যালি ও কনসার্টে রোবসন-কে কথা বলতে ও গাইতে শুনে, একই ব্যক্তির মধ্যে অসাধারণ শক্তি, গভীর মমতা ও অতুলনীয় পাণ্ডিত্যের সংমিশ্রণ দেখে আমি বার বার মুগ্ধ না হয়ে পারিনি। একজন মানুষের মধ্যে এসব গুণের একসাথে বিরাজ করতে চমৎকারভাবে। আমার যৌবনের নায়ক ছিলেন রোবসন। আরো লক্ষ লক্ষ তরুণ শ্বেতাঙ্গও নিশ্চয় আমার মতই ভাবত। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় আমি যখন সেনাবাহিনীতে ছিলাম তখন আমার স্ত্রী নিউইয়র্ক-এ রোবসন- এর জন্মদিনের বিশাল পার্টির বর্ণনা লিখে পাঠিয়েছিল আমাকে। স্তুতি ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার পরে তিনি গান গেয়েছিলেন এবং অনেকেই চাইছিল যে তিনি যেন সারা রাত গান করেন। অনেকেই তার ব্যস্ততার কথা এবং সপ্তাহে ছ’বার ওথেলো-তে অভিনয়ের কথা জানত। তাঁদের ভৎসর্নার সাথে গলা মিলিয়ে হাজার হাজার লোক বলে উঠল, ‘গলার যতœ নাও, পল।’ যুদ্ধ শেষে তাঁর সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে আলাপ হয়। কনসার্ট শেষে আমি লাইনে অপেক্ষা করে তাঁর ড্রেসিং রুমের দরজায় টোকা দিলাম তাঁর সাথে আলাপের মধ্যে জানতে চাইলাম যে, তিনি আমাদের নতুন সংগঠন পিপলস সংস-এর পৃষ্ঠপোষক হবেন কিনা। ‘কেন না, অবশ্যই হব, বলে বিরাট হাসি দিলেন। তাঁর অন্যান্য ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সময় করে আমাদেরকে সহায়তা ও পরামর্শ দিতেন। ১৯৪৮ সালে হেনরি ওয়ালেস-এর নির্বাচনী প্রচারণার সময় বহুবার তাঁর বক্তৃতা শুনেছি। সে সময় লক্ষ্য করেছি তাঁর মধ্যে শারীরিক শক্তি ও গভীর মমতাবোধের মিশ্রণ কিভাবে অসাধারণ সাহসিকতা ও সততা দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে কট্টর ডানপন্থীরা তাঁকে পীকস্কীলে হত্যা করতে চেয়েছিল। শিল্পী হিসাবে সে সময় আমি তুলনামূলকভাবে স্বল্প পরিচিতি হলেও অনুষ্ঠানেও প্রথমার্ধে কয়েকটি গান গাইতে আমন্ত্রিত হয়ে সম্মানিত বোধ করেছিলাম। কনসার্ট শেষে হাজার হাজার শ্রোতা তাদের গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল। প্রবেশ পথে দাঁড়ান পুলিশ (গোপন কে.কে.কে.-র সাথে যোগসাজশকারী) সমস্ত গাড়িকে ডান দিকে মোড় নিতে বলেল। ডান দিকের সেই রাস্তায় কোমন সমান উঁচু পাথরের টিবি নিয়ে অপেক্ষারত গুণ্ডারা প্রত্যেকটা গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া শুরু করল। সেদিন না হলেও দশ হাজার গাড়ির কাঁচ ভেঙেছিল। বাড়ি ফিরে আমি ও আমার স্ত্রী বাচ্চাদের মাথা থেকে ভাঙা কাঁচের টুকরো পরিষ্কার করেছিলাম। কাঁচ ভেঙে আসা দুটো পাথর পরে আমরা গাড়ির মধ্যে পেয়েছিলাম। সেই পাথর দুটো আমার বাড়ির ফায়ার প্লেসে সিমেন্ট দিয়ে আটকে থুয়েছি। আমি নিশ্চিত যে, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে আমেরিকার শাসকরা রোবসন-কে জেলে পাঠাবার দুঃসাহন দেখায়নি। কিন্তু পঞ্চাশ দশকের গোড়ার দিকেই সব কনসার্ট হলেও দরজা তাঁর জন্য বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি ‘মানী-গুণী’ ব্যক্তি ও সংগঠন নিজেদেরকে লুকাতে ব্যস্ত ছিল সে-সময়। সে অবস্থাকে মার্টিন লুথার কিং পরে খুব চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন : ‘মন্দ লোকদের বর্বরতা নয় বরং ভাল মানুষদের চুপ করে থাকাটাই হচ্ছে চরম দুঃখের ‘গত বছর আমরা গান গাইতে রোবসন-কে এখানে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কেন্দ্রীয় অফিস আমাদেরকে বলেছে যে তা করলে তারা আমাদের চ্যাপ্টারকে বাতিল করে দেবে’ যদি, যদি, যদি। আমরা যদি তাঁর জন্য আরো দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতাম, আমেরিকানরা যদি ঠাণ্ডাযুদ্ধের মিথ্যাগুলোকে আরো দ্রুত বুঝতে পারত, তাঁর স্বাস্থ্য যদি আরো কুড়ি বছর টিকে থাকত। সবই নিরর্থক এখন। আমরা শুধু জানি যে, ঠাণ্ডা যুদ্ধে আমেরিকার অপরাধগুলোর অন্যতম হচ্ছে তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ করা, যাতে লক্ষ লক্ষ শ্রোতা তার গান ও রাজনৈতিক বিশ্বাস শুনতে না পায়। তবে, আমার কাছে পল রোবসন চিরদিন বেঁচে থাকবেন। তাঁর শক্তি আমাদেরকে আরো দৃঢ় করেছে, তাঁর শৈল্পিকসত্তা আমাদেরকে উৎসাহিত করেছে আরো ভাল শিল্পী হতে। অবসান ঘটাবেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এই বইটি আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে, জেকব- এর সিঁড়ির আরো একটি ধাপ উত্তরণে বিংশ শতাব্দীর এক সংবেধনশীল মহামানব আমাদেরকে সাহায্য করেছিলেন- তাঁর নাম পল রোবসন। [বিশ্ব বিখ্যাত আমেরিকান গণ ও লোকসঙ্গীত শিল্পী পিট সীগার-এর এই ভাষণটি পল রোবসন : দি গ্রেট ফোররানার বই থেকে অনুবাদ করেছেন ওমর তারেক চৌধুরী।] পল রোবসন- এর গাওয়া এবং নতুন তাৎপর্য দানের জন্য পরিবর্তনকৃত বিখ্যাত নিগ্রো স্পিরিচুয়্যাল ‘উই আর ক্লাইমিং জেকবস ল্যাডার’ গানের কথা বলেছেন পিট সীগার।- অনুবাদক


[সংস্কৃতি থেকে দ্রোহ ছোট কাগজে প্রকাশিত ]
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×