somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাপক-বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

১৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা,

কেমন আছো তোমরা? এখন রাত চারটা বাজে। এই সময় গভীর ঘুমে নিমগ্ন থাকার কথা সবার। ভালো ঘুম হচ্ছে তো তোমাদের? ঘুম না পেলে কোরিয়া-রাশিয়া ম্যাচটা দেখতে পারো। বাংলাদেশের অধিকাংশ না ঘুমো মানুষই আজকে যা করছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের এই দামামার ভেতর চাইলে খুব সহজেই ব্যক্তিগত দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকা যায় বর্গাকার মাঠের সবুজ ঘাসের ভেতর। আমার ঘুম আসছে না। কেন আন্দাজ করতে পারো কী? ভারতের সাথে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটায় বড় আশা করেছিলাম বিশাল ব্যবধানে জিতে বিশ্বক্রিকেটের মোড়ল নাকউঁচু ধনী প্রতিবেশীকে একটা শিক্ষা দিতে। তোমরা পারো নি। হেরে গেছো। এই বিশ্বকাপের ভরা মৌসুমে একটা তিন ম্যাচের ক্রিকেট সিরিজের প্রতি কজনেরই বা আগ্রহ থাকে? ভুলে যাবে সবাই। ভুলে যাবে তোমরাও। কিন্তু আমরা যে ভুলতে পারি না! প্রফেশনালিজমের এই যুগে একটা ম্যাচই তো হারলে, এ আর এমন কী, প্রাইজমানি তো বেশি পেতে না এই ম্যাচ জিতলে তাই না? না, তোমাদের আমি ভুলতে দিবো না। যথেষ্ট হয়েছে, আর না।

এই বছরটাই কেমন যাচ্ছেতাই রকম বিচ্ছিরি যাচ্ছে আমাদের। প্রতিটা পরাজয় এমনই ভিন্ন ভিন্ন রূপে আসছে যে আলাদা করে প্রতিটা চেহারা জমা থাকে আমাদের বেদনার কারাগারে। প্রথমে শ্রীলঙ্কার সাথে ঐ টি টুয়েন্টি ম্যাচটার কথা ভাবো, শেষ বলে এনামুল ক্যাচ তুলে আউট হয়ে গেলো। অথচ ওটা হতে পারতো নো বল। আমরা কষ্ট পেয়েছিলাম, তবে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে ভেবেছিলাম, ঘুরে দাঁড়াবোই। পরের ম্যাচে একশ উনিশ বা বিশ এর মতো করে আমাদের আশার সলতেটা নিভু নিভু করে দিলে আবার। কিন্তু দশ ওভারের মধ্যে পাঁচ উইকেট ফেলে দিয়ে আবারও আনন্দে উদ্বেলিত করলে আমাদের। শেষ পর্যন্ত সেই শেষ ওভারেই হারা। এরপর সেই অভাবনীয় ম্যাচ! ওয়ানডের প্রথম ম্যাচে ৬৭ রানে ৮ উইকেট ফেলে দিলে লঙ্কানদের। তখন দেশজুড়ে কী অবস্থা চলছিলো ভাবতে পারো? আনন্দে সবাই প্রায় পাগলপারা হয়ে গিয়েছিলো। সম্মানজনক হারের নিরাপদ অবস্থান থেকে বের হয়ে কিছু সাহসী যোদ্ধা সমানে সমানে লড়াই করে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলো আসছে দিনে আমাদের অবদমিত সাফল্য উল্লাস ভীনদেশের জয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা মিনোজ নই, আমরাও বড় দল হবার পথে। আর তোমরা সেই সাহসের দীপ্ত মশালটাকে আরো উঁচুতে তুলে ধরেছিলে শ্রীলঙ্কার সাথে অমন পারফরম্যান্সে। শ্রীলঙ্কা- ক্রিকেটের নিষ্ঠুরতম দল। যারা একটু দুর্বল প্রতিপক্ষ পেলেই ভেঙে চুরমার করে দেয়, সেই রাবণের দেশের ক্রিকেটারেরা ৬৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে! তারপর থিসারা পেরেরার সেই ভয়াবহ ইনিংস, আর তোমাদের ক্যাচ ফেলার প্রতিযোগীতা। ব্যাটিংয়েও বিপর্যয়। ঐ অবস্থা থেকে তোমরা হেরে যাবে আমরা ভাবতেও পারি নি। তারপরেও আশা রেখেছিলাম, ঘুরে তোমরা দাঁড়াবেই। সেটা আর হলো না ঐ সিরিজে।

এশিয়া কাপ এলো। আরো একটি অবিশ্বাস্য পরাজয়। আবারও খুব কাছে গিয়ে হেরে যাওয়া। আফগানিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ। সবচেয়ে খারাপ লেগেছিলো পাকিস্তানের সাথে অবিশ্বাস্য পরাজয়টি। সাকিব, মুশফিক, এনামুলেরা ৩২০+ স্কোর তুলে দিলো বোর্ডে। পাকিস্তানের মত শক্তিশালী বোলিং দলের বিপক্ষে, চিন্তা করা যায়! শেষ বারো ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিলো ওভারপ্রতি দশ এর ওপর রান। সেদিন থিসারা পেরেরার ভূমিকায় আবির্ভূত হলো আফ্রিদী। বিশ্বাস করো, ঐ পরাজয়টা এখনও আমাকে পোড়ায়। এরপর টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপে হংকং লজ্জা। কোন কিছুই ঠিকভাবে হচ্ছিলো না এই বছরে।

আমরা ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। তবে জানতাম দিন একদিন ঠিকই আসবে। গতকাল এলো সে দিন। তাসকিন-মাশরাফি তোপে ইন্ডিয়া ১০৫ রানে অলআউট! আশঙ্কা ছিলো এবার কেউ থিসারা পেরেরা বা শহীদ আফ্রিদী হয় কী না। না হয় নি। সুতরাং জয় আমাদেরই হচ্ছে। অতি আকাঙ্খিত একটি জয়। বছরের সমস্ত বেদনা পরাভূত হবে এই অসাধারণ এবং প্রতাপী জয়ে। হতাশার দিন একদিন না একদিন তো শেষ হবেই। আজকেই সেই দিন ছিলো। কিন্তু, না আবারও! সম্ভাব্যতার গণিতে বলে দুটি দলের ক্ষমতা একই রকম হলে বারবার কাছাকাছি অবস্থান থেকে একই দলের হেরে যাওয়াটা অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু এই দুরুহ ব্যাপারটাই ঘটছে বারবার। কেন?

গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস সবকিছুই প্রতিকূলে যাচ্ছে-যাক। এই দুর্বহ বছরে আর কী কী অপেক্ষা করছে জানি না। এত কথা যে বললাম, এত যে দুঃস্মৃতি ঘাঁটলাম, সেটা শুধু মাত্র একটা কথা বলার জন্যে, ভুলিনি আমরা, তোমরাও ভুলতে পারবে না। তোমাদের প্রফেশনালিজম, বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের সাথে সৌহার্দ্য বিনিময়, এসবকিছুর মধ্যে হয়তো বা ভুলে যাওয়াই নিয়ম। আমরা ভুলবো কী করে? খেলাটা তো আমাদের কাছে স্রেফ খেলা না। এটা জীবনের অতি প্রয়োজনীয় এক অনুষঙ্গ। আজকে খেলা শেষে ভুলে থাকার জন্যে মা'র সাথে ক্যারামবোর্ড খেললাম অনেকক্ষণ। বাবা বারবার ম্যাচের হাইলাইটস দেখছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন দেখছো এসব? তিনি জবাবে জানালেন নিজের চোখের সন্দেহ রদ করার জন্যে। আমার দেড় বছরের ছোট্ট মেয়ে মিতিনকে বুকে করে হেঁটে এই ভয়াবহ শূন্যতা লাঘব করতে পেরেছিলাম কিছুটা। তারপর ফুটবল খেলা দেখলাম, বেলজিয়াম-আলজেরিয়া, ব্রাজিল-মেক্সিকো। কী যে দেখলাম! অর্থহীন সব। ঘুমুতে এসে ভীষণ একা আর লজ্জিত লাগছিলো নিজেকে। মনে হচ্ছিলো আমি একজন সম্মানিতা ভদ্রমহিলা যার পরনের কাপড় টুকরো টুকরো করে ছিড়ে মজা দেখছে সমবেত জনতা। বুক ফেটে কান্না আসছিলো। শব্দ করে কাঁদি নি কারণ আমার মেয়েটার শরীর ভালো নেই। শব্দে তার ঘুম ভেঙে যেতে পারে। শেষতক মনের ভার লাঘব করার জন্যে তোমাদের শরণাপন্ন হতে হলো।

এই পরাজয়গুলো, বিশেষ করে আজকের এই পরাজয়টা আমি ভুলবো না। তোমরাও ভুলো না। যে কষ্ট, অপমান, হতাশা গ্রাস করেছে ষোল কোটি জনতাকে তার ভাগ নিয়ে যাও, এসো! আমরা বলছি না যে তোমাদের কমিটমেন্ট নেই, তোমরা চেষ্টা করো না, কিন্তু বারবার কেন এমন হবে? তোমরা কি চাপের মুখে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ো? আমাদের প্রত্যাশা কি তোমাদের কাছে অনাকাঙ্খিত ভার মনে হচ্ছে? প্রত্যাশা তো তোমাদেরও আছে, নেই? খেলাটা তো শুধু জীবনে রোজগারের উপায় নয়। তাহলে আমাদের প্রত্যাশা আর তোমাদের প্রত্যাশা এসো এক করি। এই দুইয়ের সম্মিলনে অভাবনীয় কিছু ঘটবেই। তোমরা যেমন ষোল কোটি মানুষের বাইরে না, আমরাও তেমন জাতীয় দলের বাইরের কেউ না। সবে মিলে দ্বাদশ খেলোয়াড় হতে না পারি, ত্র‌য়োদশ তো হবই! যার কাজ স্বপ্নের হালটা ধরে রাখা। আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত, আমরা হাসতে পারছি না, ঘুমোতে পারছি না, ভুলতে পারছি না। তোমরাও ভুলবে না। পরাজয়ের বিষে নীল হয়েছো, এখন সেই নীলটাকে আকাশের নীলের সাথে জুড়ে দিয়ে স্বপ্নের ক্যানভাস তৈরি করো।

ঘুম কেড়ে নিয়েছো, স্বপ্ন কেড়ো না।
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×